জীবন কেমন?
ফয়জুন নাহার সিতু ।।
খোঁপায় গোঁজা রক্তজবা, ভীরু চোখের এক তরুণী নদীর কাছে যায়।
জলের বুকে নিজের ছায়া, শরীর কেঁপে যায়!
অবাক হয়ে চায়।
জলের বুকে নীলচে জমিন, সাদা মেঘের ভেলা-
বুঝি আকাশ দেখা যায়!
কাতর হয়ে বললো মেয়ে, আমার হবি তুই?
এই নীলিমায় ফুটিয়ে দিবো গন্ধচাঁপা, জুই!
পাড়ভাঙা যে গাছ দুটো ওই, নুইয়ে পড়ে জলের দিকে –
ওরাও কি আকাশ দেখে?
শান্ত জলের হৃদয় ফুঁড়ে, সব ছায়াতেই জীবন জাগে?
নদীর বাঁকে, মাছের ঝাঁকে, সাদা বকের ঠোঁটের মাঝে –
জীবন খেলা করে?
শ্যাওলা, কাঁকর,গুল্মলতায় আর ভেসে আসা পদ্ম-শালুকগুলো-
ওদেরও কি জীবন জাগে?
ঐ শোনা যায়, মৃদুল ঢাকি ঢাক বাজাচ্ছে দূরে,
ওখান থেকে গুমরে ওঠা শব্দে যেন কান্না নদী জুড়ে।
জীবন আছে এরও?
জবা ফুলের জীবন আছে?
দেখো, ফুলের পরাগ জলে ভাসে!
ওরাও কি জীবন পেলো?
জলের বুকে অমনভাবে কেমন করে কাটছে সাঁতার ওরা!
জীবন কেমন?
মাটির মতো?
যে বীজ ফলাও ফলবে তেমন করে?
বেলে, পলি, কাদা, দোআঁশ চার প্রকারেই জীবন ফলে?
পরস্পরকে চেনে ওরা?
কান্না হলে জড়িয়ে ধরে কষ্টটুকু মুছে?
জীবন কেমন?
মাটির মতো – অম্ল ক্ষারে বিভেদ সেথায় হয়?
নদীর বুকে কান্না যেমন, জীবন বুকে সয়?
এক তরুণী অবাক চোখে, নদীর কাছে একলা হয়ে রয়।