May 15, 2024
ফিচার ২ফিটনেস ও সুস্থতা

ঋতুস্রাবে মুড সুইং ও ব্যাথা এড়াতে বিশেষ ভোজন এবং রেসিপি

তাসফিয়াহ হক বুশরা।। চন্দ্রার মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে সেই সকাল থেকে। তেমন গুরুতর কিছু না। সকালে ঘুম ভেঙেছে ভাইয়ের নাস্তা না খাওয়া নিয়ে চ্যাচামেচিতে। ব্যাস, উঠেই একদফা কথা শুনিয়ে দিয়ে আসলো। কিছুক্ষন পরেই আবার প্রচন্ড মন খারাপ লাগলো আদরের ভাইটিকে বকা দেয়ার কারণে। মুহূর্তেই বিরক্তি আসলো নিজের উপর, কেন এমন করে সে? উত্তর খুঁজে না পেয়ে নিজেকে আরো আত্মবিশ্বাসহীন লাগতে শুরু করলো। মুহুর্তেই মেজাজ বদলে যাওয়ার মতো ব্যাপারটা আমাদের উপমহাদেশে সস্তা রসিকতা বৈ আর কিছুই না। কিন্তু সচেতন সমাজ, ডাক্তার,বিশেষজ্ঞরা ব্যাপারটিতে বেশ জোর দিয়ে থাকেন।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন হয়?

বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম-

– হরমোনাল কারণে, যার মধ্যে রয়েছে পিএমএস (প্রি মেন্সট্রুয়াল স্টেইজ), ঋতুচক্র, গর্ভকালীন বা এর পরবর্তী অবস্থা

– দৈনন্দিন জীবনযাপনে  অশান্তি (পারিবারিক ঝামেলা,ঘুম কম হওয়া ইত্যাদি)

– মানসিক রোগ( বাইপোলার ডিসওর্ডার,এনজাইটি ডিসওর্ডার, পার্সোনালিটি ডিসওর্ডার,এটেনশন ডিফিসিট হাইপারএক্টিভিটি ডিসওর্ডার)

 

পিরিয়ড বা ঋতুচক্র কেন হয়?

একটা নির্দিষ্ট সাইকেলে হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। জরায়ু নিঃসৃত রক্ত মাসের কয়েকটা দিন নিঃসৃত হওয়ার সময়কে বলা হয় ঋতুচক্র।

সাধারণত যেসব লক্ষণের মধ্যে দিয়ে সময়টা পার হয় তার মধ্যে রয়েছে

– তলপেটে ব্যাথা/cramps (মাঝারি থেকে মারাত্মক হতে পারে)

– ব্যাকপেইন

– মুড সুইং

– অবসাদগ্রস্ততা/Fatigue

– বমি বমি ভাব/Nausea

– মাথাব্যাথা

– পেটে ভারী বোধ হওয়া/Bloating

– ব্রণ/Acne

– কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা ডায়রিয়া

সাধারণত এসব লক্ষণ কারো ক্ষেত্রে বেশি কারো ক্ষেত্রে কম দেখা দেয়।

তবে বেশ কিছু গবেষণা থেকে পাওয়া যায়,পুষ্টিকর খাবার, জীবনযাপন পদ্ধতি এসব লক্ষণ থেকে অনেকাংশে মুক্ত রাখে।

উপমহাদেশে পিরিয়ডকে একটা ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়।এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ মেয়ে পিরিয়ডে করনীয় সম্পর্কে জ্ঞাত না। উপযুক্ত কোন শিক্ষা দেয়া হয় না আমাদের দেশে এই ব্যাপারটি নিয়ে। সঠিক খাবার গ্রহণ সম্পর্কে অজ্ঞতা একটি বড় বিষয় এক্ষেত্রে। তাছাড়া বাইরের দেশের পিরিয়ড বিষয়ক নানা লেখায় যেসব খাবার গ্রহণের জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হয় যেগুলো উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে অনেকাংশে সহজলভ্য নয়।

আজকের লেখায় মূলত আমাদের দেশে সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায় এমন কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। পিরিয়ডের সময়ে সঠিক উপায়ে এই খাবারগুলো গ্রহণে সঠিক পুষ্টিমান এবং ব্যাথা, অবসাদ, বমির ভাব, মুড সুইংয়ের মতো সমস্যাও অনেকাংশে কমে যাবে।

