যোনি ও যোনিদ্বার সম্পর্কে জরুরি ৫টি তথ্য জানুন
বিদেশি প্রবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন সাদিয়া মেহজাবিন।।
আমাদের যোনি এবং যোনিদ্বার সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানা- আসলে বেশিরভাগ নারী এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্যই জানে না। কিন্তু শরীরের এ অংশটি যৌনস্বাস্থ্যে যেমন বহুমাত্রিক ভূমিকা রাখে তেমন দৈনন্দিন স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে চলুন জেনে নিই আমাদের না জানা তথ্যগুলো এবং পূরণ করে নিই জ্ঞানের ফাঁকগুলো।
১. আপনার যোনি শরীরের বাকি অংশের চেয়ে বেশি অম্লীয়
যদিও এটি আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্যকর মনে হয় না তবুও শরীরের এই অংশের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে অম্লীয় যোনি পরিবেশ খুব বেশি দরকার। অম্লীয় পরিবেশ যোনিকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া ও ইষ্ট বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
যদি যোনি খুব বেশি ক্ষারীয় (অম্লের বিপরীত) হয়ে যায় তাহলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যেমন ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (বিভি) হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। মেনোপজের পরে যোনি প্রাকৃতিকভাবে আরো ক্ষারীয় হয়, ফলে এটি আরো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণপ্রবণ হয়ে যায়।
নির্দেশনা
ডু্শ দেওয়া বা ক্ষারীয় সাবান অথবা সুগন্ধি জাতীয় সামগ্রির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। যোনিদ্বার (বহিঃঅংশ) কেবল প্রত্যেকদিন মৃদু উষ্ণ গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা প্রয়োজন, যদিও যোনি একটি স্ব-পরিষ্কারকারক অঙ্গ। তাই পরিষ্কার করা এবং “রক্ষণাবেক্ষণের” ক্ষেত্রে যোনিকে তার নিজের মত করে কাজ করতে দিন।
২. চোখে দেখার চেয়ে ক্লিটোরিসের ব্যাপকতা অনেক বেশি
ক্লিটোরিসকে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে আলাদা মনে করা হয়, মনে হয় এটি কেবল যৌন সুখের জন্যে। কিন্তু স্নায়ুর কাজ নির্বাহ এবং রক্তনালীর কাজ সম্পাদনে এটির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে একটি শিশ্ন থেকেও এটি দ্বিগুন স্নায়ু সমাপ্তিতে সাহায্য করে।
যদিও আমরা ক্লিটোরিসকে অনেক ছোট মনে করি, কিন্তু আমাদের জানা এবং দেখার বাইরেও এটির অনেক কাজ রয়েছে।
ক্লিটোরিসের শরীরবিদ্যা অনেকটা হিমশৈলির মত। আমরা কেবল বাইরের ক্ষুদ্র অংশই দেখতে পারি কিন্তু এতে পৃষ্ঠের নিচে লুকিয়ে থাকা আরো অংশ রয়েছে। যদিও দৃশ্যমান সেই অংশ সাধারণত খুব ছোট, ক্লিটোরিস ত্বকের নীচে দুই বাহু প্রসারিত করে। এই বাহুগুলো (পরিচিত ক্ররা নামে) আশ্চর্যজনকভাবে দীর্ঘ, পরিমাপ করা হয় দৈর্ঘ্যে ৫-৯ সেন্টিমিটার।
এখানে লুকায়িত ত্বকের নীচে আরো দুটি অভ্যন্তরীণ বাল্ব আছে যারা ক্লিটোরিসের বাকি অংশের পূর্ণ্যতা দেয়। এই বাল্বগুলো উপর থেকে নীচের দিকে প্রসারিত হয় এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩-৭ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।
নির্দেশনা
ক্লিটোরিসকে অবহেলা করলে চলবে না। আমাদের জানার বাইরেও নারীর শরীরবিদ্যাতে এ নিয়ে আরো বিস্তারিত রয়েছে। নিজেই নিজেকে জানতে একটি আয়না ব্যবহার করা উচিত যেন নিজের যোনিদ্বার সম্পর্কে নিজে পরিচিত হতে পারি এবং তা আমাদের কাছে স্বাভাবিক হয়। এই কাজ আমাদেরকে সাহায্য করবে যেকোনো অস্বাভাবিকতা যেমন রঙ বা গঠনবিন্যাস নির্ণয় করতে।
মনে রাখবেন প্রতিটি যোনিদ্বার অনন্য, আলাদা এবং প্রতিসম নয়।
৩. যোনির রয়েছে নিজস্ব আকার এবং আকৃতি
প্রতিটি যোনিদ্বার যেমন অনন্য তেমন যোনিও। মূলত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় যোনিসমূহ তাদের নিজস্ব আকার ও আকৃতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন আনতে পারে। (মনে রাখবেন যোনি অভ্যন্তরীণ পেশীবহুল নল যা যোনিদ্বারে শুরু হয়- বাহ্যিক অংশ; উপর থেকে জরায়ুতে যায় যেখানে জরায়ু বা গর্ভ শুরু হয়)
২০০৬ তে হওয়া একটি নিরীক্ষাতে প্রকাশিত হয়েছে যোনির দৈর্ঘ্য ৪-৯.৫ সেন্টিমিটার হতে পারে। যদিও আগের এক গবেষণায় এই পরিমাপ বলা হয়েছি ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত।
যোনির আকার অন্যতম দুর্দান্ত ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। নারীর যোনিতে অভ্যন্তরীণ কাস্ট ব্যবহার করে গবেষকেরা ৫টি ভিন্ন আকারে শ্রেণিবিন্যাস করেন। বিভিন্ন বিভাগ ছিল শঙ্কু-আকারের, সমান্তরাল পক্ষ, হৃদয়ের আকারের, স্লাগ-আকারের এবং কুমড়োর বীজের আকারের মত।
যাই হোক সমসাময়িক দীর্ঘ গবেষণার পরে জানা যায়, যোনি “নলের আকৃতি প্রতিসম বা কোনও পরিচিত জ্যামিতিক আকারের মতো নয়”।
নির্দেশনা-
আপনার যোনি দেখতে কেমন তা নিয়ে কখনই দুশ্চিন্তা করবেন না। কেবল আপনি কেমন অনুভব করছেন তা নিয়ে ভাবুন।
সহবাসের সময় বেশিরভাগ নারীই দুশ্চিন্তা করে তাদের যোনি দেখতে অস্বাভাবিক বোধ হয়। মূলত গবেষণা দেখায়, সাধারণ অথবা স্বাভাবিক চেহারার যোনি বলতে কিছুই নেই। প্রতিটি নারীর মতো প্রত্যেক যোনিও স্বাধীন এবং ভিন্ন।
নজর দেওয়ার মত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তখনি যখন সহবাস ও যোনিতে ব্যাথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়। বেদনাদায়ক সহবাস বিভিন্ন কারণ এবং পরিচালনার বিকল্পগুলির সাথে একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। আপনি যেন এসব বিষয় প্রতিকার করতে পারেন তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরো পড়ুন, আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৪. পেলভিক পেশী আপনার যৌন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে
নিচের যোনি পেলভিক পেশী দ্বারা রক্ষা করা হয়। তাই পেলভিক পেশী সংক্রান্ত সকল স্বাস্থ্য এবং শক্তি আপনার যৌন জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু নিরীক্ষা বলে, দৈনিক পেল্ভিক পেশী সংক্রান্ত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা আপনার রক্তের গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং যৌনতায় আরো তীব্র উত্তেজনা পেতে সাহায্য করে।
প্রত্যেকদিন পেশীর ব্যায়াম অনুশীলন রক্তের সরবরাহ বৃদ্ধি করে, যোনি ও যোনিদ্বারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা আপনাকে তীব্র সুখের চুড়ায় নিয়ে যায়।
অবশ্যই একটি পেলভিক পেশী ব্যায়াম অনুশীলন রুটিন আপনাকে আরো একটু সন্তোষজনক যৌন জীবন দেবে। সুস্থ মূত্রাশয়, অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে। যেসব নারীর অতিরিক্ত কার্যকর পেলভিক পেশি রয়েছে (অর্থাৎ যেসকল পেশি মুক্ত এবং চলাচল করতে অক্ষম ও শুরুতেই সঙ্কুচিত অবস্থানে আছে) তারা হয়তো বা বেদনাদায়ক যৌন জীবন পার করতে পারেন অথবা অন্যান্য লক্ষণ যেমন বাফার প্রবেশ বা টয়লেট ব্যবহারে কষ্ট পেতে পারেন।
এসকল ক্ষেত্রে পেলভিক পেশীর ফিজিওথেরাপী এই সকল যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করতে পারে।
নির্দেশনা-
প্রত্যেকদিন পেলভিক পেশীর ব্যায়াম অনুশীলন প্রত্যেক নারীর জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ। শিখুন কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে তা করতে হয়।
৫. আপনার যোনি এবং যোনিদ্বারের পরিবর্তন সারা জীবনব্যাপী একটি চক্র
শরীরের অন্যান্য অঙ্গ ও টিস্যুর মতই যোনি এবং যোনিদ্বারের ওপর আপনার বয়স এবং দৈনন্দিন বৈচিত্রময় অভ্যাসের প্রভাব পড়বে।
মেনোপজের সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে খুবই সাধারণ কিছু পরিবর্তন হয় যেমন যোনিদ্বারের পর্দা পাতলা হওয়া, গর্ভধারণের সময় নির্দিষ্ট স্থানে রক্ত চলাচলের ভিন্নতার কারণে যোনিদ্বারের ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।
কিন্তু যদি আপনি যেকোনো কারণেই আপনার যোনি এবং যোনিদ্বারের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকেন তাহলে যেকোনো সময়ে যোনি বা যোনিদ্বারের অস্বাভাবিকতা দেখলে চুপ করে একলা সহ্য করবেন না। কথা বলুন আপনার বিশ্বস্ত ডাক্তারের সাথে- তবে ড. গুগলের সাথে নয়!
নির্দেশনা
আপনার ডাক্তারের চেম্বারই কথা বলার জন্যে বিশ্বস্ত স্থান, শরীরের অন্যান্য অংশের জন্যেও। এবং এখন আপনি অল্প বিস্তর যোনি এবং যোনিদ্বার সম্পর্কে জানেন। তাই আশা করি আপনি এগুলোর আশানুরূপ যত্ন নিতে উৎসাহী হবেন।