টকশো ঘোড়া সাহেদ চমস্কি
মাসকাওয়াথ আহসান।। সাহেদ মগবাজার মোড়ের ইনপেস সেলুনে ঢুকে চুল কাটাতে বসে। অত্যন্ত সুশৃংখল ছেলে সে; সব সময় শার্ট-প্যান্ট ইন করে; অফিসগামী কর্পোরেট ম্যানেজার যেন সে। ছোটবেলা থেকে চিপস আর কোক খেয়ে খেয়ে কার্টুন দেখা আর মি বিন দেখে হো হো করে হাসার জগত তার।
তার মা তাকে আদর করে ভিডিও গেমসের সামগ্রী কিনে দেয়। এই ভিডিও গেমসের জগতেই সে থাকে। ধীরে ধীরে মারভেল কমিকের জগতে ঢুকে পড়ে সে। ভেতরে ভেতরে সুপারম্যান ও ব্যাটম্যান হয়ে ওঠে। ঘুমালেই স্বপ্ন দেখে লোকজন এসে অটোগ্রাফ চাইছে, সুপার সাহেদ আমি আপনার ফ্যান। স্বপ্নে সাহেদ হেসে হেসে অটোগ্রাফ দেয়।
ইনপেসে চুল কাটাতে বসে আবার সে স্বপ্নে হারিয়ে যায়। হঠাৎ সে খেয়াল করে, যে লোকটা তার চুল সেট আপ করে সে নেই। নতুন একটা লোক তার মুখে মাথায় ইতস্তত শেভিং ফোম লাগিয়ে দিচ্ছে। একবার ভাবে, এ বোধ হয় স্বপ্ন; ফ্যানেরা এসব দুষ্টুমি করছে।
পরে ঠিক ঠাক ঘুম ভেঙ্গে এই সুশীলের ভাঁড়ামি দেখে বিরক্ত হয় সে। সাহেদ ধমক দেয়, কীসব করছেন আমার সঙ্গে!
সুশীল ফ্যাক করে হেসে দিয়ে নব্য সেলিব্রেটির মুডে বলে, আমি ঢাকাইয়া সাইরাস; টিভি ক্যামেরা আছে; আপনাকে আমরা আজ ‘বুদ্ধু’ বানালাম। অন্যের অপমান দেখার নেশা আছে দর্শকের। আপনাকে যে ‘বুদ্ধু’ বানালাম; এটা ওদের নেশার প্যাকেট। এই নিন আমাদের নেশার প্যাচালি শো’র পক্ষ থেকে গিফট প্যাকেট।
সাহেদ ঠিক বুঝতে পারে না; এটা কী হলো তাকে নিয়ে। টিভিতে সাহেদকে বুদ্ধু বানানোর পর থেকে তার আনন্দময় জীবন শেষ হয়ে গেলো। পাড়ার মেয়েরা পর্যন্ত অ্যাডামটিজিং শুরু করলো বুদ্ধু সাহেদ বলে। বিনোদনহীন নাগরিক জীবনে ‘সাহেদ’ হয়ে উঠলো হাসির পাত্র।
সাহেদ নিজেকে একটা ঘরের মধ্যে আটকে ফেললো; কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে; সে নিজেকে গুটিয়ে নিলো। ফ্রানয কাফকার গল্পের গ্রেগর সামসা যেন সে। নিজেকে তেলাপোকার মতো তুচ্ছ মনে হতে থাকলো।
পড়ন্ত এক ব্রাহ্মণ সাইরাসের দৈব চয়নে তুলে নেয়া টিভি বুলির তেলাপোকা সাহেদ। নব্য এলিট বিশুষ্ক জীবনের ‘অন্যের অপমান দেখার নেশায় বুঁদ’ মৌটুসি-সিনথিয়ার ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে অন্যের অপমানের কোকেনের নেশা নাকে পুরে নেয়ার মাদক যেন বুদ্ধু সাহেদ।
সাহেদের আব্বা তার মা’র সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেয়, তোমার সাহেদকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তুমি সারাদিন সমাজ-কর্ম করে বেড়াও; আর নিজের ছেলেটা যে ইনভ্যালিড হয়ে গেলো; সেদিকে তোমার নজর নেই।
সাহেদ কাউচ পটেটো হয়ে সারাদিন টিভি টকশো রিপিট ট্রান্সমিশান দেখে। অর্থহীন ঝগড়ার অন্তহীন এই টিভি শো’র নেশায় বুঁদ হয়ে যায়। টিভিতে রেসলিং দেখে খিল খিল করে হাসতো যে নানা-নানী; তারাও টিভি টকশোতে রেসলিং-এর মজা পেয়েছে।
