রাজনীতিতে নারী শুধুই ‘মাধবীলতা’, ‘হাসিনা-ইন্দিরা’ কই?
বাপ্পাদিত্য বসু।। ১৯৯১ সাল থেকে মাঝে দুই বছর বাদ দিলে বাংলাদেশ নারীপ্রধান রাষ্ট্র হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ মেয়াদে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ওই বছরই খুব স্বল্প সময়ের জন্য তিনি দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০১ থেকে ২০০৬ আবার বেগম খালেদা জিয়া এবং ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে আবার শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এই ত্রিশ বছরের মধ্যে মাঝখানে কেবল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনানিয়ন্ত্রিত বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন একজন পুরুষ, ড. ফখরুদ্দিন আহমদ। এছাড়া ১৯৯৬ সালের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি হাবিবুর রহমান এবং ২০০১ সালের নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে বিচারপতি লতিফুর রহমান তিনমাস করে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর সাময়িক দায়িত্ব পালন করেন। আর ২০০৬ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। অর্থাৎ ত্রিশ বছরের মধ্যে সব মিলে পৌনে তিন বছর বাদে বাকি সবটা সময় বাংলাদেশের সর্বময় ক্ষমতা ছিলো নারীর হাতে।
এ ছাড়া গত ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত টানা সাত বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান আইনসভা তথা জাতীয় সংসদের স্পিকারের পদ অলঙ্কৃত করে আছেন আরেক গুণী নারী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আর টানা তিন মেয়াদে সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্বে আছেন বর্ষীয়ান নারী রাজনীতিক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। ২০০৯ সালে গঠিত শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মত অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন দুই নারীনেত্রী সাহারা খাতুন ও দিপু মনি। দিপু মনি বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মত আরো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। বেগম মতিয়া চৌধুরী তো চলতি মেয়াদ ছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের সবগুলো কেবিনেটের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কৃষিপ্রধান অর্থনীতি তথা সমাজের একটি রাষ্ট্রে এও বড় কম কথা নয়। এছাড়া শেখ হাসিনার গত কেবিনেটে জনপ্রশাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন ইসমাত আরা সাদেক। এর বাইরেও শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার সাতটি কেবিনেটে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও আরো নারীনেত্রীরা ছিলেন।
তবে সর্বশেষ তিনটি কেবিনেটে শতাংশের হিসাবে নারীর অবস্থানটি দেখে নেওয়া যাক। শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদের কেবিনেটে মোট ৪৮ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী, একজন পূর্ণ মন্ত্রী, দুইজন প্রতিমন্ত্রী, একজন উপমন্ত্রী নারী। অর্থাৎ ১০.৪২ শতাংশ। এর আগের ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও নারী সদস্যদের মধ্যে ছিলেন একজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং তিনজন প্রতিমন্ত্রী। ৫৩ সদস্যের মন্ত্রিসভায় নারী সদস্যের হার ছিলো ৯.৪৩ শতাংশ। তার আগের ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনজন পূর্ণ মন্ত্রী এবং দুইজন প্রতিমন্ত্রী মিলে ৬ জন নারী সদস্য ছিলেন। ৪৩ সদস্যের এ মন্ত্রিসভায় নারীর শতকরা হার ছিলো ১৩.৯৫ শতাংশ।
