শক্তিশালী নারী হতে চান? জেনে নিন ঠিক কেমন হন তারা
বিদেশি অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত আর্টিকেল অবলম্বনে লিখেছেন সাবরিনা শারমিন বাঁধন।।
একজন আত্মনির্ভরশীল শক্তিশালী স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নারী হয়ে ওঠা বেশ কঠিন কাজ। কিন্তু অসম্ভব নয়। সাম্য ও সমতার লড়াইয়ে একজন শক্তিমান মানুষ হয়ে ওঠাটা খুব জরুরি। শুধু উচ্চশিক্ষা কিংবা ভালো উপার্জনই শক্তিময়ী নারী তৈরি করতে পারে না। এর জন্য চাই একটি বোধ, উপলব্ধি, কৌশল, নিজেকে গড়ে তোলা এবং ধরে রাখার জিদ।
আসুন জেনে নিই, এই সময়ের একজন শক্তিশালী নারীর বৈশিষ্ঠ্যগুলো কী কী…
পেশাগত জীবনের প্রশ্নে আপোষ করেন না
প্রথমত, শক্তিশালী ব্যক্তিময় নারী পেশাগত জীবনকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেন। একটি ফাস্ট ফুড ডিনারের দোকানে রাতভর শিফট টানা কিংবা ফরচুন কোম্পানির সিইও হিসেবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করা, সে যাই হোক না কেন, নির্বিশেষে কঠোর পরিশ্রম করার মনোবৃত্তিই প্রাধান্য পায়। তারা কঠোর পরিশ্রম করেন, ভবিষ্যৎ জীবনের দিকে নজর রাখেন এবং পেশাগত উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করেন। কারু কথা, কারু আবদারে, কোনো অন্যায় ইচ্ছে, রীতি, প্রথার জন্য নিজের পেশাগত জীবনকে এই নারীরা বিসর্জন দেন না।
পরিস্থিতির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে
শক্তিময়ী মেয়েরা চারপাশের পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার বিদ্যা রপ্ত করেন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, খারাপ বা ভাল, সেইমত নিজেকে গুছিয়ে নেন দ্রুত। যেকোন অবস্থায় নিজেকে মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিতে পারেন তারা। তারা সুস্পষ্টভাবে তাদের বক্তব্য প্রকাশ করেন। দ্বিধা করেন না। যে কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারার জ্ঞান থাকাটা মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে।
অত্যধিক প্রতিক্রিয়া দেখান না
শক্তিশালী মেয়েরা কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে পড়লে বা কেউ ভুল কিছু করলে অত্যধিক প্রতিক্রিয়া দেখান না। তারা তাদের জীবনের ভুলগুলোকেও পেছনে ফলে এগিয়ে যান এবং তা থেকে শেখার চেষ্টা করেন। তারা তাদের পেছনে লেগে থাকা লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সমাবেশ করেন না। আপনি যদি শক্তিশালী নারী হন তাহলে নিজেকে ভুল করতে দিন এবং তা থেকে শিখুন। জীবনে খারাপ যা কিছু ঘটে তার প্রতি অত্যধিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবেন না। বরং এ ধরণের নেতিবাচক পরিস্থিতিকে শেখার একটি প্রক্রিয়া ও উপায় হিসেবে দেখুন যেন আপনি বড়, আরও ভালো এবং শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন। শক্তিশালী স্বতন্ত্র নারীরা কোনো ব্যাপারে ঘ্যানঘ্যান বা অভিযোগ করেন না বরং তারা কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চুপ থাকেন এবং আরও ভালো মানুষ হওয়ার পথে এগিয়ে যান।
শত্রুদের পাতা ফাঁদে পা দেন না
ইদানিং আমাদের চারপাশে বিদ্বেষীরা ঘুরঘুর করে। ফেইসবুক, টুইটার এবং ইন্সটাগ্রামের শুরু থেকেই বেনামী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা মেসেজ পাঠানোসহ নানা উপায়ে নারীদের অপদস্ত করার চেষ্টা করে। মানসিকভাবে শক্তিশালী নারীরাই মূলত তাদের মূলটার্গেট, তবে আশার কথা হল এই নারীরা কখনো তাদেরকে সুযোগ দেন না। নিঃসন্দেহে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে কোন শক্তিশালী নারী ট্রলের বিষয় হতে পারে না। কেননা ট্রোলিং ক্ষতিকর, আপত্তিকর এবং একেবারে অসম্মানজনক। ট্রোল আসলে ট্রোলকারিদের জীবনের শূন্যতাকে তুলে ধরে যা মূলত রাগ ও বিরক্তিতে পরিপূর্ণ। শক্তিশালী সাহসী নারীরা এই সব শত্রুদের ফাঁদে পা দেন না বরং তারা নিজেদের জীবনে যা কিছু অর্জন করতে চান তা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।
