ইভানা’র আত্মহত্যা: ভেবে দেখতে হবে অনেক কিছু
মেহেরুন নূর রহমান।। সম্প্রতি ইভানা লায়লা চৌধুরী নামে একজন নারী আত্মহত্যা করেছেন। উচ্চশিক্ষিতা, স্কলাসটিকার মত প্রথম সারির একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ইউনিভার্সিটি প্লেসমেন্ট সার্ভিসেসের উপব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন। যেটুকু জানতে পেরেছি, মেয়েটি সম্ভবত দুই সন্তানের মা এবং একটি সন্তান ছিল মেন্টালি চ্যালেঞ্জড। স্বামীর সাথে বনিবনা ছিল না, স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল, স্বামী তার সাথে দুর্ব্যবহার করতো ইত্যাদি। স্বামীটি সম্ভবত তাকে ডিভোর্স দেবার কথা ভাবছিল। মাত্র ৩২ বছর বয়সে কারো এরকম অকালমৃত্যু ভীষণ হৃদয়বিদারক। আর কারো কথা নয় শুধু তার ছোট দুটি বাচ্চার কথাই বারবার মনে পড়ছিল।
মেয়েটির আত্মহত্যার কথা শুনে অনেকেই অনেক ধরনের লেখা লিখেছেন। বলেছেন স্বামীর অবহেলা, পরিবার থেকে সাহায্য না পাওয়া, এসব নানা কারণেই হয়তো মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। একটি স্পেশাল শিশুর দেখভাল, স্বামীর পরকীয়া, অত্যাচার, তার উপর ডিভোর্স, সত্যি, একজন মানুষ কত নিতে পারে!
অবশ্যই ডিভোর্স কোনো সুখের বিষয় নয়। কোনো ডিভোর্সই হাসিখুশি ফুলের তোড়া হাতে দিয়ে হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক পক্ষ কষ্ট পায় আরেক পক্ষের চেয়ে বেশি। কিন্তু ডিভোর্স যখন অবশ্যম্ভাবী, এক পক্ষ যখন নেয়ার ব্যাপারে স্থির থাকে তখন অন্য পক্ষকে এটা মেনে নিতে হয়, যতই কষ্ট হোক না কেন। এতটুকু মানসিক শক্তি ধারণ করা প্রত্যেকেরই জন্য দরকার কারণ কখনো কখনো এর কোনো বিকল্প নেই। জোর করে, কান্নাকাটি করে বা হাতে পায়ে ধরে আর কতদিন একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়? কম্প্রোমাইজ করতে করতে আর কতটুকু ছোট হওয়া যায়?
সত্যি কথা বলতে কি কোনো সম্পর্কে এক পক্ষ যদি পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় তাহলে আইডিয়ালি অন্য পক্ষের নিজ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। সব সময় সব উচিত কাজ করা হয় না, বা করা সহজ নয়, তাই হয়তো মানুষ সমঝোতার চেষ্টা করে, একসাথে আবারো থাকার চেষ্টা করে কিন্তু এক পক্ষ যদি সত্যিই আর সম্পর্কটি কন্টিনিউ না করতে চায় তখন সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এটা দুজনের জন্যই উত্তম। এমনকি সন্তানদের জন্যও উত্তম।
ইভানা তার এক বন্ধুকে লিখেছে, “সম্ভাব্য তালাকের চিন্তায় আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার মা–বাবা সহ্য করতে পারবেন না। তাদের দুজনেরই বয়স হয়েছে। নানা রকম শারীরিক জটিলতা আছে”। স্বামীর সাথে সম্ভাব্য বিচ্ছেদ ইভানা মেনে নিতে পারছিলেন না। আর এটাই স্বাভাবিক। মানুষের ইমোশন তো কোনো ইলেকট্রিক সুইচ নয় যে একজন উল্টাপাল্টা কিছু করলে অন্যজন সুইচ অফ করে দেবে আর সব ভালোবাসা দুঃখ কষ্ট উধাও হয়ে যাবে। মানুষের মন বড় জটিল।
ইভানার মতো শিক্ষিত, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে আছে এরকম অনেক মেয়েকে দেখেছি প্রেম করার পর বাবা-মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে প্রেমিকের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে। তখন মা-বাবার অসুস্থতা, সম্মান এসব কোনোকিছুর তোয়াক্কাই করে না কিন্তু অসুস্থ একটা বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে বের হবার সময় সমাজ, সম্মান, সন্তান, বাবা মায়ের শারীরিক অসুস্থতা এরকম নানা অযুহাত দাঁড় করায়। আসলে এসব কথা বলে/ভেবে বিচ্ছেদেটিকে এড়াতে চায়।