পানি: প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়া এসময়ে খুবই জরুরি।নিয়মিত পানি পান করা এবং যথেষ্ট মুত্রত্যাগ তলপেটে ব্যাথার মতো সমস্যাকে অনেকাংশে দূর করতে সক্ষম।আর ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্ত থাকলে অবসাদকেও দূরে রাখা যায়

ফলমূল: তরমুজ,শসা,পেঁপে,কমলা,আম এই ফলগুলো খুব সহজলভ্য।তাছাড়া তরমুজ,শসাতে প্রচুর পানি রয়েছ।পেঁপেতে রয়েছে এন্টিওক্সিডেন্ট।কমলা,আমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি।তাছাড়া পিরিয়ডের সময়ে কলা একটি বড় ভূমিকা রাখে শরীর ভালো রাখতে।কলাতে রয়েছে যথেষ্ঠ পটাশিয়াম এবং ক্যালরী।তাছাড়া ফলমূলে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি,যা পিরিয়ডের সময়ে চিনির ক্ষিধা মিটায়।কেননা পরিশোধিত চিনি পিরিয়ডের সময়ে শরীরে জন্য খুবই ক্ষতিকর।

সবুজ শাকসবজী: পুঁইশাক,পালংশাক,শিম

এসবে রয়েছে আয়রণ,ম্যাগনেসিয়াম এর মতো জরুরী পুষ্টিগুণ,যা দেহে আয়রণের ঘাটতি কমায়, অবসাদ থেকে মুক্ত রাখে

আদা: আদার মধ্যে রয়েছে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি গুণ।তাছাড়া আদা সেবন বমিরভাব থেকে মুক্তি দেয়।

বিভিন্ন ধরণের বিনস/সিড: শিমের বীজ,ফরাসের বীজ,মটরশুঁটি, মসুর ডাল। এসব খাবারে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন এবং প্রোটিন।

বাদাম/কিশমিশ, খেজুর: চিনাবাদাম খুব সহজে পাওয়া যায়,তাছাড়া খেজুর এবং কিশমিশও প্রতি ঘরে মোটামুটি থাকে।এসব খাবারে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড,প্রোটিন এবং ম্যাগিনেসিয়াম

মাছ: রুই মাছ(১৬.৪ গ্রাম প্রোটিন,১.৪ চর্বি),শোল মাছ(১৬.২ গ্রাম প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,আয়রন,জিংক),মাগুর মাছ(৩২ গ্রাম প্রোটিন,১৭২ গ্রাম ক্যালসিয়াম,আয়রন,ফসফরাস)

মুরগীর মাংস: ২৩৯ গ্রাম ক্যালরী,২২৩ গ্রাম পটাশিয়াম,২৭ গ্রাম প্রোটিন,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রণ,ভিটামিন বি-৬.

পরিহার করা উচিত যেসব খাবার

লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার: চিপস,চানাচুনের মতো খাবার যাতে রয়েছে উচ্চপর্যায়ের সোডিয়াম।এগুলা সাধারণত bloating বাড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী

চিনিযুক্ত খাবার: স্বাভাবিক পর্যায়ে চিনি খাওয়া গেলেও অতিরিক্ত পরিমাণে এর গ্রহণ মুড সুইং এর ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলে

ক্যাফেইন: কফি বা অন্যান্য ক্যাফেইন জাতীয় খাবার স্বাভাবিক পর্যায়ে গ্রহণ করা যেতে পারে,কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণে পানি স্বল্পতা বা হজমপ্রক্রিয়ায় বাধাদান করে।

 

মজাদার এবং সহজ কিছু রেসিপি

কলা-খেজুরের স্মুদি

উপকরণ: দুইটি মাঝারি আকারের কলা, খেজুর৬/৭টি, অল্প চিনি/মধু, বরফকুঁচি, দুধ ২ কাপ

প্রস্তুত প্রণালী: খেজুরের খোসাটুকু কলাসহ ব্লেডারে দিয়ে দুধসহ বাকী সব উপকরণ একসাথে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। বরফকুঁচি দিয়ে গ্লাসে পরিবেশন করুন।