এবার দেখে নেওয়া যাক জাতীয় সংসদের চিত্র। চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে তিনশ’ সাধারণ আসনের মধ্যে ২৪ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য। এছাড়া বিগত দশম সংসদে ২৩ জন এবং নবম সংসদে ২০ জন নারী সদস্য সাধারণ আসনে সরাসরি নির্বাচিত হন। সাধারণ আসনে নির্বাচিত নারী সদস্যদের শতকরা হার বিবেচনায় নিলে নবম সংসদে তা ৬.৬৭ শতাংশ, দশম সংসদে ৭.৬৭ শতাংশ এবং চলতি একাদশ সংসদে ৮ শতাংশ। তবে এর বাইরেও ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রবর্তনকালে ১৫ জন, ১৯৭৮ সালে সামরিক ফরমানবলে ৩০ জন, ২০০৪ সালে সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৫ জন এবং ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫০ জন সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচনের বিধান করা হয়। কিন্তু কখনোই সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান করা হয়নি। ফলে এই সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যরা কখনোই যথাযথ রাজনৈতিক গুরুত্ব লাভ করতে সক্ষম হননি। কারণ বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনুসারে রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারক তথা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী দলীয় প্রধানের একক ইচ্ছাতেই তাদের মনোনয়ন জোটে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি তো বটেই, এমনকি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও এটি চরম সত্য। সামরিক শাসক হু.মু. এরশাদের আমলে তো সংসদের ৩০ জন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যকে গণমাধ্যমে ‘সংসদের ৩০ সেট অলঙ্কার’ বলেও ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করা হতো। আগে সংসদে বিল বা কোনো প্রস্তাব পাসের ক্ষেত্রে হ্যাঁ বা না ভোট দেওয়া ছিলো তাদের একমাত্র কাজ। এখন অবশ্য সংরক্ষিত ৫০ জন নারী সদস্যের জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যেহেতু তাদের জন্য নির্ধারিত এলাকায় একাধিক সাধারণ আসনের সদস্য জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত হন, তাই তাদের আসলে কোনো কাজের সুযোগ থাকে না। যদিও দেশের নারী আন্দোলনের সাথে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের তরফ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচনের বিধান প্রণয়নের জন্য বছরের পর বছর ধরে দাবি জানানো হচ্ছে।
তাহলে পরিসংখ্যান বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, বিগত ৩০ বছরের মধ্যে ২৮ বছরই বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি নারীপ্রধান শাসিত রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হলেও কার্যত সরকারের মন্ত্রিসভায় ১৫ শতাংশও নারীর অংশগ্রহণ ছিলো না। অপরদিকে আইনসভা তথা সংসদের নির্বাচিত আসন বিবেচনায় নিলে ৮ শতাংশের উপরে ওঠেনি। প্রধান নির্বাহীর পদটি ২৮ বছর নারীর হাতে থাকলেও জাতীয় রাজনীতির প্রতিনিধিত্বশীল পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ গাণিতিক বিচারে খুব একটা বেশি কিছু হয়ে ওঠেনি। যদিও বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী।
এবার আসি রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নারীর অংশগ্রহণের চিত্রে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য ১৯ জন, ২৪.৬৮%। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর ১৯ জনের মধ্যে ৪ জন (২১.০৫%) নারী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬৬ জন নারী। শতকরা হিসাবে ১৩.১৫%। আর তাদের স্থায়ী কমিটির ১৯ জনের মধ্যে ২ জন (১০.৫৩%) নারী। একক সংখ্যার বিচারে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্যসংখ্যায় বিএনপি এগিয়ে থাকলেও শতকরা হিসাবে আওয়ামী লীগ অনেকখানি এগিয়ে। আরো চারটি নিবন্ধিত দলের পরিসংখ্যান উল্লেখ করছি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৯১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সংখ্যা ৮ জন (৮.৭৯%)। তাদের পলিটব্যুরোর ১৫ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন (৬.৬৭%) নারী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র ১৩৫ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি। এর মধ্যে ১১.১১% হিসাবে ১৫ জন নারী সদস্য। আর স্থায়ী কমিটির ২১ জনের মধ্যে ৯.৫২% হারে নারী সদস্য ২ জন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী আছেন ৭ জন, যেখানে মোট সদস্য সংখ্যা ৪৫। সে হিসেবে শতকরা হার ১৫.৫৬%। আর সভাপতিমণ্ডলীর ১১ জনের মধ্যে নারী মাত্র ১ জন (৯.০৯%)। অপরদিকে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোনো নারী নেই, কোনোকালেও ছিলো না।
গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে সকল স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩% নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলেরই তা নেই। সময় বাকি আছে দেড় বছর। নিবন্ধিত দলের মধ্যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ, তাদেরই শতাংশের হিসাবে ২৪.৬৮%। আর ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি বেগম জুবেদা কাদের চৌধুরী- এই পাঁচজন মাত্র নারী। আর কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ দুই পদের কোথাও কোনো নারী আসীন হতে পারেননি।
ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭২ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী কখনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে পারেননি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলেরও একই অবস্থা, সংগঠনটির বয়স ৪১ বছর। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ৬৮ বছরের ইতিহাসে তিনজন নারীকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে- মতিয়া চৌধুরী, লুনা নূর ও লাকি আক্তার। এদের মধ্যে লাকি আক্তার আবার একমাত্র নারী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাসদ ছাত্রলীগের ইতিহাসও ৭২ বছরের। এ যাবৎ নারী সভাপতি একজন- শিরীন আখতার। আর বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর ৪০ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রধান দুই পদে আসতে পারেননি। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ৩৬ বছরের ইতিহাসেও কোনো নারী প্রধান নেতৃত্বে আসেননি। ছাত্র ফ্রন্টের আরেক অংশে (বাসদ-মার্কসবাদী) কেবলমাত্র নাঈমা খালেদ মনিকা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে আজ পর্যন্ত কোনো নারী নির্বাচিত হননি। এসব ছাত্র-যুব সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বা অন্যান্য স্তরের কোনো কমিটিতেই নারীর শতকরা হার ১০-১৫ শতাংশের উপরে হবে না।
স্থানীয় সরকার পরিষদগুলোতে অবশ্য নারীর একটা বিরাট অংশগ্রহণ আছে। উপজেলা পরিষদের একটি ভাইস চেয়ারম্যান পদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ৩টি করে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে সরাসরি নির্বাচন করে আসতে হয় নারীদের। সিটি করপোরেশনেও মোট ওয়ার্ড সংখ্যার অতিরিক্ত এক-তৃতীয়াংশ কাউন্সিলর পদ নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকে। উপজেলা পরিষদ আইন অনুসারে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দুই ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে নারী ভাইস চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনে অগ্রাধিকার লাভ করেন। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল মেয়র বা প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কমপক্ষে একজন নারী কাউন্সিলর বা সদস্য বাধ্যতামূলক রাখার বিধান রয়েছে। এসব নিঃসন্দেহে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিরাট অগ্রগতি। কিন্তু সংরক্ষিত কাউন্সিলর বা সদস্যপদের বাইরে সাধারণ পদগুলোতে এমনকি মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে নারীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের হার খুব কম, নেই বললেই চলে। ১২টি সিটি করপোরেশনের মধ্যে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটিতে নারী প্রার্থীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়, এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয়ী হন। আর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল সিটি করপোরেশনে মনীষা চক্রবর্তীকে মনোনীত করে প্রার্থী হিসেবে। এর বাইরে আর কোনো দল আজ পর্যন্ত কোনো সিটিতে কোনো নারীকে মেয়র পদে প্রার্থী করেনি। উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের ভিতরেও নারীর সংখ্যা খুঁজতে হবে ঘাম ঝরিয়ে। শতকরা ৫ ভাগও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ, গত তিন দশকে দেশের প্রধান নির্বাহী ক্ষমতা নারীর হাতে থাকলেও জাতীয় বা স্থানীয় সরকার বা রাজনৈতিক ফোরামগুলোতে সংরক্ষিত আসনের বাইরে নারীর অংশগ্রহণ খুব একটা নেই।
