ভারতের রকেট নারীরা পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে
রিতু কারিধাল, নন্দিনী হরিনাথ, অনুরাধা টিকে, মৌমিতা দত্ত, মিনাল রোহিত, টেসি থমাস, এন ভালারমাঠি, ভি আর লালিথাম্বিকা – ভারতের স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের চন্দ্রজয়ের খবরই এখন সবচেয়ে আলোচনায়। আমাদের প্রতিবেশি দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এরকম একটি অভাবনীয় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল, যা আমাদের বিস্মিত করেছে তো বটেই, এরকম একটি সাফল্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণারও। বিশেষ করে, যখন চোখে পড়ছে এই চন্দ্র বিজয়ের একটি অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন এক ঝাঁক মেধাবী নারী মহাকাশবিজ্ঞানী। চাঁদের দক্ষিণ পোলে যে সফল ল্যান্ডিং ঘটিয়েছে ভারত তার পেছনে নারী বিজ্ঞানীদের অবদান বিশেষভাবে সকলের নজর কেড়েছে। এবং এটি স্পষ্ট করে সকলের জানা উচিত, ভারতের মতো একটি দেশে নারীর ক্ষমতা ও মেধার মূল্যায়নে ভারতের স্পেস অর্গানাইজেশনের এই দুর্দান্ত ভূমিকা অবশ্যই ইতিহাসে লেখা থাকবে। যেখানে নারীকে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও, প্রতিভাবান হওয়ার পরেও বারবার পিছে ঠেলে দেওয়া হয়েছে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে; সেখানে তথাকথিত নানা গোঁড়ামী আর সংস্কারে ঠাসা ভারত তাদের চিরকালীন এই সব পরিচয় ভেঙে বেড়িয়ে আসতে পেরেছে। এই পারাটা যে সে পারা নয়, লিঙ্গ বৈষম্য ও নারীর বঞ্চনার দীর্ঘ কালো ইতিহাসের বুক চিরে অন্য এক অভুতপূর্ব ঘটনার সূত্রপাত হল নিমেষে।
পুরো চন্দ্রাভিযান প্রজেক্টে সম্পৃক্ত ছিলেন মোট ৫৪ জন নারী মহাকাশবিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ার। এদের মধ্যে উপরে উল্লেখিত ৮ জন চন্দ্রায়ন-৩ এর ডিরেক্টর ও ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। ডিরেক্টর লেভেলে যারা আছেন, তারা প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন মিশনে কাজ করছেন। চাঁদ শুধু নয়, মঙ্গল গ্রহ নিয়েও গবেষণার কাজ করছেন তারা। ভারতের এই নারী মহাকাশবিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের এখন Rocket women of India নামে ডাকছে মানুষ।
ভারতের স্পেস অর্গানাইজেশনের ১৬০০ কর্মীর শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগই নারী কর্মী। ১৯৮০ সাল থেকে নারীরা এখানে কাজ করছেন। এবং উল্লেখযোগ্য যে, এই নারীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যারা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসেছেন। তাদের একজন বি পি ডাকসয়নী, যিনি মঙ্গল গ্রহ নিয়ে গবেষণার কাজে মূল দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এসেছে কর্ণাটকের একটা ছোট্ট শহর থেকে। রিতু কারিধাল, নন্দিনী হরিনাথ, অনুরাধা টিকে, মৌমিতা দত্ত, মিনাল রোহিত, টেসি থমাস, এন ভালারমাঠি, ভি আর লালিথাম্বিকা- এরা সকলেই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছোট শহরে বড় হওয়া। তাতে তাদের মেধাকে থামিয়ে দেওয়া যায়নি। তাদের আটকেও রাখা সম্ভব হয়নি নারীর জন্য নির্ধারিত রান্নাঘরে। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মেধার মূল্যায়ন পেয়েছেন। কাজের সুযোগ পেয়ে সেটিকে নিজের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য এনে দিয়েছেন পুরো দেশকে।
নারীকে আটকে রাখার পুরুষতান্ত্রিক কূটকৌশলের অন্যতম হলো, নারী বিজ্ঞান বোঝে না। অংক বোঝে না। এই অংক ও বিজ্ঞান না বোঝার হাইপোথিসিসের মুখে এবারে সপাটে ও সশব্দে চড় মেরেছেন ভারতের রকেট নারীরা। পুরো বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন মেধাও দ্যুতি ও উজ্জ্বলতার চমক। এই চমক পৃথিবীকে নতুন আলোয় ভাসতে ও জেগে উঠতে সাহায্য করবে- এই বিশ্বাস রাখতে পারি।