সাহেদ টকশোতে ঝগড়া করায় এতো দক্ষ হয়ে ওঠে যে কী করে টিভি টকশো করা যায়, সে চেষ্টায় ঘুরপাক খেতে থাকে। নেশার প্যাচালির সাইরাস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার ছলে টিভি স্টেশনে ঢুকে পড়ে। পরিচিত এক টকশো উপস্থাপকে গিয়ে সালাম দিয়ে তার ইচ্ছার কথা জানায়।
টকশো উপস্থাপক বলেন, অভিজ্ঞতা আর প্রজ্ঞা ছাড়া কেউ আপনাকে টকশোতে ডাকবে না ভাই। এটা খুব কঠিন কাজ; সাংবাদিকতাকে আপনারা যত সহজ ভাবেন, এটা তা নয়।
সাহেদ ঘরে ফিরে মন খারাপ করে বসে থাকে; পাড়ার সিনথিয়ার হাসি বন্ধের কোন পথ তার জানা নেই। একমাত্র টিভি স্টার হতে পারলেই এটা সম্ভব। কারণ সিনথিয়া সেলিব্রেটিদের দেখলে মাখো মাখো হয়ে যায়।
মুন্না ভাই এমবিবিএস মুভি দেখে সাহেদ কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। ডাক্তার না হয়েও ডাক্তারি করার আইডিয়াটা তার মনে ধরে। মায়ের কাছে বায়না ধরে একটা রাজকীয় ক্লিনিক ব্যবসার জন্য কিছু টাকা চাই তার।
ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে মা তাকে কিছু টাকা দেয়। ক্লিনিকটা চলতে শুরু করে। এমটিভির ‘পিম্প মাই রাইড’ শো দেখে সে তার পুরোনো গাড়িটা নতুন করে ফেলার বুদ্ধি পায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে সাহেদের কাছে মনে হয় এ যেন ‘গে প্যারেড’; অমুক ভাই-তমুক ভাইয়ের বাহুলগ্ন তার ফ্যান ভাই। এই সমাজে আলাদিনের চেরাগ পেতে গেলে ভাইয়ের পরিচয়ের সঙ্গে নিজের পরিচয় জুড়তে হবে। সাহেদ তখন পলিটিক্যাল প্যালা ভাই খুঁজতে থাকে। মায়ের সমাজ-কর্মের সূত্র ধরে সে ছোটবেলা থেকেই পলিটিকসের পিঠাপুলির আসরে যায়; আন্টিদের ছবি তুলে দিয়ে তার পরিবর্তে কিট ক্যাট খায়। এখন সেলফির যুগ; সুতরাং সাহেদ বেরিয়ে পড়ে মেট্রোপলিসের সফল মানুষদের সঙ্গে সেলফি তুলতে। সাহেদের ফেসবুক রীতিমত বাঘ-ভালুক-হাতির চিড়িয়াখানার মতো হয়ে উঠতে থাকে।
সিনথিয়া তখন সাহেদকে রিথিংক করে; এতো বড় বড় হাতির সঙ্গে বাচ্চা হাতি সাহেদের ছবি; সুতরাং সে নিশ্চয়ই একটা কিছু হয়ে উঠেছে। সাহেদের জন্মদিনে বার্গার-পেস্ট্রি-ফুল নিয়ে সে হাজির হয়ে যায়। সাহেদের ঘরে ঢুকে গেয়ে ওঠে, এই পথ যদি না শেষ হয়; তবে কেমন হতো তুমি বলোতো।
সাহেদের মা তার বার্গার বেবি সাহেদের জন্য বার্গার বেবি সিনথিয়াকে পছন্দ করে ফেলে। সিনথিয়ার সামনে বসে সাহেদ দিনমান টকশোতে কথা বলা প্র্যাকটিস করতে থাকে।
পার্টিতে সাহেদের কথা-বার্তা শুনে সবার খুব পছন্দ হয় তাকে। মধ্যরাতের অশ্বারোহীরা দি আইডিয়া পেয়ে যায়। সাহেদ হতে পারে তাদের তোতা পাখি; সে গণতন্ত্রের পৃথুলায়ন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখতে পারে। ভয় নাই ডর নাই; অগ্র-পশ্চাৎ চিন্তা না করে সাহেদ ছোটবেলা থেকেই কথা বলে। সে যুগের মায়েরা হাইপার অ্যাকটিভ বেবি জারগনটা না শেখায়; সাহেদ বেঁচে গেছে