কেন নেই? কেন নারী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ করছে? দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত বছর বয়সে শিক্ষাদীক্ষায় এখন নারীর অংশগ্রহণ সমানে সমান। ফলাফলও কখনও কখনও তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে ভালো। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে নারী তার নিজের যোগ্যতায় উপযুক্ত জায়গা করে নিচ্ছে। কিন্তু রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ এখনও অনেক কম। কেবল মিছিলের অগ্রভাগে শোভাবর্ধনের কাজে নারীকে ‘ব্যবহার’ করার বিনিময়ে কিছু আলঙ্কারিক পদ নারীর জন্য এখনও সংরক্ষিত।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নারীর রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনো সর্বজন-সমাদৃত নয়। শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া মোট ৭ বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসলেও তার পিছনেও ইতিবাচক বা নেতিবাচক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বাস্তবতা বিদ্যমান। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে সে বাস্তবতা এখনও নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীনেতৃত্ব এখনও অনেকটাই পারিবারিক উত্তরাধিকারের ধারাবাহিকতা মাত্র। একদিকে নারীরা রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন, অন্যদিকে তার যোগ্যতার যথাযথ মূল্যায়নও হয় না।
অনেক নারীই আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, কিন্তু তাদের নেতৃত্বে যাবার হার অনেক কম। আর দশটা কাজে যদি নারী তার যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন, তবে রাজনীতিতে তারা নেতৃত্বের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠছেন না- এমনটা ভাবা বোকামি। বরং বিভিন্নভাবে তাদের নেতৃত্বে যাবার পথ রুদ্ধ করা হচ্ছে- এটাই হলো বাস্তবতা। রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রও নারীর প্রতিবন্ধকতার অন্যতম একটি কারণ। একজন সংসদ সদস্য বা অন্যান্য পদাধিকারী ব্যক্তি মারা গেলে তার স্ত্রী বা সন্তান হিসেবে যখন ওই পরিবারের কোনোদিন রাজনীতি না করা কাউকে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়, তখন যে নারীরা এতোদিন ধরে রাজনীতি করছেন, তাদের আগ্রহ হারিয়ে যায়। এ কাজটা কেবল আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতেই নয়, এমনকি বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোতেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনগুলোতে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের পারিবারিক উত্তরাধিকারী নারীদেরকে বসানো হয়েছে- এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি পাওয়া যাবে।
সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন এগিয়ে যাওয়া নারীদের পুরুষতন্ত্রের কটুকথা ও কটু আচরণের শিকার হতে হয়, রাজনীতিতেও তার ব্যতিক্রম ঘটে না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক কর্মি নারীরা আরো বেশি নোংরা আক্রমণের শিকার হন। কোনো নারী কর্মি যদি রাজনীতিতে একটু এগোতে থাকেন, তাকে প্রথম আক্রমণটাই করা হয় চরিত্র হননের চেষ্টার মাধ্যমে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া পুরুষেরা এমনকি অন্য নারীকর্মিদেরও একটা অংশ শুরুতেই বলে দেবে- ও তো অমুক নেতার সাথে শোয়। আমাদের দেশে নারীকে পিছন থেকে টেনে ধরার ক্ষেত্রে প্রথম শানিত অস্ত্রই হলো মুখের কথায় শুইয়ে দেওয়া। আবার কোনো পুরুষ কর্মিকেও ঘায়েল করার বড় অস্ত্র হলো কোনো নারী কর্মি কিংবা তার ব্যক্তিগত বন্ধুর সাথে বিছানায় যাওয়ার গল্প রটিয়ে দেওয়া। শাহবাগ আন্দোলনের সময় দেখা গেলো, ওই আন্দোলনের অগ্রবর্তী কর্মি লাকি আক্তারকে প্রতিপক্ষরা চরিত্রদোষে দুষ্ট করলো। কেবল লাকিই নয়, অপরাপর নারী কর্মিদেরকেও চরিত্রদোষে দুষ্ট করার প্রবণতা লক্ষ করা গেলো। এক দেশখ্যাত সাহিত্যিক তো শাহবাগের নারী কর্মিদের এহেন চরিত্রদোষ কল্পনা করে গল্পও লিখলেন, সে গল্প আবার প্রকাশ করলো দেশখ্যাত এক গণমাধ্যম। এই গল্পকার এবং পত্রিকা সম্পাদক উভয়েই কিন্তু দেশের প্রগতিশীলতার ধারক বলে বহুল পরিচিত। বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর