May 16, 2024
সাহিত্যফিচার ৩বই নিয়ে আলাপ

ধর্ম, যুদ্ধ, বর্ণবাদ এবং আদিচির গদ্যে নাইজেরিয়ান নারী

উম্মে ফারহানা।। চিমামান্দা ন’গোজি আদিচি উপন্যাস লিখেছেন তিনখানা, আর গল্প সংকলন বেরিয়েছে একটি। কিন্তু প্রায় সবগুলো বই-ই জিতেছে বিভিন্ন পুরস্কার আর পেয়েছে সমালোচকদের প্রশংসা। প্রথম উপন্যাসপার্পল হিবিস্কাস  প্রকাশিত হবার সময় তার বয়স ছিল মোটে পঁচিশ বছর, কিন্তু কমন ওয়েলথ রাইটার’স প্রাইজ আর হার্টসন রাইট লিগ্যাসি অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় সেই বইটি। এর পরে লেখেন হাফ অফ এ ইয়েলো সান, বায়াফ্রান যুদ্ধ নিয়ে লেখা এক মহাকাব্য যেন সেটি। অরেঞ্জ প্রাইজ ফর ফিকশন আর অ্যানিসফিল্ড- উলফ বুক অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এই বইয়ের জন্য। দ্য থিং অ্যারাউন্ড ইয়োর নেক  শীর্ষক সংকলনের একটি ছোটগল্প ‘দি আমেরিকান অ্যাম্বেসি’ জেতে ও’হেনরি পুরষ্কার। শেষ উপন্যাস আমেরিকানা ও সমাদৃত হয়েছে পাঠক সমালোচক মহলে। দু’টি নন ফিকশন প্রকাশনা আছে তাঁর, টেড টকে দেওয়া বক্তৃতার লিখিত রূপ উই শ্যুড অল বি ফেমিনিস্টস এবং ডিয়ার ইজেওয়ালা অর আ ফেমিনিস্ট মেনিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশন্স।

আদিচি একজন স্বঘোষিত নারীবাদী। নিজেকে তিনি ‘একজন সুখি আফ্রিকান নারীবাদী’ হিসেবে দাবি করেন। নারীবাদীদের অসুখি অতৃপ্ত নারী হিসেবে এবং নারীবাদ ব্যাপারটিকে আফ্রিকান সংস্কৃতির বিরুদ্ধে একটি পশ্চিমা ধারণা হিসেবে ধরে নেওয়ার বিপরীতে তাঁর এই অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন টেড টকের বক্তৃতায়। এই রচনায় অবশ্য তাঁর ফিকশন, বিশেষত উপন্যাসগুলো নিয়েই আলাপ করবো।

সাহিত্য পড়াবার সময় শ্রেণিকক্ষে সকল ধরণের সাহিত্যকর্মের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। নারীবাদ শব্দের জন্মই হয়নি যে আমলে সেই সময়ে লেখা সাহিত্যেরও নারীবাদী পাঠ করা হয়, প্রচণ্ড পুরুষতান্ত্রিক লেখাকেও নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে বলে দেওয়া হয় লেখক ঠিক কোন কোন জায়গায় কী কী ভাবে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব প্রকাশ করেছেন, যেভাবে মার্ক্সবাদ বা অস্তিত্ববাদ সাহিত্য বিচারের জন্য একেকটি তত্ত্ব, নারীবাদও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আদিচির লেখায় তাঁর নারীবাদী অবস্থান বেশ পরিষ্কার।

এখন তর্ক আসতে পারে, কোন বিশেষ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে শিল্প সৃষ্টি করা যায় কি না। তত্ত্ব দ্বারা তাড়িত হয়ে লিখলে পরে সেই লেখার শিল্পমান অক্ষুণ্ণ থাকে কি না। আদিচির তিন উপন্যাসে বিভিন্ন বয়স, শ্রেণি, সামাজিক অবস্থানের নারীদের যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে তাঁর নারীবাদী অবস্থান স্পষ্ট হলেও শিল্পমানের জায়গায় কিংবা আখ্যানের সতস্ফূর্ততায় কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি বলে আমার বিশ্বাস। উপন্যাসগুলো নিয়ে সংক্ষেপে একটু বলি তাহলে।