ডাক্তারের পঞ্চায়েতির হাত থেকে। তবে ঝুঁকিতে পড়েছে সেই সরলতার কারণে। তাকে প্রভাবিত করা খুব সহজ। ফলে মধ্যরাতের অশ্বারোহীরা সাহেদকে টকশো ঘোড়া হিসেবে ছেড়ে দেয় রেসের মাঠে। তাকে তোতাপাখির মতো পড়ায়, বলো সাহেদ, সচিবালয়ের সচিব থেকে চৌকিদার, সেনাপ্রধান থেকে সিপাহি সবাই চায়, নুকা-নুকা। কমলা খেতে খেতে সাহেদ তার ব্রেনের হার্ড ডিস্কে ইন্সটল করে, সচিবালয়ের সচিব থেকে চৌকিদার, সেনাপ্রধান থেকে সিপাহি সবাই চায়, নুকা-নুকা।
খঞ্জনদা কফি খেতে খেতে বলে, আপনার বাগ্মিতার জন্য আপনার নাম দিলাম ‘তর্কালংকার’।
সাহেদ কফি শপ কাঁপিয়ে হা হা করে হাসে।
তর্কালংকার সাহেদ চেষ্টা করে ‘তৃতীয় চুমুক’ টকশো’তে যেতে। টকশো হোস্ট জেল্লা ভাইয়ের কাছে গিয়ে মনের ইচ্ছা জানায়। জেল্লা ভাই বলেন, আমার শো’তে বিএনপির অমুক বনাম আওয়ামী লীগের তমুক ফরম্যাট; মাঝে মাঝে তৃতীয় শক্তির শক্তিহীন নাগরিক আনি। আপনার মাশাল্লা যে স্বাস্থ্য ভাই; আপনাকে তৃতীয় শক্তিতে মানাবে না। আর ক্ষমতাসীন দলের প্রতিনিধিত্ব করতে চেতনার চেকপোস্টে গিয়ে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট আনতে হবে যে ভাই।
সাহেদ লাফ দিয়ে ওঠে, জেল্লা ভাই; আমি তো চেতনার চেকপোস্টে বসে কফি খাই। অসাম্প্রদায়িকতার আদর্শের খঞ্জনিদার প্রিয় পাত্র আমি। আমি উনার “বিষের রাত” টকশো ফাটিয়ে দিয়ে এসেছি।
জেল্লা ভাই বলেন, আওয়ামী লীগের বারো রকম কমিটির কোন একটাতে নাম চাই ভাই।
সাহেদ এবার রঙ্গভবন মিশনে বের হয়। সিনথিয়াকে নিয়ে পৌঁছে যায় পিঠাপুলির আসরে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে করমর্দন করতে গিয়ে সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকে; ক্যামেরার টেনশানে সিনথিয়াকে মঞ্চে আনতেও ভুলে গেছে সে। পরে আবার সিনথিয়াকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে করমর্দনের অ্যাকশান রিপ্লে-তে এলে, রসিক রাষ্ট্রপতি বলেন, এ যে দেখছি রাজ-যোটক; দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি তোমাদের দু’জনকে দেখলে বোঝা যায়। তোমাকে বুদ্ধিজীবী না বলে বৃদ্ধিজীবী বলতে চাই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিটা ঠিক জমে না। তাই সাহেদ মনের দুঃখে ঘুরতে থাকে মাঠে। সাংবাদিক বুলবুল ভাইকে সালাম দিলে বুলবুল ভাই বলেন, কী খবর বৃদ্ধিজীবী।
সাহেদ হাহা হাসিতে তার সঙ্গে ছবি তুলতে গেলে অপু উকিল এসে বলেন, সাহেদ ভাই ডায়েট করেন না কেন; দিন দিন তো মাইকেল মুর হয়ে যাচ্ছেন।
সাহেদ নারাজ হয়ে বলে, না না আমি সাহেদ চমস্কি। ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক। আমার লেখা বইয়ের নাম, ফ্যাটেনিং ডেমোক্রেসি।
বুলবুল ভাই বলেন, গণতন্ত্রের পৃথুলায়ন; দারুণ কনসেপ্ট সাহেদ চমস্কি।
