বিদ্রোহী মেয়েদের জন্য শুভরাত্রির গল্প: আলফোনসিনা স্ত্রাদা
Good night stories for rebel girls বইটির লেখক এলেনা ফাভিলি ও ফ্রানসেসকা ক্যাভালো। প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত পেঙ্গুইন প্রকাশনা সংস্থা। মূলত কিশোর বয়সীদের লক্ষ্য করে লেখা এই বইটি। বিশ্বজুড়ে যে মেয়েরা ইতিহাসের নানা সময়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে বা রেখে চলেছে, তাদের সম্পর্কে ছোট ছোট গল্পের মতো করে লেখা। সন তারিখ তথ্য কম দিয়ে নাটকীয় করে তোলার চেষ্টা আছে, যাতে পড়ে মজা পাওয়া যায়।
প্রতিটি গল্পের সঙ্গে একটা ছবি, সেটাও বেশিরভাগ নারী শিল্পীদের আঁকা।
‘বিদ্রোহী মেয়েদের জন্য শুভরাত্রির গল্প’ নামে বইটি ধারাবাহিকভাবে অনুবাদ করেছেন মেহেদী হাসান, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য
আলফোনসিনা স্ত্রাদা
ইতালিয়ান সাইক্লিস্ট
জন্ম : মার্চ ১৬, ১৮৯১; মৃত্যু : সেপ্টেম্বর ১৩, ১৯৫৯
আলফনসিনার যুগে মেয়েরা সাইকেল রেসে অংশ নিতে পারতো না। অথচ সে এতো জোরে সাইকেল চালাতো যে চোখের সীমায় ধরে রাখা কঠিন হতো। সামনে দিয়ে নিমেষেই উধাও। “এতো জোরে চালাইও না, আলফোনসিনা।” মা বাবার চিৎকার; ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে – মেয়ে তাদের পগারপার। শোঁ শোঁ শব্দে সে চলে গেল চোখের আড়ালে।
তার যখন বিয়ে হয়ে গেল, তার পরিবার হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, মেয়েটা সাইক্লিস্ট হবার পাগলামি ছেড়ে দিয়ে এবার বুঝি সংসারে মন দেবে। এর পরিবর্তে তার স্বামী বিয়ের দিনই তাকে আনকোরা নতুন একটা রেসিং সাইকেল উপহার দিল। বিয়ের পর সে ইতালির মিলান শহরে আস্তানা গাড়ল। আলফোনসিনা পেশাধার সাইক্লিস্ট হবার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শুরু করল।
সে ছিল নিখুঁত, দ্রুত এবং দৃঢ়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সে ‘গিরো ডি’ইতালিয়া’তে অংশ নেওয়ার সুযেগ পেল, যেটা ছিল সাইকেল চালানোর জন্য বিশ্বের অন্যতম কঠিন একটা প্রতিযোগিতা। পৃথিবীর আর কোনো মেয়ে এর আগে এ-প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সাহস পায় নি। লোকজন বলতে লাগলো, “সে এটা শেষ করতে পারবে না।” মজার ব্যাপার হলো এ-সব উটকো মন্তব্য আলফোনসিনাকে থামাতে পারে নি।
রেসটা ছিল দীর্ঘ এবং কঠিন, একুশ দিনের। এর ছিল নানা পর্যায়, ইউরোপের বিপজ্জনক খাড়া পাহাড়ি রাস্তা আর বাঁক। যে নব্বই জন সাইক্লিস্ট শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ত্রিশ জন দৌঁড় শেষ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছিল। আলফোনসিনা এ ত্রিশ জনের একজন। তাকে বীরের মর্যাদায় বরণ করা হয়।
পরের বছর তাকে আর অংশ গ্রহণ করতে দেওয়া হয় নি। ” ‘গিরো ডি’ইটালিয়া’ কেবল ছেলেদের প্রতিযোগিতা” – কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে দিল। কিন্তু এতে আলফোনসিনা দমে গেল না।
সে একইভাবে দৌড়েছিল। এমন কি একটি ৪৪ পাউন্ড, ১ গিয়ার সাইকেল দিয়ে গতির রেকর্ড গড়েছিলে সে, তা ২৬ বছর ধরে কেউই ভাঙতে পারে নি ।
আলফোনসিনা যদি দেখতে পেত সময়ের ব্যবধানে কত পরিবর্তন এসেছে তাহলে কি খুশিই না হতো! এখন মেয়েদের সাইকেল রেস খুব জনপ্রিয় ইভেন্ট। এমন কি অলিম্পিকে মেয়েদের সাইকেল দৌঁড়ায় ছেলেদের সাথে সমান তালে।
আলফোনসিনা বলতো, ‘কেউ আমার সাইকেল থামাতে পারবে না।’