আমাদের দেশে নারী/পুরুষ দুজনের ক্ষেত্রেই এই ধরণের টেন্ডেন্সি দেখতে পাবেন। আমারদের বড় করা হয় এভাবে। ডিভোর্সের স্টিগমা কেউ গায়ে লাগাতে চায় না। প্রচুর সম্পর্কে দেখবেন ঝগড়াঝাটি, পরকীয়া, মারামারি; তারপরও স্বামী স্ত্রী কেউই বিচ্ছেদের কথা ভাবে না। আমি এমন পুরুষ দেখেছি যেখানে স্ত্রী পরকীয়া করছে, বিয়ে থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে, স্বামীটি হাত পায়ে ধরে স্ত্রীকে থাকতে বলছে রাখছে কারণ স্ত্রী চলে গেলে সামাজিকভাবে সে অসম্মানিত হবে। মনে পড়ে কি কয়েক বছর আগে একজন ডাক্তার তার স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে না পেরে লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছিল অথচ চাইলেই তারা আলাদা হয়ে দুজন দুজনকে মুক্তি দিতে পারতো।
আমি দেশের বাইরে থাকি, আমার আশেপাশে আমাদের দেশের বহু নারী আছে যারা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে বের হয়ে সম্মানের সাথে জীবন যাপন করছে। কারো বিচ্ছেদই সহজ ছিল না। অনেকের ক্ষেত্রেই তাদের বিচ্ছেদের সময় বাবা-মার খুব যে সমর্থণ পেয়েছিল, তাও নয়। সন্তানরা ছোট ছোট ছিল তারপরও বের হয়ে এসেছে কারণ এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত তারা মনে করেছিল। তার কিন্তু বেশ আছে এখন।
স্বামীপ্রেম বা যে কারণেই হোক ইভানা আসন্ন বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারেনি, তার ওপর চ্যালেঞ্জড সন্তানসহ দুটি সন্তানকে একা দেখভাল করার, মেইনটেইন করার আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল ভয়ঙ্করভাবে নিশ্চিত। আপাতদৃষ্টিতে আপনি মেয়েটির অবস্থান যদি বিশ্লেষণ করেন তবে দেখবেন তার অবস্থান আর ১০জন নারীর চেয়ে শক্ত ছিল। প্রথমত সুশিক্ষিত, এবং ভালো একটা জব করার পরও সে সাহস করতে পারে নি একা বেঁচে থাকার। আত্মহত্যায় মুক্তি খুঁজছে। ছোট দুটি সন্তানও তাকে ফেরাতে পারে নি।
আসুন বোঝার চেষ্টা করি কিছু কিছু মানুষ কেন আত্মহত্যা করে বা করতে চায়।
কোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য, পরিচিতজন বা কোনো সেলিব্রেটির আত্মহত্যার খবর শুনলে আমরা শকড হই, ব্যথিত হই। কেন সে আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো তা বোঝার চেষ্টা করি যদিও জানি এটা কল্পনা করা কত কঠিন। খুঁজতে গিয়ে আপনি স্পষ্ট কোনো কারণ বা লক্ষণ নাও পেতে পারেন, অবাক হয়ে ভাবতে পারেন কেন এটা হলো, সব তো ঠিক ছিল! আবার আপনি মন খারাপ করার মত যথেষ্ট কারণ খুঁজেও বের করতে পারেন এবং ভাবতে পারেন এ কারণেই হয়তো সেই মানুষটা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এই দুটি ধারণার কোনোটিই সত্যি নাও হতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ খুব পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা করে না, বরং এটা চটজলদি একটা সিদ্ধান্ত, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে মানুষটি আত্মহত্যা করেছে তার পূর্বে এক বা একাধিকবার অত্মহত্যা করার চেষ্টার গল্প থাকে। অনেক কারণ থাকতে পারে একজন ব্যক্তির আত্মহত্যার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য কিন্তু সবচেয়ে বেশি যে কারণটি কাজ করে সেটা হলো তীব্র বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন।
বিষণ্ণতা মানুষকে প্রচন্ড মানসিক যন্ত্রণা এবং আশাহীনতার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যায়, যার ফলে তারা কষ্ট দূর করার অন্য উপায় দেখতে অক্ষম হয়। নিজেদের জীবনকে শেষ করাকে যন্ত্রনা মুক্তির সহজ উপায় হিসেবে বেছে নেয়। গবেষণায় দেখা গেছে হতাশা, তা স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘস্থায়ী যাই হোক না কেন, আত্মহত্যার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। হতাশাগ্রস্থ একজন মানুষ মনে করে যে সে তার সব আশা, স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেছে এবং উপায়হীনতায় ভুগতে ভুগতে আত্মহত্যাকে একটি কার্যকর বিকল্প বলে মনে করে।