শেখার কোনো শেষ নেই
শক্তিশালী স্বতন্ত্র নারীরা যে কোন পরিস্থিতিতেই এই বিশ্ব বা কোন বিষয় সম্পর্কে তাদের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। চারপাশের বিশ্বে কি হচ্ছে তা জানা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা পরিবর্তিত পৃথিবীতে কি হচ্ছে তা না জেনে পুরানো ধ্যানধারণায় স্থির থাকা একটি দুঃখজনক ব্যাপার। একই রকমভাবে নতুন কোন বিষয়কে শিখতে না চাওয়া বা নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকাও ভীষণ দুঃখজনক। নারীর কাপড় বোনার অভ্যেস থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী কিংবা ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছেকে যখন কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করে তখন শক্তিশালী নারীরা বিচলিত হন না। যেসব মানুষ নারীদের মতামতকে শ্রদ্ধা করে, নারীর আবেগ ও শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, তাদের প্রতিই শক্তিশালী নারীরা আগ্রহী হন।
খেয়ালের বসে কোনো কাজ করেন না
বলা হয়ে থাকে ধৈর্যই পূণ্য। শক্তিময়ী নারীরা ধৈর্য ও সংযমের চর্চা করেন। তারা কখনোই হুট করে বসে কোন কাজ করে বসেন না। তারা বিপজ্জনক বা বোকার মত কাজও করেন না। শক্তিশালী মেয়েরা চিন্তাশীল হয় এবং সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন। তারা নিজেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং আনন্দদায়ক কাজগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে করে থাকেন। তারা জানেন হাতে পর্যাপ্ত অর্থ থাকালেই একদিনে সব খরচ করে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার মত বোকামী করা উচিত নয়।
আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে দেন না
একজন শক্তিশালী, স্বতন্ত্র নারীর জীবনে একটি মৌলিক কাজ হল তিনি অন্যদেরকে তার আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানকে দমন করার সুযোগ দেন না। আপনার শরীর প্রাকৃতিকভাবে যেমন সেটিই সবচেয়ে ভালো। মিডিয়া আমাদের পরিপূর্ণতা অর্জনের যে ধারণা শিখতে বলে তা বরং ক্ষতিকর। শক্তিশালী, স্বতন্ত্র মেয়েরা নিজেদেরকে এসবের দ্বারা আক্রান্ত হতে দেন না। তারা তাদের মাথা সবসময় উঁচু রাখেন। শারীরিক আকার, ত্বকের রঙ, লৈঙ্গিক পরিচয় কিংবা স্বপ্রকাশের ক্ষমতা নির্বিশেষে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্রকে ধারণ করেন। এই গুণই তাদের জীবনের সেরা সম্পদে পরিণত হয়। কোন শক্তিশালী নারী নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব ধারণ করার সুযোগ দেয় না।
শারীরিক চাহিদাকে অবহেলা করেন না
একজন শক্তির আধার নারী কখনোই তার শারীরিক চাহিদা ও স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করেন না। আসল ব্যাপার হল আমাদের শরীরের ঘুম, পানি ও খাদ্য প্রয়োজন। আমাদের বিনোদন নেওয়া এবং আরাম করাও দরকার। এগুলোকে অবহেলা করা কেবলমাত্র বোকামী নয় বরং বেপরোয়া ও নির্বোধের মত আচরণ। একজন শক্তিশালী নারী কখনোই এই ভুল কাজটি করেন না। তারা প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন। কেননা জৈবিক গুরুত্ব বাদ দিলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পান আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ, মনযোগ ধরে রাখা, রোগ নিরাময় এবং ত্বকের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নারীরা তাদের শরীরে পানির ভারসাম্য ধরে রাখতে এবং সুস্থ থাকতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করেন। তারা প্রচুর স্বাস্থ্যকর খাবার খান তবে তাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে দেন না। তারা আরাম করেন এবং বিনোদন গ্রহন করেন। তারা পরবর্তী দিনের কাজের জন্য মনকে প্রস্তুত করেন। এখন কাজটিকে খুব কঠিন মনে হচ্ছে না, তাই না ?
