মঙ্গল শোভাযাত্রা: শুদ্ধতার চর্চা ধর্মে বাধা নয়
জান্নাতুল তাসনিম শোভা ।। মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে চারিদিকে বেশ গুঞ্জন দেখছি কয়েকটা দিন। কেউ বলছে রমজান মাসে এসব করতে নেই, আবার কেউ বলছে পৃথিবী নাকি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে নববর্ষের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমি কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এসব ইতিহাস আমরা কমবেশি সবাই জানি, সাথে বাঙালি ঐতিহ্যের ছোঁয়াতে আমরা খুব আনন্দ নিয়েই এই দিনটি পালন করি। পহেলা বৈশাখের সাথে ধর্মীয় কোনো সংযোগ সম্পর্ক নেই এবং তা কখনো কোনোভাবেই প্রমাণিত হয়নি।
বাঙালি ও বাংলার ঐতিহ্য কখনো কোনো ধর্মের পথে বাধা হয়ে ওঠেনি। সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দের সাথে নতুন বছরকে বরণ করে একটি গোটা জাতির মঙ্গল কামনা কখনোই পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ হতে পারে না।
এপ্রিল ২০২০ সময়টা কেমন ছিল সবার মনে আছে নিশ্চয়?
করোনাভাইরাস আর লকডাউনে একদম নেতিয়ে গিয়েছিলাম সবাই। হঠাৎ মনে হলো পহেলা বৈশাখ আসছে। দিনটি বরণ হবে না, কোনো মঙ্গল শোভাযাত্রা নেই! জাতির মঙ্গল কামনায় সবসময় দিনটি যেভাবে পার হয়ে এসেছে, সেই দেশের এই দুরাবস্থায় সবাই এমন চুপ থাকবো! কিভাবে মানুষের মনে জোর থাকবে! সকল ধর্ম-বর্ণ ভুলে এই একটি দিনই তো আমরা একত্রিত হয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠি প্রতি বছর। পান্তা, ইলিশ, বাঙালি পোশাক এ সবই যেন চোখের শান্তি-মনের শান্তি।
তখনকার দায়িত্বরত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম একটি অনলাইন প্রোগ্রাম করা যাক।মানুষ হতাশা থেকে একটু বের হোক। দলের সবাই যখন কবিতা, গান, নাচের ভিডিও পাঠাতে লাগলো অমনি হতাশা প্রায় দূর হয়ে মন হয়ে উঠলো ফুরফুরে এবং সুন্দরভাবে প্রযোজনাটি সম্পূর্ণ হলো। মরিচাধরা হতাশা থেকে অনেকটা বের হতে পেরেছিলাম ।
‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ রবীন্দ্রনাথের এই লাইনগুলো মনে বেজে উঠলেই শিহরণ জাগে। মনে হয় – সকল খারাপের বিনাশ হোক, এ দেশ এ জাতি শুদ্ধ হোক।
মঙ্গল সবসময় দেশ ও জাতির মঙ্গল বয়ে এনেছে-আনবে। অমঙ্গলকর চিন্তা ও মানসিকতা সারাজীবনই জাতির চারম ক্ষতির কারণ।
তাই নিজে শুদ্ধ হই, দেশ ও জাতির শুদ্ধি কামনা করি।