ফ্রুট সালাদ

উপকরণ: মৌসুমী ফল (কলা,আম,আপেল,তরমুজ,আঙুর,আনার), মিষ্টি দই/ক্ষীরসা, লবণ এক চিমটি

প্রস্তুত প্রণালী: পিরিয়ডের সময় দই বেশ উপযোগী একটি খাবার, তবে ফ্রুট সালাদে এটি পছন্দ না হলে এর বদলে ক্ষীরসা দিতে পারেন

ক্ষীরসা বানানোর ক্ষেত্রে ১/৪ কাপ তরল দুধে ২ টেবিল চামচ গুড়োদুধ এবং ২ চা চামচ কন্ডেন্স মিল্ক দিয়ে সহজ উপায়ে ক্ষীরসা করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ক্ষীরসা/দইয়ের সাথে কুচি করে সব ফল এক চিমটি লবণসহ মেখে নিন

এছাড়া মিষ্টি পছন্দ না করলে কুচি করে রাখা ফলের সাথে এক চিমটি বিট লবণ, অল্প গোলমরিচের গুড়ো কাসুন্দি/দই মিক্স করেও সহজে করা যাবে ফ্রুট সালাদ।

মসুর ডাল দিয়ে পুঁইশাক

উপকরণ: মসুর ডাল ১ কাপ,পুঁইশাক কুচি ২ কাপ,পেঁয়াজ ১/৪ কাপ,রসুন বাটা ১ চা চামচ,হলুদ ১ চা চামচ,মরিচগুঁড়া ১ চা চামচ,ধনেগুড়ো ১/২ চা চামচ,লবণ স্বাদমতো, তেল ৩ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালী: কড়াইয়ে তেল দিয়ে গরম হওয়ার পর পেঁয়াজ দিয়ে হালকা ভেজে নিন, এরপর এতে রসুন বাটা দিয়ে ভেজে নিয়ে গুড়োমসলা আর লবণ দিয়ে হালকা কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে গেলে এতে মসুর ডাল দিয়ে ভেজে নিন ভালো করে। খানিক্ষন ঢাকনা দিয়ে রাখুন এতে ডাল থেকে পানি বের হবে। এরপর এতে পুঁইশাক কুচি দিয়ে খানিক্ষন নাড়াচাড়া করে ১/২ কাপ গরম পানি দিয়ে ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ২০ মিনিট। মাঝেমাঝে ঢাকনা খুলে নেড়েচেড়ে দিন যাতে কড়াইয়ে না লেগে যায়। ব্যাস তৈরি দারুণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন মজাদার পুঁইশাক দিয়ে মসুর ডাল।

শোল মাছের দোপেয়াজা

উপকরণ: শোল মাছ ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১/৪ কাপ, পেঁয়াজ বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা ১/২ চা চামচ, টমেটো কুচি ১/৪ কাপ, তেল ৩ টেবিল চামচ, হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ, মরিচ গুড়ো ২ চা চামচ, ধনে গুড়ো ১ চা চামচ, পাঁচফোড়ন ১/২ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেজপাতা ২/৩টা, ধনেপাতা কুচি গার্নিশিংয়ের জন্য।

বেরেস্তার জন্য লাগবে পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ, তেল পরিমাণ মতো।

প্রস্তুত প্রণালী: কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি হালকা ভেজে নিয়ে একে একে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে হালকা নেড়েচেড়ে হলুদগুড়ো, মরিচগুড়ো, ধনেগুড়ো দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। কষানো হয়ে গেলে টমেটো কুচি এবং শোল মাছ দিয়ে মশলার মধ্যে ভালো করে ভাজা ভাজা করে নিন। ভাজা হয়ে গেলে ১/২ কাপ গরম পানি আর পাঁচফোড়ন দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ১২ থেকে ১৫ মিনিট। পানি শুকানোর পর্যায়ে চলে এলে এতে বেরেস্তা আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে মনমতো সাজিয়ে নিন।

তাওয়া গ্রিল চিকেন

উপকরণ: মুরগীর ব্রেস্ট পিস ৪ টি, পেঁয়াজ বাটা ১ টেবিল চামচ, আদা রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, টকদই ১/২ কাপ, লেবুর রস ৩ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো,হলুদ গুড়ো ১ চা চামচ, মরিচ গুড়ো ২ চা চামচ, ধনেগুড়ো ১/২ চা চামচ, পাঁচফোড়ন ১/২ চা চামচ, জিরেগুড়ো ১/২ চা চামচ, গরম মশলা ১/৪ চা চামচ, টমেটো সস, সয়াসস

