সন্তানকে সম্মান দিতে শিখুন
তৌকির ইসলাম।। আমার আজকের লেখার শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়তো একটু ভাবছেন যে সন্তানকে সম্মান দেওয়া, এটা আবার কেমন কথা! এটা আসলেই অনেক বড় কথা, অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। আজকে এই বিষয়েই আমি লিখব বলে ভেবেছি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো তার সন্তান, সবচেয়ে ভালবাসা আর আদরের হলো সন্তান। কিন্তু শুধু আদর ভালোবাসাতেই কি সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়বদ্ধতা! মোটেও নয় বরং সন্তানকে সম্মান দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমার দৃষ্টিতে পিতামাতার ভালবাসা পূর্ণতা পায়।
আমাদের অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে যে তারা ধরেই নেন সন্তান তেমন কিছু বোঝে না, জানে না। সুতরাং তার মতামতের গুরুত্ব কীসের। আমি আপনার দুধের শিশুর মতামতের কথা বলছি না। আপনার সন্তান পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার পর থেকেই তাকে সম্মান দিন। সে ছোট বলে তার কথার গুরুত্ব নেই এই ধারণা করা মোটেও সমীচীন নয়। আমি অনেককেই দেখি সন্তানের সামনেই সন্তান সারাদিন কী কী দুষ্টুমি করে, খাবার নিয়ে বিরক্ত করে সেসব বলতে থাকেন। সন্তান ছোট মানুষ এই কথা ঠিক, কিন্তু তার ব্যাপারে সব কিছু সবার সামনে বলা সে পছন্দ নাও করতে পারে। সে নিজে নিজে ছোট হতে থাকে। যখন তখন যার তার সামনেই শাসন করাটাও ঠিক নয়। সন্তান এতে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকে। এতে হবে হিতে বিপরীত। কিন্তু সন্তানকে যদি আপনি নিরবিলি বুঝাতেন তাহলে অনেক বেশি ভালো হত। আমি সন্তানের শাসন করার বিপক্ষে না কিন্তু শাসন করতে গিয়ে আপনার সন্তানকে হীনমন্যতায় ভোগানোর বিপক্ষে আমি।
সন্তানের ঠিক যেই সময়টাতে সম্মান এবং অধিকারবোধ বেশি প্রয়োজন ঠিক তখনই আমাদের অভিভাবক সমাজ সবচেয়ে অসম্মান করে থাকেন। আর সেই বয়সটি হল বয়ঃসন্ধিকাল। এই সময় সন্তান তার নিজের সোশ্যাল এবং বায়োলজিক্যাল অস্তিত্বকে আবিষ্কার করে এবং নিজেকে নতুন করে চিনতে থাকে। কিন্তু এই সময়টাতে আমাদের সমাজের অভিভাবকরা সন্তানের কথার গুরুত্ব না দেওয়া, সন্তানকে অন্যের সাথে তুলনা করা, সন্তানকে যে কারো সামনে ছোট করা, আর্থিক চাপে রাখা এইসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে দিন দিন বয়ঃসন্ধিকালে মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা ইত্যাদির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সন্তানের সাথে একটু ভালো সম্পর্ক এই সময়টাতে তার ভবিষ্যতের ভিত গড়ে দেয়।
আমি সন্তানকে সম্মান দেওয়া বলতে আপনি তাকে আসতে যেতে সালাম দিবেন তা বুঝাচ্ছি না বরং আপনার সন্তানও যে একটা আলাদা ব্যক্তিসত্তা, তার নিজস্ব মতামত আছে, সম্মানবোধ আছে এবং এগুলো তার অধিকার- তা বুঝাতে চাচ্ছি।
আপনার কাছে চোখ রাঙ্গানিতে সন্তানের ভয়কে শাসন মনে হলে, আপনার সন্তানের কাছেও আপনার কথার অবমূল্যায়ন করাটা সাহসিকতা মনে হবে। সন্তানকে সম্মান দিন, তার মতামত নিন। কেন কোন পরিস্থিতিতে আপনি তার মতামত গ্রহণ করতে পারছেন না তাকে বুঝিয়ে বলুন। আপনার প্রতি সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে। ভয় ভেঙ্গে যায় খুব সহজে, সম্মান নয়।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]