বিষন্নতা একটি জটিল মানসিক বৈকল্য। আগেই বলেছি এটার জন্য পোক্ত কোন কারণ থাকতেও পারে আবার নাও পারে। প্রচুর মানুষ আছে যাদের আপাত কোন সমস্যা নাই কিন্তু তারা ডিপ্রেশনে ভুগতে পারে। আমার পরিচিত একজন আছে যার স্বামী, সন্তান, অৰ্থনৈতিক অবস্থা, পারিবারিক সাপোর্ট কোন ক্ষত্রেই কোন সমস্যা নাই বরং অন্য আর পাঁচটা মানুষের চেয়ে এসব ক্ষেত্রে তার অবস্থান যথেষ্ট উপরে তারপরও জীবনের কোন এক জটিল হিসেব মেটাতে না পেরে সে ক্রনিক বিষন্নতায় ভুগছে বহু বছর। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে কয়েকবার, সৌভাগ্যক্রমে সফল হয়নি।
আবার একটু চারপাশে তাকালেই আপনি জীবনযুদ্ধে বারবার হেরে গিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর মত মানসিক শক্তিসম্পন্ন অনেককে দেখে ভাববেন কীভাবে সম্ভব? আমি হলে কি পারতাম?
নিচে কিছু কারণ দেয়া হলো যা মানুষের বিষন্নতাকে ট্রিগার করতে পারে এবং টেনে নিতে পারে আত্মহত্যার দিকে –
ট্রমাটিক স্ট্রেস (আঘাতজনিত চাপ): যে ব্যক্তি শৈশবে যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, বা যুদ্ধের আঘাতসহ একাধিক আঘাতের অভিজ্ঞতা পেয়েছে, সে আত্মহত্যার জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে, এমনকি ট্রমাটিক ঘটনাগুলি ঘটার অনেক বছর পরও। যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপে দেখা গেছে ধর্ষণের শিকার হওয়া প্রায় ২২% নারী বা পুরুষ কোনো না কোনো সময়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (আঘাত পরবর্তী চাপ)- PSTD: ভয়ঙ্কর কোনো ট্রমা থেকে বের হওয়া ব্যক্তিরা যারা পরবর্তীতে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PSTD) এ ভুগছে তাদের ভেতর আত্মহত্যা করার প্রবণতা দেখা যায়। PSTD আক্রান্তদের মধ্যে থাকে অসহায়ত্ব এবং হতাশার তীব্র অনুভূতি হয় যা তাদের আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার: বিভিন্ন ধরনের ড্রাগস, অধিক মাত্রায় অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি অনেকসময় একজনের ভেতর ভয়ঙ্কর শূন্যতা এবং আবেগপ্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে যা তাকে প্রভাবিত করতে পারে আত্মহত্যার চিন্তার দিকে নিয়ে যেতে। বিষন্নতা এবং অন্যান্য মানসিকব্যাধিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নেশা জাতীয় পদার্থ, অ্যালকোহল এসবের ব্যবহারের হার বেশি থাকে এবং আত্মহত্যার ঝুঁকিও বাড়তে থাকে।
ক্ষতি বা ক্ষতির ভয়: বড় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে বা ক্ষতির আশঙ্কা একজন মানুষকে নিয়ে যেতে পারে চূড়ান্ত বিষন্নতার দিকে যার কারণে সে নিজের জীবন শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে – একাডেমিক ব্যর্থতা, গ্রেফতার বা কারাবরণ, সাইবার বুলিংসহ অন্যান্য বুলিং, লজ্জা বা অপমান, আর্থিক সমস্যা, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও বিয়ে বা রোমান্টিক সম্পর্কের সমাপ্তি, চাকরি হারানো, যৌন প্রবণতা বা সেক্সচুয়াল ওরিয়েন্টেশন প্রকাশের কারণে বন্ধু বা পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানো, সামাজিক মর্যাদা হারানো ইত্যাদি।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একাকিত্ব: প্রিয়জনের সাথে বিচ্ছেদ (বিবাহ বা প্রেম), শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা, সামাজিক উদ্বেগ, অবসর, বা নতুন স্থানে চলে যাওয়া বা অ্যাবিউসিভ রিলেশনশিপের প্রেসার ইত্যাদি নানা কারণে একজন মানুষ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকীত্বে ভুগতে পারে। এই ধরণের জীবনযাপনকারীদের মধ্যে বিষন্নতা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।