অবাস্তব প্রত্যাশা করেন না
অবাস্তব প্রত্যাশা কাউকে দ্রুতই অসুখী মানুষদের দলে নিয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে একজন শক্তিশালী নারীর ক্ষেত্রে এগুলো কোন সমস্যা নয়। কেননা তারা বাস্তবতা বুঝে প্রত্যাশা করেন। ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে তারা একটা ধারণা রাখেন। বাস্তবে কী ঘটতে পারে এবং তারা যা ভাবেন তার মাঝে একটা সূক্ষ্ম যোগসূত্র বিদ্যমান থাকে। আসুন আমরা বাস্তবতার মুখোমুখি হই। কেননা প্রায় সব মানুষই কল্পনায় লটারি জেতে কিংবা ফ্রান্সের দক্ষিণে একটি বিলাশবহুল বাড়িতে জেনিফার লরেঞ্জ এবং লুপিডা নিয়ংয়ের সাথে অবসর কাটানোর মত অবাস্তব কল্পনা করেন। শক্তিশালী নারীরা কখনোই নিজেদেরকে এ ধরণের কিছু দ্বারা আক্রান্ত হতে দেন না। তারা বাস্তববাদী থাকেন এবং জীবনের বাস্তবসম্মত স্বপ্ন ও লক্ষ্যগুলোকে হারিয়ে যেতে দেন না।
বিষাক্ত সম্পর্কের মাঝে থাকেন না
একজন শক্তিশালী, স্বতন্ত্র নারী তার মত অপর শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র নারী-পুরুষের সাথে মেলামেশা করতে আকর্ষণবোধ করেন। তবে কখনো কখনো চারপাশে অসন্তুষ্ট, ক্ষুদ্র, ক্ষুব্ধ কিংবা বিষাক্ত মানুষের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। আমাদের বন্ধুরা যদি আমাদের সাথে সুস্থ সম্পর্ক বজায়ে রাখতে না পারে তাহলে তাদেরকে জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ভালো। শক্তিশালী, স্বতন্ত্র নারীরা তাদের জীবনকে অন্য ব্যক্তির বিষাক্ত কার্যক্রমের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেন না। তাদের খুব কাছের বন্ধু কিংবা সহকর্মীদের ব্যাপারেও তারা একইরকমভাবে সতর্ক থাকেন। কোন বিষাক্ত সম্পর্ক বয়ে নিয়ে বেড়ানো কখনও ভালো কাজ নয়। একজন শক্তিশালী নারী তাই কখনও এই কাজটি করেন না।
কাউকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে দেন না
বেশিরভাগ মানুষই একটি প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকেন বা এই সম্পর্ক স্থাপন ও বজায়ে রাখার ব্যাপারে আগ্রহী থাকেন। শক্তিশালী, স্বতন্ত্র নারীরা কখনোই তাদের প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য কাউকে নাক গলাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে সুযোগ দেন না। তারা তাদের মূল্যবান সময়, শক্তি ও প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করে উপযুক্ত মানুষ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। যারা মেয়েদের ক্ষুদ্র জ্ঞান করে, অসম্মান করে এবং জীবনের প্রতি পদে নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চেষ্টা করে তাদেরকে শক্তিশালী, স্বতন্ত্র নারীরা পাত্তা দেন না। যারা তাদের জীবনধারাকে কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তাদের পেছনে এই নারীরা সময় ব্যয় করেন না।
জীবনের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারান না
শেষতক, শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র নারীরা কখনোই তাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ হারান না। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা মানুষের একটি মহৎ গুণ এবং মূল্যবান সম্পদ। একজন শক্তিশালী মানুষ পরের দিনের কাজে যেন দেরি না হয় তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ঘুমানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকেন। ফেইসবুকে সম্ভাব্য চাকরিদাতা কর্তৃক ছবি দেখে অভিযুক্ত হওয়ার মত বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলার নামই শক্তিশালী হয়ে ওঠা। কঠোর পরিশ্রমের পর একটা সিনেমা দেখা, কিছু পান করা অথবা ভালো কিছু খাওয়ার নামই স্বাধীনতা। শক্তিশালী ও স্বতন্ত্র নারীরা তাদের জীবনে ঠিক সেভাবেই গড়ে তোলেন যেভাবে এটা গড়ে তোলা উচিত।