কন্যা ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধু নিপুণ রায় চৌধুরী রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক সূত্র ধরেই। কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে যখন তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন, তখনই প্রতিপক্ষের তরফ থেকে তার উপর প্রথম আঘাত এলো চরিত্রগত। মাঠে যখন বিএনপির কোনো নেতাই নামতে সাহস পান না, তখন নিপুণ শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে পোস্টার লাগাতে বের হলেন। শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজলে পেটের একাংশ বেরিয়ে থাকে, এটা বাঙালি নারীর চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। আমাদের ঘরে আমাদের মা, স্ত্রী, বোনদের প্রায়শই এমন বেশে কাজ করতে দেখা যায়, ক্ষেতে বা কারখানায় কাজ করা শাড়ি পরিহিতা নারীরাও কোমরে আঁচল গুঁজে পেট বের করেই কাজ করেন। কিন্তু নিপুণের ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো কটু মন্তব্য-সহকারে। বিএনপি সুপ্রিমো ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবন ও চরিত্র নিয়েও নিম্নরুচির রসালো আলোচনা প্রতিপক্ষ তো বটেই, খোদ নিজের দলের মধ্যেও চলে হরদম। আওয়ামী লীগেরও যেসব নারীনেত্রী এগিয়ে যান নিজের গুণে ও যোগ্যতায়, তাদের সম্পর্কেও দ্রুত বাজারে রটে যায়- ও তো অমুক নেতা বা অমুক মন্ত্রীর রক্ষিতা কিংবা ওর তো ঘরের ঠিক নেই। ছাত্রলীগের দুই সাবেক শীর্ষ নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী দুর্নীতির অভিযোগে নিজ দল থেকে অপসারিত হলেন। তাদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি নিয়ে আমরা হাজারো শেল ছুড়তে পারি তাদের দিকে। কিন্তু এর সাথে ওই দু’জনকে দ্রুত ঘায়েল করার লক্ষ্যে তাদের ব্যক্তিগত জীবনের ছবি প্রকাশ করে দেওয়া হলো। সেখানেও অস্ত্র করা হলো নারীকে। খালেদা জিয়া বা নিপুণ বা লাকি বা কোনো আওয়ামী লীগ নেত্রীর যে কারো সাথেই আমার হাজারো রাজনৈতিক বিরোধ থাকতে পারে, সেসব বিরোধ আমি রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করবো। কিন্তু অপর দলের প্রতিপক্ষ কিংবা নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী নারীকে কেবল নারী হিসেবে যেসব বাজে অস্ত্রে ঘায়েল করা হয়, তা করার কোনো অধিকার আমার নেই, থাকতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, সেসব অস্ত্রই ব্যবহার করে রাজনীতিতে আমরা নারীর অগ্রযাত্রাকে ঠেকিয়ে রাখি। আবার পুরুষ প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বীকেও ঘায়েল করার ক্ষেত্রে নারী অস্ত্রের ব্যবহার নিম্ন রুচির ও বড় ধরনের অপরাধ বৈ কিছু না।
নারীরা যখন সংরক্ষিত আসনের বাইরে সাধারণ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে নামেন, তখনও তাদের উপর সেই পুরুষতান্ত্রিক আক্রমণই ধেয়ে আসে। শুরুতেই প্রচারটা এমনভাবে আসে যেন ওই যে সংরক্ষিত নারী আসন- ওটাই তো নারীর রাজনীতির একমাত্র গণ্ডি, সাধারণ আসন তো পুরুষের। বাসে বা গণপরিবহণে সংরক্ষিত আসনের বাইরে নারীরা বসলেই যেমন কটু কথার তীর ছুটে আসে, এখানেও ব্যাপারটা সেরকম। এ কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অনেক প্রার্থীই হাস্যকর প্রচারণা চালালেও কিংবা সিটি করপোরেশনের মশা মারতে মেয়র-কাউন্সিলর, এমনকি মন্ত্রীদের অনেকেই হাস্যকরভাবে কামান দাগলেও ফেসবুকে ট্রলের শিকার হন একমাত্র ডেইজী সারোয়ার। কারণ ডেইজী সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
রাজনৈতিক নারী কর্মিদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তাও নারীর পিছিয়ে পড়ার একটা বড় কারণ। বিষয়টা একেবারেই নতুন প্রসঙ্গ বলে হাস্যকর শোনাতে পারে। কিন্তু আসলে এটা একজন অগ্রসর নারী রাজনীতিকের অভিজ্ঞতা থেকে আমার জানা। আমি তখন ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক, নীলক্ষেতের প্রেসপাড়ায় আমাদের সংগঠনের দপ্তর ছিলো। প্রেসপাড়ায় কোনো একটা কাজে এসেছিলেন শ্রদ্ধেয় শিরীন আখতার। বর্তমানে জাসদের সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য। তাকে দেখতে পেয়ে ছাত্র মৈত্রী অফিসে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালাম। তিনি