পার্পল হিবিস্কাস

পার্পল হিবিস্কাসের মূল চরিত্র পনের বছর বয়সী কিশোরী মেয়ে কাম্বিলি আর তার সতের বছরের ভাই জাজা। তারা জাতিতে ইগবো হলেও ধর্মান্তরিত। তাদের ‘পাপা’ ইউজিন এবং ফুফু ইফেওমা মিশনারি স্কুলে লেখাপড়া করতে গিয়ে ক্যাথলিক ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন, কিন্তু তাদের পিতামহ এখনো সনাতন ধর্মেই রয়ে গেছেন। ইউজিন কট্টর খ্রিষ্টান, বাপের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না। ইফেওমা খ্রিষ্টান হলেও কট্টর নন, তিনি মনে করেন পিতা ভিন্ন ধর্মের হলেও তিনি পিতাই, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান এবং ভালবাসা দিতে হবে, তাতে ধর্মীয় কোন বাধা নেই। কাম্বিলি আর জাজা কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বড় হয়, রুটিন ধরে লেখাপড়া করে, রেডিও শোনে বা টিভি দেখে। ক্লাসে ফার্স্টের বদলে সেকেন্ড হবার কোন উপায় নেই তাদের। ফুফু ইফেওমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বেড়াতে গিয়ে কাম্বিলি আর জাজা দেখে জীবন কত মুক্ত হতে পারে কত আনন্দের হতে পারে। কাম্বিলি সেখানে ফাদার আমাদি নামে এক ধর্মযাজকের প্রেমে পড়ে যায়।

এই উপন্যাসে উচ্চ মধ্যবিত্ত নাইজেরিয়ান কিশোরীর দৃষ্টিতে দেখা যায় ইগবো সমাজকে। পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইউজিন রুচিতে উন্নত হয়েছেন বলে মনে হয়, আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায় যে তিনি লোকের বহু প্ররোচনায়ও দ্বিতীয় বিবাহ করেননি। কিন্তু নিয়মিত স্ত্রীকে প্রহার করেন। সামান্য কারণে সন্তানদেরকেও দেন ভয়ংকর শাস্তি। ইফেওমার বাড়িতে একই ছাদের নিচে একজন ‘প্যাগানে’র সঙ্গে থাকার ‘অপরাধে’ কাম্বিলি আর জাজার পায়ে ফুটন্ত পানি ঢেলে দেন তিনি। সেই প্যাগান আর কেউ নয়, ইউজিনেরই বাবা, কাম্বিলিদের দাদা। গ্রামের সকল মানুষকে অর্থ সাহায্য করলেও নিজের বাবার সঙ্গে তিনি দেখাই করেন না, বাবা খেতে পেলেন কি না সেটি জানার আগ্রহ পর্যন্ত তাঁর নেই। বাবা যদি ধর্মান্তরিত হন শুধুমাত্র তাহলেই তিনি সন্তান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

খ্রিষ্টধর্মের এই চরমপন্থী রূপের পাশাপাশি দেখা যায় আরেকটি রূপ। আন্টি ইফেওমা আর ফাদার আমাদির কাছে ঈশ্বর কিন্তু এমন ভয়ংকর নয়। ইগবো ভাষায় গান গেয়েও প্রার্থনা করা যায় তাঁর কাছে। কিন্তু কাম্বিলি সারাজীবন দেখে এসেছে ধর্মের একটি ভয়ংকর চেহারা। পাপার সাদা পর্দা আর সাদা কার্পেটে ঢাকা ঘরে কখনো গেলে তার মনে হতো স্বর্গ হয়তো এরকম সাদা, ঈশ্বর হয়তো পাপার মতন কেউ। পরমপিতা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন যেন কাম্বিলির জৈবিক পিতা ইউজিন। ঈশ্বর যে নিষ্ঠুর আর স্বৈরাচারী না হয়ে হাসিখুশি আর ভালোবাসায় ভরা কেউ হতে পারেন সেই জ্ঞানই কাম্বিলির কোনদিন হয়নি। মাকেও সে দেখেছে চুপচাপ তার পাপার মন জুগিয়ে চলতে। বাড়ির কেউ কখনো সাহস করেনি পাপার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা করতে। একদিন এই ঘটনার ব্যতিক্রম হয়। জাজা যখন পাপার মুখের উপর বলে কমিউনিয়নে যেতে তার ভালো লাগে না, পাপা হাতের কাছে থাকা ভারি মিসালটি ছুঁড়ে মারেন জাজার দিকে। কাম্বিলি আর জাজার চারপাশে সবকিছু ভেঙ্গে পড়তে থাকে সেদিন থেকেই।

