November 25, 2024
সম্পাদকীয়

নারী দিবসে ব্যক্তিগত মতপার্থক্য ভুলে এক হবার শপথ নিন

শারমিন শামস্।। নারী দিবস নিয়ে সম্পাদকীয় লিখতে বসেছি যখন, আমার পরিচিত এক ছোট বোন ফোন করে জানাচ্ছে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার অংশ হিসেবে তার একটি খ্যাতিমান হোটেলে তিন মাসের ইন্টার্ণশিপ করবার কথা। এজন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স চাই। কিন্তু বাবা অথবা স্বামীর অনুমতি ছাড়া সে তা পাবে না। মেয়েটির বাবা তার পড়ালেখার ঘোরবিরোধী। আর সে অবিবাহিত। কিন্তু তার বয়স ২৬/২৭। এরকম বয়সী একটি মেয়ে স্বামী নেই এবং বাবার অনুমতি নেই বলে পড়ালেখায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাচ্ছে না, ভাবতে পারেন? এটা কি ২০২১ সাল, নাকি ১৭২১? কোনটি? দেশ কি এগোচ্ছে? কাদের স্বার্থে এগোচ্ছে? নারীর স্বার্থ কি সেই উন্নয়ন যাত্রার অংশ করে নেয়া হয়েছে?

করোনার কারণে দীর্ঘ একটি বছর স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। স্কুল খুলবার পর মেয়ে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার কতটা হলো, সেটি দেখবার আছে। বাল্যবিবাহ কী হারে বেড়েছে, সেটি বুঝে নেবার আছে। সামনে অনেক কঠিন পথ। অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে। এর একটি বড় অংশ নারী। ঘরে ঘরে সহিংসতা বেড়েছে। নারী নির্যাতন বেড়েছে। এরকম একটি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস এলো- আমাদের এই সময়টিকে নিছক আনুষ্ঠানিকতায় বেধে রাখবার উপায় নেই আর। একে কার্যকরী করা প্রয়োজন।

নারীবাদ এখন একটি চেনা শব্দ। চেনাতেই লেগে গেল বহুদিন। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার আর ধর্মীয় গোঁড়ামি ও মৌলবাদের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে পড়ে থাকা এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামনে নারীবাদ শব্দটি নিয়ে এগুনো বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। কত কত রক্তক্ষরণ যে সয়ে যেতে হয়। তবু আশার কথা যে, এদেশের নারীবাদী অ্যাক্টিভিস্টরা থেমে নেই। তারা যে যার জায়গা থেকে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন। কাজ করছেন। লিখছেন। বলছেন। অনুপ্রাণিত করছেন। এখন প্রয়োজন সব লড়াকু যোদ্ধার একটি ঐক্যের ছায়াতলে এক হয়ে দাঁড়াবার। ব্যক্তিগত মতপার্থক্য, রাগ, ক্ষোভ, হতাশা ভুলে গিয়ে একে অপরকে শানিত, অনুপ্রাণিত করা। নিজেদের অস্ত্র পরস্পরে ভাগ করে নেয়া। একতাবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা।

নারীবাদের ইতিহাস এই একতার কথা বলে। ভালবাসার কথা বলে। পরস্পরের শক্তি হয়ে থাকার কথা বলে। একে অপরের বোন হয়ে ভাই হয়ে এগিয়ে যাবার কথা বলে। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবস সেই একতার মন্ত্র নিয়ে আসুক। আমাদের সবার ভেতরে জাগিয়ে তুলুক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের তাগিদ। আমরা জয়ী হবো। দূর করবো সকল লিঙ্গ বৈষম্য।  নারীর জন্য পুরুষের জন্য সব লিঙ্গের জন্য একটি সমতার পৃথিবী গড়ে তুলবো। হাতে হাত রেখে সেই প্রস্তুতি-পথে এগিয়ে যাবার সময় হলো এবার। জয় হোক।

সবাইকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছা। ভালবাসা।