এলেন। অফিসে ঢুকেই তিনি আমাকে প্রথম যে প্রশ্নটি করলেন, তার জন্য আমি সে মুহূর্তে প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি জানতে চাইলেন- “তোমাদের অফিসের টয়লেটের অবস্থা কী?” বললাম- তথৈবচ। তিনি বললেন- “মেয়েরা তোমাদের সংগঠনের টিকতে পারবে না সহজে। কারণ টয়লেট চেপে রাখতে রাখতে মেয়েদের নানাপ্রকার স্বাস্থ্যগত সঙ্কট দেখা দেয়। এ সঙ্কট নিয়ে মেয়েরা তোমাদের দল করবে কেন? বিষয়টা কেবল তোমাদের জন্য নয়, সকল দলের ক্ষেত্রে এমনকি আমার দলের ক্ষেত্রেও সমান সত্য।” কেবল দলের দপ্তরেই নয়, বাইরেও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নারী রাজনৈতিক কর্মিরা এ ধরনের স্বাস্থ্য সঙ্কটে ভোগেন প্রতিদিন।
আবার রাজনৈতিক দল বা সংগঠনে ক্ষমতাধর পুরুষ নেতারা নারীকর্মিদের নানাভাবে ব্যবহারও করেন। যে অল্প সংখ্যক মেয়েরা রাজনীতি করতে আসে, তাদেরকে বাজেভাবে ব্যবহার করতেও তাদের বাধে না। এমন বহু অভিযোগ প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ভেসে বেড়ায়। এসব কারণেও নারী রাজনৈতিক অঙ্গনে তার নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এই নিরাপত্তাহীনতা আর মর্যাদাহানীর ভয়ই মূলত নারীর রাজনীতিতে আসার প্রধান বাধা। আবার যারা আসছেন, তাদেরও নেতৃত্বে আসার প্রতিবন্ধকতাগুলো অন্য নারীদের রাজনীতিতে আসতে নিরুৎসাহিত করছে।
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমস্ত রাজনৈতিক সংগ্রামের নেপথ্যে বড় অনুপ্রেরণার নাম বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। আরো অনেক রাজনৈতিক নেতা তাদের স্ত্রীদের নেপথ্য অবদানের কথা বলেন বিভিন্ন সময়ে। ঠিক যেন সমরেশ মজুমদারের বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাস ‘কালবেলা’র অনিমেষের নেপথ্য শক্তি মাধবীলতা এরা একেকজন। কিন্তু এরা কেউ ‘হাসিনা’ কিংবা ‘ইন্দিরা’ হয়ে উঠতে পারেননি।
তবে আশার কথা হলো, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার সংরক্ষিত নারী আসনে যে ৫০ জনকে সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছেন, তাদের ভিতর পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে হঠাৎ রাজনীতিকদের সংখ্যা অনেক কম, বেশিরভাগই জাতীয় পর্যায়ে অপরিচিতি মুখ হলেও একেবারে তৃণমূল থেকে মাঠে ময়দানে রাজনীতি চর্চা করে আসা নারী। তার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতেও নারী সংখ্যানুপাত বাড়ছে। কিন্তু এক আওয়ামী লীগ বা এক শেখ হাসিনা পারলে তো হবে না। অন্যদেরও এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। প্রগতিশীলতা ও নারীর অধিকারের প্রশ্নে সর্বোচ্চ উচ্চকিত যারা সেই বামপন্থীদের এগিয়ে আসা দরকার সর্বাগ্রে। কিন্তু তারাই বরং আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র চাইতে অনেকখানি পিছিয়ে। উল্টো বামপন্থী দলের যে ক’জন পরীক্ষিত নারী কর্মি আছেন, তাদের পথ রুদ্ধ করে যখন সেখানেও নেতার স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য মনোনীত করা হয়, তখন ওই হাতে গোনা কর্মিরাও আলো হারিয়ে ফেলেন।
অগ্রসর নারী কর্মিরাই যখন আলো হারান, তখন তারা আর অন্যদের আলো দেখাবেন কীভাবে? তখন নারীর অগ্রগতি-প্রগতি এসব স্লোগান প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোরও কেবল কাগুজে স্লোগান হিসেবে রয়ে যাবে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে ২০২১ সালের মধ্যে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব কেবল স্বপ্নই রয়ে যাবে। রাজনীতিতে নারীরা ‘হাসিনা’-‘ইন্দিরা’ হতে পারবেন না, রয়ে যাবেন কেবল ‘অনিমেষ’দের ঘরের ‘মাধবীলতা’ হয়ে। কিংবা বড়জোড় মিছিলের অগ্রভাগের শোভাবর্ধক হয়ে। এই যদি রাজনীতিতে নারীকর্মিদের নিয়ত পরিণতি হয়, তাহলে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া যতোই ২৮ কিংবা ৩৮ কিংবা ৪৮ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকুন না কেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথটা অনেক দূরে দিয়েই চলবে।
বাপ্পাদিত্য বসু: প্রাক্তন ছাত্রনেতা; সাধারণ সম্পাদক, ইয়ুথ ফর ডেমোক্রেসি এন্ড ডেভেলপমেন্ট
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব মতামত]