সাহেদ একই সঙ্গে উপাচার্য ও সেনাচার্যের সঙ্গে ছবি তুলে ‘থ্রি স্টুজেস ছবির আনন্দ পায় তা দেখে। এই ছবিটা তার আসন্ন ফ্যাটেনিং ডেমোক্রেসি বইয়ের প্রচ্ছদে যেতে পারে। দুটি হৃষ্টপুষ্ট ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে আরেকটি থ্রিস্টুজেস ছবি তোলার চেষ্টা করে সে। গণতন্ত্রের সবগুলো স্তম্ভ তার ফেসবুক অ্যালবামে এসে যাওয়ায়; ইনক্রেডিবল হাল্কের মতো আনন্দে ফেটে যাবার উপক্রম হয় সাহেদের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসবার কালে সাহেদ ফ্রিতে তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ায়; তার একটা ক্রেডিবিলিটি তৈরি হয়। সমাজ সেবায় তার মায়েরও সুনাম ছিলো। ফলে সাহেদের এলিফ্যান্ট ম্যান হয়ে ওঠার ব্যাপারটা ছিলো কল্পনাতীত।
সাহেদের সমাজ সেবার ক্রেডিবিলিটির সুযোগ নেয় উন্নয়নের ভাওয়ালপুরী খোকন সোনারা। সাহেদকে পেলেই নিজেকে রাজ্জাক ভেবে সাহেদকে হাবা হাসমত চার্লি ভাবার আনন্দ নিতে থাকে নিয়মিত। খিস্তি খেউড় করে ক্র্যাকার্স পটেটো গ্যাং সাইবার বুলিয়াড়দের নিয়ে।
– দূরো মিয়া সেকেন্ড হোম নাই যার; ভবনদী হবে না সে পার। হাবা হাসমত কুনহানকার।
সাহেদ আবার মন খারাপ করে বসে থাকে অন্ধকার ঘরে; এই ডাউন সিনড্রোম তাকে ভোগায়। সিনথিয়া তাকে বকাঝকা করে, পারসোনালিটি নাই তো তোমার; তোমাকে ঐ ফঘফ’রা হাবা হাসমত তো ভাববেই।
এইবার সাহেদ তার পারসোনালিটি ফিরে পেতে হলিউডের অ্যাকাউনট্যান্ট মুভি দেখে। এবার সে ডেসপারেডো হয়ে প্রাডোতে ঘুরতে থাকে। সাহেদ মিডিয়া পাড়ার খুশিজলের ফ্রি লোডার বলে খামবাদিকেরা তার পিছে লেগে যায় চাঁদাবাজিতে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খুশি হবার খুশিজলে সাহেদ, অন সান সুচি থেকে সব শীর্ষ নেতাদের ভূ-রাজনীতি শেখাতে থাকে; ঘুরে দাঁড়ানো শেখায় টকশো-সার্কাসগুলোতে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সাহেদ নতুন দিল্লি যায় খুশিজলের ঘোরে। সাহেদের ভারত ভ্রমণে সেখানকার রাজনীতিকদের সঙ্গে ছবি তুলতে দেখে; দোস্তি পাকিস্তানের খামবাদিকেরা সাহেদকে ফাঁদে ফেলতে সক্রিয় হয়।
অন্যদিকে খঞ্জনিদা সাহেদ অতিরিক্ত ডেসপারেট হয়ে উঠছে দেখে ‘সাতে পাঁচে দাদার মতো’ বারান্দায় উঠে যায়। সাহেদের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। শিল্প-সাহিত্যের পেলব আলোচনা হলে ঠিক আছে; কড়া-জটিল আলাপে দাদা নেই।
খামবাদিকেরা যারা সাহেদের ক্লিনিকে ফ্রি ট্রিটমেন্ট করাতো; তারা ফেইক করোনা টেস্টের জন্য ফ্রড রোগি আনতে থাকে। সাহেদ এ সময় ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ ফিল্ম দেখে আর হাসে; ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে আর হাসে। সে মনে করে, যে সমাজে সবই ফেইক; সেইখানে সামান্য করোনা টেস্ট ফেইক হলে কী এমন। ডা. সাবরিনা যা হেসে হেসে করছে; তা করতে তার কী ভয়! আরে বাবা করোনার কোন ট্রিটমেন্ট নাই; তুই জেনে কী করবি তুই পজিটিভ নাকি নেগেটিভ!
