‘‘যতই হোক, মেয়ে তো!’’
কানিজ ফাতেমা।। বাংলাদেশের নারীরা আজ এগোচ্ছে। তারা বেশ কিছু সুযোগ পাচ্ছে, শিক্ষিত হচ্ছে, চাকরি করছে, উপলব্ধি করতে পারছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মাহাত্ম্য। দেশে বেশ কিছু আইনও রয়েছে নারীর পক্ষে, তাই হয়তো না চাইতেই নারীকে দিতে হচ্ছে সুযোগ, কিছুটা চাপে পড়ে হলেও মানতে হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন। তবুও মানসিকতার, চিন্তাধারার যে ব্যাপারটা সেখানে বৈষম্য রয়েই যায়। সুযোগ পেলেও গুরুত্ব পায় না। আজো শুনতে হয় “সবকিছুতেই তো বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে আর কত সমতা চায়?”
এখনও যতই যোগ্য হোক তবুও যেন নারীর প্রথম পেশা সংসার। সংসারই যেন নারীর প্রথম কর্মক্ষেত্র। এবং সন্তান উৎপাদনই যেন তার সফলতা। আর চাকরি তো কেবল ঐচ্ছিক বিষয়! তা কোনো কোনো নারী করে শখের বশে, কেউ কেউ আবার হয়তো দায়ে পড়ে করে। এখন পর্যন্ত নারীর অর্জন, সাফল্য, কৃতিত্ব সবকিছু এমনকি নিজস্ব অস্তিত্ব ঢাকা পরে যায় তার সঙ্গে সম্পৃক্ত পুরুষ সঙ্গীটির পরিচয়ের আড়ালে। কেউ কেউ তাতেই গর্বিত।
আবার ছেলেরা নিজেদের চেয়ে উচ্চপদস্থ কোনো নারীকে বিয়ে করার বেলায় খানিকটা হকচকিয়ে যায়। সঙ্গিনী তার চেয়ে ভালো বেতনে চাকরি করছে সেটা মেনে নিতে কষ্ট হয় তার। এখনও অনেক নারী তার চেয়ে কম বেতনের কাউকে বিয়ে করতে রাজি নন। সমাজেও এই বিষয়টা ভালো চোখে দেখা হয় না। কারণ আমাদের মন, চিন্তাধারা, আমাদের ভাবনা এ সমাজে এই অসুস্থ ধারাকেই বয়ে বেড়াচ্ছে।
নারীরা যদি সবচেয়ে উঁচু স্থানটাও লাভ করে তবু “যতই হোক, মেয়ে তো” কথাটা থেকে বাঁচার কোনো জো নেই। আসলে এখনও অনেকের কাছেই মেয়ে মানেই কেবল ছেলে না হওয়ার আক্ষেপ মাত্র।
আজো কিছু পুরুষের যতই সার্টিফিকেট, বোধবুদ্ধি থাকুক না কেনো তাদের ধারণা খুন্তি আর বাচ্চা সামলানো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। বলি কি, কলমের কোনো লিঙ্গ হয় না, তাহলে খুন্তির কেন হয়? কর্মস্থলটা সবার হলে রান্নাঘরটা কেন সবার নয়?
বরং আমাদের দেশের নারীরাও কিরকম যেন অদ্ভুত পরগাছা স্বভাবের। তারাও এরকম থাকাতে আনন্দ খোঁজে। তারাও পুরুষ এবং পুরুষতন্ত্রের পায়ের তলা চেটে গর্বিত হয়ে পুরুষতন্ত্রের জয়ধ্বনি করে। ট্যাবু ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারে বা চায় এমন মেয়ের সংখ্যা এখনো নগন্য। বরং এখনও বেশিরভাগ নারীর কাছেই স্বাধীন খোলা হাওয়ায় মুক্ত শ্বাসের চেয়ে সোনার তালা দেওয়া কক্ষের শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাই বেশি সুখকর।
এতো অসুস্থ চিন্তাধারা নিয়ে সমাজটা অধঃপতিত হয়েও টিকে আছে আর অসুস্থ ধারাকেই বয়ে বেড়াচ্ছে। চিন্তাধারা পরিবর্তন করলেই হয়তো পরিবর্তন সম্ভব, কেননা পরিবর্তন আসতে হবে ভেতর থেকে।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]