November 22, 2024
সাহিত্যকবিতাফিচার ৩

অ্যান্ড্রিয়া গিবসনের কবিতা

অ্যান্ড্রিয়া গিবসন (জন্ম আগস্ট ১৩, ১৯৭৫) একজন অ্যামেরিকান কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট। তার কবিতায় উঠে আসে লিঙ্গ রীতি, রাজনীতি, সমাজ সংস্কার এবং LGBTQ গ্রুপের মানুষের লড়াইয়ের কথা। বর্তমানে প্রথম সারির মার্কিন নারী কবিদের মধ্যে তিনি একজন। অ্যান্ড্রিয়া গিবসনের “ফটোগ্রাফ” কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মেহেরুন নূর রহমান।।

 

ছবি

 

আমি যদি একটা ছবি হতাম!

তোমার মানিব্যাগের কোণে আটকে থাকা

আহা আমি যদি ছবি হতাম

তুমি ভবিষ্যৎ ভেবে পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে

আমি যদি তোমার সেই চেহারাটা হতাম!

যা তুমি অপরিচিতদের দেখাও,

যখন তারা জিজ্ঞেস করে তুমি কোথা থেকে এসেছো?

আমি যদি সেইজন হতে পারতাম যে ফোন কল পায়

পোস্টকার্ড পায় এই বলে যে- “হায় তুমি যদি এখানে থাকতে!”

 

ভাবছিলাম তুমি যদি এখন এখানে থাকতে!

শরৎ বড় কঠিন ঋতু, গাছের পাতারা ঝরতে থাকে

আর এমনভাবে ঝরে যেন তারা মাটির প্রেমে পড়েছে

গাছগুলোকে কেমন নগ্ন আর একাকী দেখায়

আমি তাদের বলার চেষ্টা করি, একটু অপেক্ষা করো

কিছুদিন পর বসন্তে, তোমাদের নতুন পাতা গজাবে

কিন্তু গাছদের কি আর এসব বলা যায়?

তারাও আমার মত, স্থির নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে

এবং কিছুই শোনে না

 

আহা তুমি যদি এখানে থাকতে!

আমি পাগলের মতো তোমাকে অনুভব করছি

আমার চোখ কেমন ধোঁয়াশা হয়ে উঠেছে

চশমার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে

ভাবছি সে সময়ের কথা যখন আমরা পরিপূর্ন ছিলাম

এমন ছিলাম যেন চাঁদকে টোকা দিতে পারি চন্দ্রলোকের জন্য

বা সূর্যের গভীরে স্ট্র ঢুকিয়ে দিতে পারি এমন চুমুক যেমন ইকারাস দিতে পারে

আমাদের বন্দুকের গুলিগুলোকে অনন্তকালের চুম্বন

 

আমি কখনই তোমাকে হারাতে চাইনি

হয়তো তুমিও চাওনি হারাতে তোমার দয়িতাকে

আমরা একে অপরকে আঘাত করতে চাইনি

এখন আকাশ রং বদলায় কালো থেকে নীলে

গোধুলীকে দেখায় ক্ষতের মত

আমার একরাতের প্রণয়ীরা

শরীরে জড়িয়ে থাকে বিয়ের আংটির মত

কিন্তু ভোর হলেই তারা কেউ আর আঙুলে খাপ খায় না

আঙ্গুল গলে, দরজা গলে বেরিয়ে যায়

শুধু যা রয়ে যায় লম্বা সময় ধরে তা তোমার শরীরের ঘ্রাণ

একদিন বলেছিলাম এই সুগন্ধকে যদি ছুড়ে দেই ইচ্ছাপূরণের কুয়োয়

সারা বিশ্বের সমস্ত ইচ্ছা হবে পূরণ

মনে পড়ে তোমার?

 

মনে পড়ে সেই রাতের কথা যখন বলেছিলাম

স্ট্রিট লাইটের আলোতে তুষার ঝরে পড়ার চেয়ে নিখুঁত কিছু আমি আর কখনো দেখিনি

বিদ্যুৎ কুর্নিশ করছে প্রকৃতিকে, মন কুর্নিশ করছে হৃৎস্পন্দনকে

কষ্ট পাবো জানি তবুও

তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার কাছে নত হই প্রতিনিয়ত

আমি এখনও তোমাকে ভালোবাসি

যেমনভাবে চাঁদ ভালোবাসে পৃথিবীকে, যার চারপাশে সে ঘুরে বেড়ায় দিন-রাত

 

বাচ্চারা যেরকম ছুটির ঘণ্টা শুনতে ভালোবাসে

তেমনি আমি তোমাকে শুনতে পাই

খেলার মাঠের কথা চিন্তা করো, যেখানে চিৎকার, হুড়োহুড়ি

ক্ষত ব্রণ নিয়ে বাড়তে বাড়তে বুঝে যাওয়া

অন্যকে ভয় দেখিয়ে, হড়কে দিয়ে ভাব নিচ্ছে যে সুদর্শন

সে বড় হবে না সুখের জন্য

 

সুখের কথা ভাবলেই আমার তোমাকে মনে পরে

তুমি যেখানেই থাকোনা কেন, আশা করি সুখি আছো

আমি সত্যিই এটা আশা করি

আমি আশা করি তারারা আজ রাতে তোমার গালে দিক অসংখ্য চুমু

আশা করি তুমি অবশেষে ধূমপান ছাড়ার উপায় খুঁজে পেয়েছো

আশা করি তোমার ফুসফুসগুলি আজ উন্মুক্ত এবং জীবনকে নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করছো প্রাণভরে

আমি আশা করি তোমার হাতে আছে একটি ঘুড়ি, যা ঘুরে বেড়ায় পুরো নক্ষত্রমণ্ডল জুড়ে

এবং তারপরও তোমার কাছে রয়ে গেছে কয়েকশত গজ সুতো

আমি আশা করি তুমি হাসছো

যেন ঈশ্বর নিজে এসে তোমার মুখে ছড়িয়ে দিয়েছে সে দৈব হাসি

 

আমি হয়তো খানিক ক্লান্ত এবং বিষন্ন

হয়তো নগ্ন ও একাকী

যেন ক্রমাগত দুলিয়ে যাচ্ছি গাছের শাখা কিছু পাবার আশায়

আমি যোজন যোজন দূরে তার থেকে

যার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো মাত্র কদিন আগে

তুমিই আমার প্রথম দূরত্ব যার কাছে এসে

হৃদয়ে ফুটে উঠেছিল মুক্তোদানার মত স্বেদ বিন্দু

আহা তুমি যদি এখানে থাকতে

আহ তুমি যদি কখনো না যেতে!

 

(*ইকারাস – গ্রিক মিথোলজি’র একটা চরিত্র)