হাফ অফ আ ইয়েলো সান

ওলানা আর কাইনেনে দুই যমজ বোন। তাদের বাবা সফল ব্যবসায়ী। কাইনেনে বাবার ব্যবসা দেখে, ওলানা পেশায় শিক্ষক। হাউসা প্রেমিক মুহম্মদের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে ওলানা চলে যায় ন্নসুকাতে, ওডেনিগবোর সঙ্গে পরিচয়ের পরে ন্নসুকা বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতার চাকরি নেয় সে। ওডেনিগবোর মা একবার চরম অপমান আর গালিগালাজ করে ওলানাকে। শুধু তাই নয়, এই মেয়ের ‘জাদু’ থেকে ছেলেকে মুক্ত করতে সে নিয়ে আসে গ্রামের আরেক মেয়েকে, পাম ওয়াইন খাইয়ে বেহুঁশ করে ছেলের ঘরে ঢুকিয়ে দেয় তাকে। ওলানা ফিরে এসে জানতে পারে, খুবই আহত হয় সে, চলে যায় নিজের কোয়ার্টারে। ওডেনিগবোর উপর রাগ করে কাইনেনের ব্রিটিশ প্রেমিক রিচার্ডের সঙ্গে শোয়। কাইনেনে জেনে যায় সেকথা, বোনের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেয় সে। এর কিছুদিন পরই যুদ্ধ শুরু হয়। হাউসা মুসলিমদের সঙ্গে রায়টের জের ধরে ইগবোরা নিজেদের সার্বভৌম দেশ দাবি করে, দেশের নাম রাখে বায়াফ্রা। অর্ধ উদিত সূর্যের পতাকা সম্বলিত সেই দেশ কখনো স্বাধীন হয় না। এর মধ্যেই সেই গ্রামের মেয়েটি প্রসব করে এক কন্যা সন্তান। সন্তানহীন ওলানা সেই কন্যাকে নিয়ে আসে নিজেদের কাছে।

মায়ের বহু অনুরোধেও দেশ ছেড়ে পালায় না ওলানা। শিশু কন্যাকে নিয়ে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দুই বছর পার করে তারা। এর মধ্যে বিয়েও করে ওলানা আর ওডেনিগবো। যুদ্ধ যখন প্রায় শেষের দিকে, কাইনেনে হারিয়ে যায়। আর কোনদিন তার খোঁজ পাওয়া যায় না।
যুদ্ধশেষে নাইজেরিয়া অবিভক্তই থাকে। কিন্তু ইগবো সম্প্রদায়ের মানুষদের ত্যাগ, অনাহার আর চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু, ভয়াবহ যন্ত্রণা আর নির্মম অভিজ্ঞতার কথা বিশ্ববাসী জানতে পারেনা। হেরে যাওয়া যুদ্ধের এই বয়ান পাওয়া গেছে আদিচির অনুপ্রেরণায় চিনুয়া আচিবির লেখা বই দেয়ার ওয়াজ আ কান্ট্রিঃ আ পারসোনাল হিস্ট্রি অফ বায়াফ্রা’তে। এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রটি নাইজেরিয়াতে প্রদর্শিত হতে পারেনি। যুদ্ধের সময় মানুষের মানবিকতা আর অমানবিকতা, রায়টের নিহত আর ধর্ষিত নারীদের হাহাকার, খাদ্যের অভাবে শিশুদের মায়েদের আহাজারি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে, তা অনবদ্য। ওলানা অভিমান ভুলে ওডেনিগবোর সঙ্গে আবার বসবাস করে, বিয়েও করে তাকে, এমনকি ওডেনিগবোর মাকেও গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করে, কাইনেনেও বোনের প্রতি রাগ ভুলে গিয়ে তার মেয়ের জন্যে নিয়ে আসে উপহার। একটা যুদ্ধ এত বড় যে এর সামনে ব্যক্তিগত রাগ ক্ষোভ বিদ্বেষ আর অভিমান খুব তুচ্ছ হয়ে যায়। যুদ্ধে মানুষের এত সব অপূরণীয় ক্ষতি হয় যে আত্মাভিমানের কোন স্থান থাকে না, স্বার্থের সামান্য ক্ষয়ে কিছুই আর এসে যায় না।

আমেরিকানা

ইফেওমা কেন তার প্রেমিক ওবিনজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলো আমেরিকায় চলে গিয়ে, সেই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে অনেকগুলো অধ্যায় পড়ে যেতে হবে পাঠককে। উনিশ বছরের মেয়ে ইফেওমা আর তার প্রেমিক ওবিনজে ছিল খুব স্বপ্ন দেখা টগবগে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা তরুণ জুটি। উপন্যাসের শুরুতে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ইফেওমা একটা ইমেইল পাঠায় তার প্রাক্তন প্রেমিককে, ওবিনজে তখন ইংল্যান্ড থেকে নাইজেরিয়ায় ফিরে সফল ব্যবসায়ী। ইফেওমার চলে যাওয়ার কারণ জানতে না পেরে ভাঙা হৃদয় নিয়েই সে বিয়ে করেছে আরেকজনকে, যেহেতু জীবন কারো জন্যই থেমে থাকে না।