আসুন আবার আমার ইভানার কাছে ফিরে আসি। উপরোক্ত অনেকগুলো কারণই ইভানার জীবনে ছিল তা বলাই বাহুল্য। পারিবারিক অশান্তি, সন্তানের অসুস্থতা ইত্যদি সব মিলিয়ে ইভানা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল অবশ্যই, সম্ভবত এসবই তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল তীব্র বিষন্নতায়। বিষণ্ণতা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সম্ভবত সে পায়নি। জানি না কতটুকু সে নিজেকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিল।
আমরা আমাদের শরীর এবং মনকে সবচেয়ে ভালো বুঝি। শরীর অসুস্থ লাগলে ডাক্তারের কাছে যাই কিন্তু মন অসুস্থ হলে কেন সায়কায়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে চাই না বলুন তো? সবকিছু খুব বেশি ডিটেইলসে আমি জানিনা তবুও অনুমান করছি মেয়েটি যখন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল তখন যদি প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সে তার পরিবার, বন্ধু বা প্রফেশনাল কারো থেকে পেত তাহলে হয়তো ব্যাপারটা অন্যরকম হলেও হতে পারতো। আত্মহত্যার প্রবণতা যদি মনের মধ্যে একবার গেঁথে যায় তবে সেখান এখান থেকে বের হয়ে আসা ভীষণ কঠিন। যাদের মধ্যে এই প্রবণতাটা আছে তারা যেকোনো কিছুর সমাধান হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নেয়। তাই সঠিক মানসিক চিকিৎসা/থেরাপি দরকার।
মেয়েটির মৃত্যু থেকে আসলে অনেক কিছু শেখার আছে। প্রথমত কোনো একটি সম্পর্কে যদি বিচ্ছেদ অবশ্যম্ভাবী হয় তবে তা মেনে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। অ্যাবিউসিভ সস্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার মানসিক জোর অর্জন করতে হবে। সহজ নয় জানি। সাহায্য নিন প্রফেশনাল কারো, সাহায্য নিন বন্ধুর, সাহায্য নিন পরিবারের। অনেক মেয়েরাই স্বামীর সাথে তাদের সম্পর্কের ধরণ লুকায় পরিবারের কাছ থেকে। ছোটখাটো ঝগড়াঝাঁটি লুকাতে পারেন কিন্তু এটা যদি বিশাল হয়ে ওঠে, যেমন শারীরিক নির্যাতন, পরকীয়া এবং মারাত্মক আরো কিছু তবে অবশ্যই শেয়ার করুন। বাবা-মা যদি সমাজের কথা, তাদের সম্মানের কথা, তাদের অসুস্থতার কথা ইত্যাদি বলে আপনাকে একটি অ্যাবিউসিভ অথবা অসুস্থ নোংরা সম্পর্কের মধ্যে থেকে যেতে বলে, তাহলে ভেবে নেবেন তারা আসলে আপনাকে সঠিকভাবে ভালোবাসে না, সেসব বাবা-মায়ের কথা ইগনোর করুন।
সবচেয়ে বড় কথা নিজের কথা ভাবুন, নিজেকে ভালোবাসুন, সন্তান থাকলে তাদের কথা ভাবুন। আমরা মানুষ, চাইলেই যা ইচ্ছা তা করতে পারি না। মানুষ হিসেবে বেসিক কিছু দায়িত্ব কর্তব্য আছে আমাদের। বাচ্চাদের যদি জন্ম দিয়ে থাকেন তবে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাদের দেখাশোনা করা আমাদের কর্তব্য। আমি জানি মানুষ যখন তীব্র বিষন্ন হয় তখন এসব লজিক, এসব রিজনিং কাজে দেয় না। মৃত্যুকে অনেক সময় মুক্তির একমাত্র উপায় বলে হয়তো মনে হয়। এরকম তীব্র অনুভূতি হলে দয়া করে আপনজনদের সাথে, যারা আপনাকে বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং অবশ্যই অবশ্যই প্রফেশনাল সাহায্য নিন। যে মানুষটা আপনাকে ভালোবাসেনি, যে মানুষতার কাছে আপনি মূল্যহীন তার জন্য মরে যাওয়ার চেয়ে তুচ্ছ বিষয় আর কী হতে পারে বলুন তো? এতটা ছোট নিজেকে করবেন না। বেঁচে থাকুন নিজের জন্য, নিজের আপনজনদের জন্য যাদের প্রাণভোমরা হয়তো আপনিই।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]