May 16, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

আমি আমার চোখে অপরূপা

স্বরলিপি শিল্পী।। আমি গর্বিত নারী। আমি ঝরে গেলে অনেক আগেই ঝরে যেতে পারতাম।আমি নিজেকে ঝরে যেতে দেইনি। কারণ আমি ইউনিক। আমি নিজেকে ভালোবাসি। কারণ আমি ঝরে গেলে কেউ কেউ জিতে যাবে।

আমার ছোটবেলার পরিবেশটা অনেক বিষাক্ত ছিল আমার জন্য। আমার আশেপাশের মানুষজন ছিল আমার জন্য এক একটা বিষ। আমি যখন একটু বড় হই, ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন থেকেই আমার জন্য পাত্র খুঁজছে আমার প্রতিবেশীরা। কেউ কেউ অনেক বয়স্ক, বিদেশ ফেরত পাত্র আনতে থাকে। এরা আমার পরিচিত কাকা, খালা, আপুরা।

কিন্তু আমি খুব জেদি জন্মগতভাবেই। আমার এক কথা- আমি পড়ালেখা করবো। ছোটবেলা থেকেই আমার চিন্তা অন্যদের চেয়ে আলাদা। আমার আশেপাশের কাকা খালুরা শিক্ষিত হয়ে অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে করেছিল বলেই এদের ধ্যানধারণা ছিল সেকেলে। পুরাতন ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারে নাই কখনও।

যখন আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী তখন আমার ঘন কালো চুলের প্রেমে পড়ে রবি নামের এক সুদর্শন যুবক। আমার ক্লাসমেটের বড় ভাই। রাজশাহী মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে ইন্টার্নি করছে। পরিচয়ের এক পর্যায়ে জানতে পারি সে বিদেশ যাবে উচ্চশিক্ষার জন্য। খুব ভালো চিন্তা। সে আমাদের বাসায় আসে। সব পছন্দ করে। নির্ভেজাল পরিবার। ঢাকায় বাড়ি। সে আমাদের সব কিছুই পছন্দ করলো। সাথে পাঁচ লক্ষ টাকা চাইলো বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য। আমি ‘না’ বলে দিলাম। রবি শিক্ষিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু অন্ধ। কই আমি তো হাত কাটি নাই ঐ সুদর্শন ছেলের জন্য। ব্যথ্যা দেই নাই আমি নিজেকে। আমি তো ড্রাগ অ্যাডিকটেড হই নাই। নিজেকে ভালেবাসলে জীবনে কতো রবির আলো দেবে! এর জন্য আমার জীবন শেষ করবো কেন? রবি থেমে থাকেনি। আমার পরিচিত এক মেয়েকে বিয়ে করেছে। শুনেছি রবির বাসার গৃহকর্মী রবির নামে নির্যাতন মামলা দিয়েছে।

নিজেকে ঝরে যেতে দেই নাই। ঝরে যেতে দেব না। কারো কথা শুনে আমি কেন নিজের ক্ষতি করবো? নিজেকে ভালোবাসি। নিজেকে নিজেই খুব মুল্যবান জিনিস কিনে উপহার দেই। আমি আমার নিজের জন্যই কপালে টিপ দিই। আমি প্যান্ট পরে টিপ পরবো নাকি শাড়ি পরে টিপ পরবো- আমার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যপার। কারো চোখে আমি মোটা, কেউ কেউ বলে আমি কালো। হু কেয়ার্স? আমি আমার চোখে অপরূপা। যতদিন আমি আমার কাছে সুন্দর থাকবো, ততোদিন আমি সুন্দরভাবে সমাজে বেঁচে থাকবো। যার মস্তিস্ক দুইশত বছর আগের চিন্তা লালন করে তার কথায় আমার মনে কেন ব্যথা দেব?

নিজেকে ভালোবেসে সুস্থ রাখলেই সমাজ সুস্থ হয়ে গড়ে উঠবে। কারণ একজন সুস্থ নারীই জন্ম দিতে পারে আরেকটি সুস্থ জীবনের।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]