ইফেওমার ব্লগগুলো একটু ছোট করেও লেখা যেতো- ঢাউস উপন্যাসে এই একটিই ত্রুটি চোখে পড়েছে আমার। প্রবাসী আফ্রিকান তরুণীর জীবনের যে অভিজ্ঞতা আদিচি বলেছেন তার সঙ্গে মিল পাবে যে কোন তৃতীয় বিশ্ব থেকে আমেরিকা যাওয়া অভিবাসী মানুষ। আফ্রিকান আমেরিকান সহপাঠীরা যখন বলে ‘তোমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের পূর্বপুরুষদের বিক্রি করে না দিলে আমরা কখনো দাস হতাম না’, ইফেওমা টের পায় দাসত্বের ইতিহাসের সঙ্গে ঔপনিবেশকতার একটা সাক্ষাৎ সংঘর্ষ রয়েছে। নিজের কৃষ্ণাঙ্গ হওয়া নিয়ে কোনদিন তাকে চিন্তিত হতে হয়নি বহু ভাষা, বহু ধর্ম আর বহু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর দেশ নাইজেরিয়াতে বসে। আমেরিকা যাওয়ামাত্র সে কালো বলে বিবেচিত হতে শুরু করে। অনুভব করে কালো মানেই একটা গোষ্ঠী নয়, সে এসেছে আফ্রিকা থেকে, বহু শতাব্দী ধরে আমেরিকায় থাকা কালোদের থেকে সে আরো বেশি কালো। বর্ণবাদ শুধু গায়ের রঙ দেখেই কাজ করে না, জাতীয়তা দিয়েও কোনঠাসা করে ‘গ্লোবাল সাউথ’ বা তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে।

শুধুমাত্র নারীকেন্দ্রিক উপন্যাস বলেই কি এই গ্রন্থগুলোকে নারীবাদী দৃষ্টিতে দেখে প্রশংসা করা যায়? উত্তর হচ্ছে ‘না’। পুরুষ লেখকদের লেখা প্রচুর উপন্যাস আছে যাদের কেন্দ্রীয় চরিত্ররা নারী। টলস্টয়ের আন্না কারেনিনার কথা বলুন কিংবা হার্ডির টেস অফ ডি’আরবারভিলস অথবা লরেন্সের লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার। এই দেশের লেখকেরাও বহু বহু উপন্যাস লিখেছেন নারীদের প্রধান চরিত্র বানিয়ে। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুরু করে হালের হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, কেউই বাদ যাবেন না তালিকা করলে। কিন্তু নারীকে কেন্দ্র করে উপন্যাস আর নারীর দৃষ্টিতে দেখা উপন্যাসে ফারাক আছে। আদিচি, সম্ভবত সচেতনভাবেই, পার্সপেক্টিভ রাখেন নারীর। পার্পল হিবিস্কাসে যেমন, নায়ক আসলে জাজা, কিন্তু গল্পটা আমাদের বলছে কাম্বিলি। অন্য দুটি উপন্যাসেও ঠিক তাই। যুদ্ধের ভয়াবহতা, প্রবাসজীবনের কঠোরতা আর তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হবার তীব্র অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে নারীর অস্তিত্ব দিয়ে।

শিল্পমানের কথা যেটা বলছিলাম, আদিচি খুব সফলভাবে কাউকে হেয় না করে, কাউকে অমানবিকভাবে না দেখিয়ে, কারো নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে শুধু ঘটনা পরম্পরায় চরিত্রগুলোর অনুভূতির বয়ান করে গেছেন। সংবেদনশীল লেখকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রশ্ন তুলেছেন অনেক, উত্তর দেবার চেষ্টা করেননি কোনটারই। সাহিত্যিকের কাজ তা নয়ও। সামাজিক সমস্যার সমাধান দেবেন সমাজ বিশ্লেষকেরা, সমাজবিজ্ঞানীরা। লেখক শুধু নিজের দেখা পৃথিবীর ছবি তুলে যাবেন। আদিচি সেই ছবিগুলোই তুলে দেখিয়েছেন।

দ্য থিং অ্যারাউন্ড ইয়োর নেক সংকলনের গল্পগুলোতেও অভিবাসী নারীদের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন আদিচি। এই লেখায় সেগুলো আঁটানো যাবে না বলে বাদ দিলাম।

উম্মে ফারহানা: শিক্ষক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