মায়া অ্যাঞ্জেলোর ‘অসামান্য নারী’
অ্যামেরিকান কবি, গল্পকার, সক্রিয়তাবাদী ব্যক্তিত্ব মায়া অ্যাঞ্জেলোর জন্মগত নাম মার্গেরিট জনসন ( এপ্রিল ৪, ১৯২৮ – মে ২৮,২০১৪)। মিসৌরির সেন্ট লুই শহরে জন্ম নেন। লেখক এবং কবি হিসেবে নিজের প্রকৃত সত্তা খুঁজে পাবার আগে তিনি নানা জীবন-উপায় অবলম্বন করেছিলেন। ‘রুটস’-এর মিনি সিরিজে অভিনয় করেছেন। তাঁর ‘জর্জিয়া, জর্জিয়া'(১৯৭২) একজন কৃষ্ণাঙ্গ রচিত প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্য। জাতিগতভাবে অচ্ছুতদের জন্য নির্ধারিত আরকানসাসের স্ট্যামপস শহরের প্রত্যন্তে শৈশব কেটেছিল মায়া অ্যাঞ্জেলোর। তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থমালায় তিনি জীবনের সব দিক, সব অধ্যায় নিয়ে সবিস্তার লিখেছেন। অ্যামেরিকার এই প্রধান কবিকে বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হবার সময়ে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে অভিষেক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনে কবিতা লেখা ও পাঠের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। মার্কিন ইতিহাসে ১৯৬১ সালে জন এফ কেনেডির অভিষেক অনুষ্ঠানে তদানীন্তন নিউ ইংল্যান্ডের কবি রবার্ট ফ্রস্ট কবিতা পড়ার সুবর্ণ আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। এবং তাঁর বিখ্যাত ‘গিফট আউটরাইট’ কবিতা পড়েছিলেন। সেই মাইলফলক ঘটনার পর এই প্রথম একজন অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান নারী কবি এমন সম্মান অর্জনের বিরল সুযোগ লাভ করেন এবং মায়া অ্যাঞ্জেলো পড়েছিলেন তাঁর বিখ্যাত On the Pulse of Morning কবিতাটি। তাঁর উপন্যাস ও কবিতা আত্মপ্রত্যয়পূর্ণ আফ্রো-আ্যামেরিকান নারীদের চিত্রায়নের জন্য সমধিক বিশিষ্ট। অ্যাফ্রো-অ্যামেরিকান নারী মায়া অ্যাঞ্জোলো-ই হলিউডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র পরিচালক। Down in the Delta (১৯৯৮) চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। গড়েছেন গৌরবময় ইতিহাস। ৮৬ বছর বয়সে এই প্রতিভা- প্রদীপ্ত কবির কীর্তিসমুজ্জ্বল জীবনাবসন ঘটে।
মায়া অ্যাঞ্জেলোর Phenomenal Woman কবিতাটি অনুবাদ করেছেন প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক মুজিব রাহমান
অসামান্য নারী
সুন্দরীরা বিস্ময়ে ভাবে কোথায় লুকানো রহস্য আমার
আমি আকর্ষণীয় নই কিংবা গড়নে ফ্যাশন মডেলের আকৃতির সাথেও নই মানানসই।
কিন্তু আমি যখন তাদের বলতে শুরু করি
তারা মনে করে আমি মিথ্যা বলছি।
আমি বলি,
এটি আমার বাহুযুগলের প্রসারণে
আমার ঊরুদ্বয়ের বিস্তারে
পা ফেলার ভঙ্গিতে
আমার বাঁকানো ঠোঁটে
আমি নারী
অসামান্যভাবে
অসামান্য নারী।
ওই তো আমি।
আমি একটি কক্ষে যাই
ঠিক তোমার মনমতো,
এবং একজনের কাছে,
মানুষজন দাঁড়িয়ে পড়ে অথবা
ব্যর্থতায় নতজানু হয়।
তারপর তারা আমাকে ঘিরে গিজগিজ
মৌমাছিদের এক মৌচাক।
আমি বলি,
এটি আমার চোখের আগুন,
এবং আমার দাঁতের ঝলক,
আমার কোমরের দুলুনি,
এবং আমার পায়ের পাতার পুলক।
আমি নারী
অসামান্যভাবে।
অসামান্য নারী
ওই তো আমি।
পুরুষেরা নিজেরাই বিস্ময়ে ভেবেছে
কি দেখে তারা আমার ভেতর।
তার চেষ্টা করছে নিরন্তর
কিন্তু ছুঁতে অক্ষম
আমার রহস্য অন্তরতম।
যখন তাদের আমি দেখাবার চেষ্টা করি
তারা বলে তারা তখনো দেখতে পারে না।
আমি বলি
এটি আমার পিঠের বাঁকে
হাসির প্রসন্নতায়
বুকের উদ্ভাসনে
সাজগোজের মাধুর্যে।
আমি নারী
অসামান্যভাবে,
অসামান্য নারী।
ওই তো আমি।
এখন তুমি বুঝতে পার
আমার মাথা কেন নত নয়
আমি চিৎকার করি না লাফিয়ে ছুটি না
অথবা তারস্বরে আমাকে কথাও বলতে হয় না
যখন তুমি আমাকে অতিক্রম করে যেতে দেখ
এটি তোমাকে গর্বে উদ্দীপিত করা উচিত।
আমি বলি,
এটি আমার হিলের খুট খুট শব্দে,
আমার কেশদামের ঢেউয়ে
আমার হাতের তালুতে,
আমার যত্নের প্রয়োজনে।
কারণ আমি একজন নারী
অসামান্যভাবে।
অসামান্য নারী,
ওই তো আমি।