September 20, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

কবে মেয়েরা নিজেদের কথা নিজেরা বলতে শিখবে?

বিথী রায়।। মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও দেশের শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে ১৮ই মার্চ থেকে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ দেওয়ার ঘোষণা দেন সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার যেসব শিক্ষার্থী ব্যক্তিমালিকানাধিন মেসে অবস্থান করতো, সেসব শিক্ষার্থী ১৪ দিনের ছুটি ভেবে প্রয়োজনীয় সনদপত্র, বই, ব্যাক্তিগত কম্পিউটারসহ অনেক কিছু রেখে বাসায় চলে আসে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস ২৫শে মার্চ থেকে শুরু কয়েক দফায় ছুটি বাড়িয়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীরা ১৮ই মার্চ থেকে বর্তমান সময় অব্দি বাসায় অবস্থান করছে, কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে আবার কবে শিক্ষার্থীরা মেসে যাবে তা বলা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি ব্যক্তিমালিকানাধীন মেস মালিকগণ শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে দিয়ে এপ্রিল, মে এবং জুন মাসের ভাড়া পরিশোধ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশ সরকার ৩০শে মে থেকে সীমিত পরিসরে পাবলিক যানবাহন খুলে দিলে কিছু শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় সনদপত্র, বই, পিসি আনতে গেলে মেস মালিক তিনমাসের পুরো টাকা পরিশোধ না করলে মেসের গেট খুলে দিচ্ছে না, বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখছে এবং বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। এ হয়রানিগুলো হচ্ছে বেশিরভাগ মেয়েদের সাথে, ব্যাক্তিমালিকানাধীন ছাত্রী নিবাসগুলোতে।

উত্তরবঙ্গের শিক্ষানগরী হিসাবে পরিচিত রংপুরে সম্প্রতি ৬ই জুন আশরতপুর, চকবাজারের আলিফ লাম ছাত্রীনিবাসে দুই ছাত্রী তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে গেলে মেসমালিক তিনমাসের পুরো টাকা পরিশোধ করিয়ে নিয়ে রুমে যেতে দেয় এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে দেওয়া হয়। আলিফ লাম ছাত্রীনিবাসের পাশেই মকবুল ছাত্রীনিবাসেও একই দিনে  ঐ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।শুধু করোনাকালের এই সংকট হয় তা না ব্যক্তিমালিকানাধীন মেসমালিকরা মেসে বসবাসকারী মেয়েদের এরকম বিভিন্ন নিয়ম বানিয়ে মেয়েদের মানতে বাধ্য করায়। যেমন মেসে ওঠার আগে জামানত-উন্নয়ন ফি নামে অধিক টাকা আদায়, বছর বছর ভাড়া বাড়ানো, মেসে উঠে নূন্যতম ৬থেকে ১০ মাস থাকতে হবে নয়তো জামানতে টাকা অফেরতযোগ্য, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মেসে ঢুকতে হবে, রাতে কোন কারনেই বাইরে বের হওয়া যাবে না, রাত ১১টার পর টিভি -ছাদ বন্ধ হবে, গেস্ট বর্ডারের রুমেই রাত্রিযাপন করলে তথ্য দেওয়ার সাথে সাথে  গেস্ট বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে এবং আরো অনেক অনেক নিয়ম-কানুন মানতে বাধ্য হয় মেয়েরা।

কিন্তু কতকাল মেয়েরা মাথা নিচু করে মেস মালিকদের এসব অনৈতিক চাপ সহ্য করে যাবেন! আমরা মাথা নিচু করে লক্ষ্মী মেয়েদের মতো এসব অযৌক্তিক নিয়ম মানি বলেই ওই সব অমানবিক লোক সুযোগ পেয়ে বসে। মার্চের ১৮ তারিখ থেকে বর্তমান সময় অব্দি বাসায় মেয়েরা অবস্থান করলে মেস মালিকদের বিদ্যুৎ বিল দিতে হয়নি, ওয়াই-ফাই বিল দিতে হয়নি, সুইপার খরচ দিতে হয়নি। তাহলে কেন মেয়েরা আপনারা পুরো ভাড়া পরিশোধ করবেন। করোনা ভাইরাসের কারনে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারে আয় সংকটের সাথে সাথে  খাদ্যের সংকট হয়েছে। এমতাবস্থায় অনেকের পক্ষেই পুরো ভাড়া পরিশোধ সম্ভব হবে না। মেয়েদের তাই কথা বলতে হবে, নিজেদের অধিকারের লড়াই করতে হবে।

ছাত্রনিবাসগুলোতে মেসমালিকদের অযৌক্তিক নিয়ম-কানুন, অমানবিক ভাড়া আদায় শুধু রংপুরের দৃশ্য নয় পুরো বাংলাদেশের দৃশ্য এটি। মেসমালিকদের এই অমানবিকতা থেকে রক্ষা পেতে মেয়েদেরই লড়াই করতে হবে। এক্ষেত্রে অনেক মেয়েকে দেখি ছেলেদের সাহায্য নিতে। কিন্তু কেন মেয়েদের মেসের সমস্যা সমাধান করতে ছেলেদের আসতে হবে? অন্য কোন ছেলেদের  সংগঠন করোনা সংকটে মেস ভাড়া বিষয়ে কখন কোন্ সিধান্ত নেবে ঐ সিধান্তের আশায় কেন থাকবে মেয়েরা? উনাদের সিদ্ধান্ত তো মেয়েদের উপযোগী  নাও হতে পারে। সব ব্যপারে কেন পরনির্ভরশীল হবে মেয়েরা? মেয়েদের কেন কোন সংগঠন হয় না? মেয়েদের সংগঠন, মেয়েদের একতাই পারে ছাত্রীনিবাসের এই অযৌক্তিক নিয়ম থেকে মুক্তির উপায়।

কবে মেয়েরা আত্মসচেতন হবে, কবে মেয়েরা অধিকার বুঝে নিতে শিখবে, কবে মেয়েরা শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে কথা বলতে শিখবে?

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]