আত্মপ্রেমে আমি
কিশোয়ার জাবীন ।।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ লিখেছেন,
“আমি সেই অবহেলা,
আমি সেই নতমুখ,
নিরবে ফিরে যাওয়া অভিমান-ভেজা চোখ।”
কবিতাটা মাথার ভিতর ঘুরছে অবিরাম।
কেন ঘুরছে, বুঝতে পারছি না!!!
কারণ,আমি নতমুখী কোনো মানবী নই।
আমার রাজ্যে আমিই সম্রাজ্ঞী, যোদ্ধা এবং প্রজা।
এক সম্রাজ্যে আর কাকে প্রয়োজন হয়?
দীপাবলি উৎসবে না ডাকলে, কবির মতো বলবো না,
“উৎসব থেকে ফিরে যাওয়া আমি সেই প্রত্যাখান”।
আমাকে প্রত্যাখান করার ঔদ্ধত্য আমি কাউকে দেই নি।
কারো আয়োজিত কোনো উৎসবে আমার নিমন্ত্রণ লাগে না!
আমার নিজের উদ্ধত চিবুকের তিলেই লুকিয়ে আছে অনন্ত উৎসব।
আমি একাই এক মহোৎসব।
আমাকে যে কেউ এড়িয়ে যেতে পারে।
অবহেলা করতে পারে।
এমনকি, আমার সাথে চোখাচোখি হলেও, না দেখার ভান করতে পারে।
তাতে আমার কিচ্ছুটি যায় আসে না।
আমি কোনোদিন কবির মতো বলতে আসবো না,
“আমাকে গ্রহণ করো”।
কেউ আমাকে গ্রহণ করলেই কি আর না করলেই কি!
তবে হ্যাঁ, কেউ যদি গ্রহণ করে, তাহলে চিরদিন কৃতজ্ঞতায় অবনত থাকতে জানি ।
বিশ্বাস করো,কারো কাছে আমার কিছু চাওয়ার নাই।
না সময়, না মনোযোগ, না ভালোবাসা।
আমি একলাই যুদ্ধ করতে পারি।
আমি একলাই শস্য ফলাতে পারি।
আমি একলাই তেপান্তর পাড়ি দিতে পারি।
আমি এমনই।
আমার কাউকে প্রয়োজন হয় না।
যখন কারো প্রয়োজন হয়, সে খুঁজে নেয় আমাকে।
আমি আমার পাঁজরের হাড় চিরে তাকে দেই হৃদপিণ্ড, ফুসফুস,আমার জরায়ু, আমার রক্তনালী।
আমার রক্তে হোলি খেলা শেষে, সে আমাকে ফেলে যায় চরম অবহেলায়।
কিন্তু বিশ্বাস করো, তাতে আমার কিচ্ছুটি যায় আসে না।
কে আমাকে কিভাবে, কোথায় ফেলে চলে গেল,
“এক্ষুনি আসছি” বলে আর কোনো দিন ফিরলো না,
কে আমাকে তৃষ্ণার্ত দেখেও এক আঁজলা জল দিলো না – তাতে আমার কিচ্ছুটি যায় আসে না।
“আমি সেই অভিমান” কবিতায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছেন
“আমি সেই নতমুখ,
পাথরের নিচের করুণ বেদনার জল। ”
কবিতাটি আমার ভীষণ রকমের প্রিয় হলেও,
কবির মতো কোনো অভিমান থেকে কথাগুলো বলছি না।
প্রগাঢ় কোনো বেদনা থেকেও নয়।
এ শুধু আমার একার একান্ত অনুভব।
আমি জেনে গেছি , কোনো পাথরের নীচে লুকিয়ে রাখা কান্না আমি নই।
আমি পাথর ভেঙে বেরিয়ে আসা উদ্দাম এক
খরস্রোতা নদী!
আমার চলার পথ আমারই স্রোতের আঘাতে তৈরি করে নিই, আমি নিজে।
আমিই তৈরি করি লোকালয়, সভ্যতা।
আবার, অসভ্য লোকালয় আমিই ভাসিয়ে দেই বানের জলে।
আমি বয়ে যাই আমার নিজের আনন্দে।
আমি একাই ধারণ করি নিজের পূর্ণতা।
আমি জানি, আমি নারী!
আমি নারী, তবে নতমুখী নই।
দেবী এথিনার মতো যোদ্ধা এক নারী আমি।
যুদ্ধেই মুক্তি!
মূল্যহীন নতমুখী অভিমানে নিজের অসম্মান ছাড়া কিছু নেই।
নিজেকে অসম্মানিত করার মতো অপরাধ আর আর নেই।