ড্যাশিং খোকন সোনাদের দেখিয়ে দিতে যে সে হাবা হাসমত নয়; সে জ্যাকেল এন্ড হাইড; সাহেদ এক প্রবাসীর আবাসিক হোটেল দখল করে। এমন একটা অবস্থা যে কুখ্যাত শোভরাজ একদিন ফোন করে তাকে বলে, সাহেদ ভাই কি আমার অপরাধের রেকর্ড ভেঙ্গে দেবে নাকি!
স্বাস্থ্য-খাতের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি রুই-কাতলা-মৃগেল-মাগুরমাছ ধরার মুরোদ যখন নেই; তাই আইন শৃংখলা দেখানো বাহিনীর সাইরাসদের আবার প্রয়োজন সহজ চিংড়ি মাছ বা একটি বাকরা; যাকে জবাই দিয়ে গ্রামবাসীর ন্যায়বিচারের নেশা প্রশমন করা যাবে। আর ফেসবুক ট্রায়ালের ধর্ম-যাজকদের প্রতিদিন একজন অসৎ মানুষের অপমান দেখার নেশা। নিজের অসততার গোপনীয়তাটুকু গৃহকর্মীর কাছে বন্ধক রেখে পবিত্র কর হয়ে ফেসবুকে নৈতিকতা দেখানোর নেশার যুগে; প্রতিদিন হিরো আলম চাই, ওস্তাদ মাহফুজ চাই, অনন্ত জলিল চাই; আর ন্যায় বিচারের স্বর্ণযুগে চাই, সাবরিনা-সাহেদ।
সাহেদ জাস্টিসের ‘বাকরা’ হিসেবে মনোনীত হলে ৫০ রুপি মাসোহারার দোস্তি পাকিস্তানের খামবাদিকেরা তাকে নিয়ে চানমারি করে; ৫০ রুপি মাসোহরার স্বামী ভারতের খামবাদিকেরা সাহেদকে বার্ন করে তাদের ইনফরমেশন হিটম্যান হিসেবে। তাসের খেলায় একটি নষ্ট জোকার তখন পলায়নে যায়।
আইন শৃংখলা প্রদর্শন বাহিনীর ভয়ে সাহেদ নবাব সিরাজউদ্দৌলার অনুকরণে পছন্দের প্রতীক নুকায় চড়ে পালাতে গেলে হাকলবেরি ফিনের অনুসরণে “শীর্ষ সঙ্গী নেতা করোনা বিন সাহেদ গ্রেফতারে”র খুব মাঠা এক চিত্রনাট্য উপহার দিয়ে শুরু হয়, দ্য ট্রায়াল। আসলে শ্বাপদের সমাজে জন্মানোমাত্র শিশুর ট্রায়াল শুরু হয়; তাকে নিয়ে টিভি শোর বুদ্ধু বানানোর বাঁদর, টিভি টকশোর সিংহ-বাঘ, পাওয়ার প্ল্যান্টের শৃগাল, মধ্যরাতের অশ্বারোহী; সবাই সার্কাস সার্কাস খেলে।
সব শেষে হারকিউলিস তাকে হত্যা করতে নিয়ে যায়। জঙ্গলে জন্মানোর পাপই যে জীবনের সবচেয়ে বড় পাপ।