November 23, 2024
সাহিত্যকবিতাফিচার ৩

মা

লাকী আক্তার।।

আমাদের মায়ের গায়ে কোনো সুগন্ধি ছিল না,
আমাদের মায়ের গা থেকে জবজব ঘামের ভেজা ভেজা গন্ধ।
সেই ঘাম জড়ানো প্রিন্টের শাড়ি জড়িয়েই
আমার ছোট্ট ভাইবোনেরা বেঘোরে ঘুমোতো!
আমাদের মায়ের শরীর যেন খসখসে শেওড়া পাতা!
অযত্নে আর অবহেলায় খড়ি ওঠে রোজ!
বুড়ো হওয়ার আগেই আমাদের মায়ের
দাঁতগুলো আমাদের মাকে দিলো ফাঁকি!
বড়বেলায় কারো এতগুলো দাঁত
ইঁদুরের গর্তে ফেলে কিনা
আমার জানা নেই।
ফোকলা হাসি আর নকল দাঁতের মাঝেও
পানের লাল কালো দাগ।
পান ছাড়া আমাদের মায়ের অন্য কোন শখ ছিল কি না
আমরা আদতে জানি না,
কিংবা জানতে চাইও নি কোনোদিন!
আমাদের বাবাও জানেন না নিশ্চয়ই।
লাল টুকটুকে শাড়িতে
আমার মায়ের যখন বিয়ে হয়
আমার বাবা তখন বয়স্ক তাগড়া পুরুষ!
গ্রামের ছুটন্ত কিশোরী আমার মা
যে গুনগুন করে গাইত,
“ও ধান বানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া”
এই শহরের ঘুপচি অন্ধকার ঘরে,
তুরাগ নদের সাথে পাল্লা দিয়ে
আমাদের মায়ের যৌবন
হারিয়েছে নিদারুণ উদাসীনতায়।
আমাদের বাবা এখনো হুংকার ছাড়ে রোজ!
আর আমাদের মা রোজ রোজ
লজ্জাবতীর মত মিইয়ে যায়।
তবুও আমরা যখন হাসি,
আমাদের মায়ের চোখে তখন রোদ খেলা করে।
আমরা যখন কাঁদি,
আমাদের মায়ের চোখে তখন ঘোর আষাঢ় নামে।
আমরা যখন বেদনায় ডুকরে উঠি,
আশ্চর্য আমাদের মা তখন নীল হয়ে যায়!
যেখানেই যাই পৃথিবীর সব প্রান্তেই আমাদের মা বসত করে!