প্রস্তুত প্রণালী: সমস্ত উপকরণ একসাথে ভালো করে পেস্ট করে নিয়ে চিকেনের টুকরোতে মেখে নিন। ফ্রিজে রেখে ১ ঘন্টা ম্যারিনেট করে নেয়ার পর চুলায় তাওয়া দিয়ে এতে অল্প তেল দিয়ে চিকেনগুলো উল্টেপাল্টে ভেজে নিন। মাঝেমধ্যে চিকেনের গায়ে তেল এবং মশলা একটা ব্রাশের সাহায্যে মেখে নিন। মনমতো করে সাজিয়ে রুটি/পরোটা যা সালাদের সাথে উপভোগ করুন মজাদার তাওয়া চিকেন ফ্রাই।

হারবাল চা

দারুন পুষ্টিগুণসম্পন্ন, পিরিয়ডের জন্য অত্যাধিক উপকারী ভেষজ বা হারবাল চা। তুলসি-চা,আদা-চা, লেবু-মধু চা, দারচিনি-চা সবকটিই ভীষণ উপকারী এবং সুস্বাদু।

সাধারণ রং চা এর লিকারের সাথে পছন্দমতো যেকোন ভেষজ দিয়ে এক কাপ চা খেলে শরীর এবং মন দুটোই লাগবে বেশ ফুরফুরে। পিরিয়ডকালীন নানা ঘাটতিও দূর হবে সহজেই।

আমাদের উপমহাদেশে এই যুগে এসেও পিরিয়ড বা এর নানা লক্ষণের বিপরীতে শুনতে হয় সস্তা সব হাসি ঠাট্টা। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের মা দাদী নানীরা এখনো আঁকড়ে ধরে আছেন ‘কয়টা দিন কষ্ট তো হবেই, মানায় নাও’। কম্প্রোমাইজ-স্যাক্রিফাইজ-স্ট্রাগল এইগুলাই তো মেয়েদের জীবন- এই হিসেব আজো এই উপমহাদেশের লাখো কোটি মানুষ বিশ্বাস করে। তবে হ্যাঁ তারও বাইরে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী অবশ্যই আছে যাদের বাবা-মা, বন্ধু, পার্টনার খুবই সংবেদনশীল আর কেয়ারিং। তবে মেয়ে, সবকিছুর বাইরে তোমাকে নিজের খেয়াল নিজে রাখতে হবে। তোমার জন্য কখন কোনটা সঠিক তা নিজেরই মাথায় রাখা লাগবে। পৃথিবীর প্রায় ৯০% নারী পিরিয়ডকালীর লক্ষণগুলো ফেইস করে যার প্রায় ৩২%-৪০% নারীকে কাজ বা স্কুল মিস করতে হয় এবং প্রায় ১৪% নারী তীব্রভাবে তার পিরিয়ডকে ফেইস করে এবং প্রায় ৫০% নারী পেইনফুল পিরিয়ড পার করে।

ঠিক তারই জন্য পিরিয়ডের সময়ে সঠিক উপায়ে খাদ্য নির্বাচন আপনাকে সতেজ, ফুরফুরে আর প্রাণবন্ত রাখতে খুবই কাজে দেবে। পুষ্টিকর আর সঠিক খাদ্য নির্বাচন ধরে রাখবে আপনার সুস্বাস্থ্য। হ্যাপি ব্লিডিং।

তথ্যসূত্র:

  1. https://www.google.com/amp/s/m.timesofindia.com/life-style/food-news/best-foods-to-eat-during-periods-to-stay-healthy/amp_articleshow/cms
  2. https://www.medicalnewstoday.com/articles/what-to-eat-on-your-period#reduce-sodium
  3. https://www.healthline.com/health/womens-health/what-to-eat-during-period
  4. https://rubycup.com/blogs/news/a-helpful-guide-on-what-to-eat-before-during-and-after-your-periods
  5. https://www.healthline.com/health/facts-statistics-menstruation