তুমি কি আমার মনটা ভালো করে দেবে?
শাহরিয়া দিনা।। শরীরের ক্ষত দেখা যায়; মনের ক্ষত গভীর গোপন। কেউ জানেনা কার মন আজ কেমন আছে। কোন মনে কে বাস করে। শারীরিকভাবে পাশে থেকেও কেউ কেউ কাছের মানুষ হয়না, কেউ আবার দূরে থেকেও একান্ত আপন।
‘আমার মন খারাপ’ কাউকে বলার পর এ কথাটা খুব কম মানুষই গুরুত্ব দিয়ে শোনে। অহেতুক ইমোশনাল বলে অনেকে আবার বিরক্ত হয়। অন্যের শরীর খারাপে উদ্বিগ্ন হলেও মন খারাপ বরাবরই উপেক্ষিত বিষয়।
প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে ব্যাস্ততার রুটিনমাফিক জীবনে নিজের মনের জন্য আলাদা করে সময় মেলে না। অফিস,পরিবার, সামাজিকতা ইত্যাদি লৌকিকতা সারতে সারতেই আমরা টায়ার্ড! বছরে দুই/একবার ঘুরতে যাওয়া তা-ও যেন রুটিনেরই অংশ। আমরা প্রানখুলে হাসি না, মন ভরে কাঁদি না। বুকের জমানো কথাগুলো তুমুল আড্ডাতে উড়িয়ে দেইনা। এসবের জন্য আমাদের সময় কই?
শরীরের মতোই মনের যত্ন নেয়াটাও জরুরি। আমাদের যাবতীয় সুখ-দুঃখ, ভয়, রাগ সবকিছুর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে মন। পৃথিবীতে কিছুই মূল্যবান না, মনে যেটা আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন, মূল্যায়ন করছেন সেটাই মূল্যবান। ঝগড়াঝাটি, প্রেম-প্রীতি তথা মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের প্রতিটি বিষয়ের মূল নিয়ামক মন। দেখতে মানুষ আমরা সবাই প্রায় একরকম। দুই হাত, দুই চোখ, একটা মাথা…
যোজন যোজনে ভিন্নতা শুধু মানসিকভাবে।
শরীরকে আশ্রয় এবং নিরাপত্তা দিতে বাসস্থান জরুরি, তেমনি মনেরও একটা আশ্রয় থাকা চাই। যেখানে অকপটে বলা যায় নিজেকে উজার করে।
হুমায়ূন আহমেদ একবার শাওন’কে লিখেছিলেন, “শাওন! আমার খুব মন খারাপ। তুমি কি আমার মনটা ভালো করে দেবে?”
সবাই আমাদের মন ভালো করার ক্ষমতা রাখেনা। যে পারে সে-ও আবার কেন জানি আগ্রহী হয়না কিংবা পাত্তাই দেয়না। পাশের মানুষটাকে আগলে রাখুন, বুঝে নিন অথবা জিজ্ঞেস করুন কেমন আছে আজ তার মন?
ব্যস্ততা নিজেই একদিন আপনাকে অবসর দেবে শরীর নামের অজুহাতে। সেই নির্জনতার সঞ্চয় কিছু রাখা দরকার। শরীর বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেয়ারা থাকেনা চিরকাল, মন বাড়িয়ে ছু্ঁয়ে দিলে সেটা রয় জনমভর। যে ক’টা দিন আছি এই পৃথিবীতে ভালোবাসায় ভালো থাকার চেষ্টা করি। মনের চাওয়া কি শুনি কান পেতে। বাস্তবায়ন করতে চাই যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। জীবনের সময় বড় অল্প।
নিজেকে সময় দেয়া, নিজের মনের যত্ন নেয়ার বিকল্প নেই। মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত বিষয় নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]