November 22, 2024
নারী'র খবরবিদেশফিচার ২

কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে চাইছে ভারত

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। ভারতের কর্পোরেট কোম্পানিগুলো মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা পদে (এইচআর) নারী প্রধান নিয়োগের উপর জোর দিয়েছে। তবে দেশটিতে চাহিদার বিপরীতে নারী কর্মকর্তার অপ্রতুলতা ভাবিয়ে তুলেছে কোম্পানিগুলোকে। সংস্থাগুলোর মতে, এরকম পদে নেতৃত্ব দিতে যোগ্যতা রয়েছে এমন নারীর সংখ্যা দেশটিতে সীমিত। ফলে কোম্পানিগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থার মধ্য থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মুম্বাইভিত্তিক গোদরেজ গ্রুপ এমন একটি কর্মসূচী শুরু করেছে। যেখানে কোম্পানিটির উচ্চ সম্ভাবনাময় ৩২ জন ম্যানেজারকে এক বছর ধরে মেন্টরিং করা হবে। এসব ম্যানেজারদের গোদরেজ কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেডের চেয়ারপার্সন নিসাবা গোদরেজসহ অন্যান্য সফল নারী কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে গড়ে তুলবেন। পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে কৌশল, আবেগ, সামাজিক সচেতনতা ও প্রভাব বিস্তারের ওপর।

গোদরেজ ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস কোম্পানি গ্রুপের প্রধান শেফালি কোহলি বলেন, কোম্পানির মাঝারি স্তরে নারী কর্মকর্তাদের সংকট রয়েছে। আমরা ভেবেছি কোম্পানিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াতে বাইরে থেকে নারী নিয়োগ না করে নিজের প্রতিষ্ঠানের নিচের স্তরের প্রতিভাবান নারীদের সহযোগিতা দিয়ে বড় দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করব।

প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক ব্যবস্থাপক স্তরে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ নারী কর্মী প্রতিনিধিত্ব করলেও কোম্পানির নেতৃত্বদানের পর্যায়ে মাত্র ১৭ শতাংশের মত নারী রয়েছেন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পর্যায়ে নারী কর্মকর্তা সঙ্কটের জন্য নারী কর্মী সংগ্রহের পাইপলাইনের ত্রুটিকে চিহ্নিত করেন শেফালি কোহলি। তিনি বলেন, বেশিরভাগ গবেষণা আমাদের বলছে, চাকরিতে নারীরা বেশি দিন থাকতে পারেন না। তারা বাড়ির পাশেই চাকরি করতে চান ফলে তাদের চাকরিতে ধরে রাখা কঠিন।

অনেক নারী আবার নেটওয়ার্কিং ও ম্যানেজিং রাজনীতির কারণে কর্মক্ষেত্রে সংকটে পড়েন। শেফালি কোহলি বলেন, এখানে প্রত্যয় বনাম কর্মদক্ষতার একটি ব্যাপার রয়েছে। ফলে পুরুষরা ৬০ শতাংশ প্রস্তুতি নিয়েও কাজে বেশি নিমজ্জিত হতে পারেন, কিন্তু নারীরা ৮০ শতাংশ প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও এখানে পিছিয়ে পড়ছেন।

একই রকম এক কর্মসূচির শুরু করেছে ভারতের পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রি। নারী নেতৃত্ব তৈরি করতে এসপি জেইন ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ (এসপিজেআইএমআর)- এর সাহায্য নিতে আলোচনা করছে এ শিল্পগোষ্ঠী। পিডিলাইট ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা রাহুল সিনহা বলেন, কোম্পানির মাঝারি পর্যায়ের নারী কর্মীদের সাহায্য করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদেরকে ক্যারিয়ার ও নেতৃত্বের পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার জন্য তৈরি করতে কোম্পানি কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে।

কয়েক বছর আগে মাহিন্দ্রা গ্রুপ এমন কর্মসূচী শুরু করে। এ শিল্পগোষ্ঠী পাঁচ বছর ধরে অন্তত ৩০০ নারী কর্মীকে মেন্টরিং করার কর্মসূচী হাতে নেয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটির অনেক নারী মাঝারি স্তর থেকে নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়েও আসীন হয়েছে।

মাহিন্দ্রা ইউনিভার্সিটি ও এসপি জেইন ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ- এর যৌথ উদ্যোগে শ্রেণিকক্ষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নারী কর্মকর্তাদের। এসপিজেআইএমআর এর মার্কেটিংয়ের অধ্যাপক আশিতা আগারওয়াল এ ব্যাপারে বলেন, আমাদের স্বীকার করতে হবে কর্মক্ষেত্রে সচেতন ও অবচেতনে কিছু পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। এসব উদ্যোগ নারীদেরকে তাদের সক্ষমতার ব্যাপারে বুঝতে সাহায্য করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের নিজস্ব স্টাইলে নেতৃত্ব ও পরিচালনা করার ব্যাপারে তাদের অভ্যস্ত করে তোলা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নারীকে পুরুষ নেতাদের মত নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের নিজস্ব একটি স্টাইল রয়েছে।

– টাইমস অব ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন