জলি’র জয় হোক, নিপীড়কের বিচার ও শাস্তি হোক
শারমিন শামস্।। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সম্পাদক জলি তালুকদার অনশন করছেন। কেন করছেন? কীসের অভিযোগে? কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে? কার বিচার চেয়ে?
শুনলে হতবাক হতে হয়, একজন রাজনৈতিক দলের কর্মী, যে দলটি নিজেদের প্রগতিশীল মেধার চর্চাকারী দল বলে দাবি করে, সেই দলের একজন রাজনৈতিক কর্মী নিপীড়িত হয়েছেন। না, যে সে নিপীড়ন নয়। তিনি যৌন নিপীড়নের শিকার। কারণ তার রাজনৈতিক কর্মী পরিচয়ের বাইরে তার নারী শরীর মূখ্য হয়ে উঠেছে তারই দলের আরেক কর্মীর কাছে। রাজনৈতিক কর্মসূচী চলাকালীন জলি তালুকদারেরই একজন রাজনৈতিক সহকর্মী তাকে মিছিলের ভেতর হেনস্থা করেছে। তাকে নিপীড়ন করেছে। ঠিক যেরকম করে রাস্তার পুরুষেরা একটি নারীকে হেনস্থা করে, ঠিক সেইভাবে। জলি অভিযোগ করেছেন, মিছিলের ভেতরেই জাহিদ হোসেন খান নামের ওই কর্মী বারবার বাজে আচরণ করায় তিনি একসময় ব্যানার ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হন।
জলির অভিযোগ আছে আরো। জলির সাথে এই ধরণের নোংরা আচরণের সাক্ষী আছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে আছেন সিপিবি’র শান্তিনগর শাখার সভাপতি ও সম্পাদক। তারা সেই মুহুর্তেই প্রতিবাদও করেছিলেন নিপীড়নকারীর বিরুদ্ধে। এরপর জলি দলটির নেতা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বরাবর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দেন নিপীড়কের বিরুদ্ধে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, সিপিবি এই অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেয়নি। বরং মিটিং ডেকেছে একটি যেখানে নিপীড়কও উপস্থিত ছিল। সেই মিটিংয়ে জলি নিপীড়কের সাথে বসতে আপত্তি জানিয়েছেন স্পষ্ট করে। কিন্তু সেটিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এবং অত্যাশ্চর্য ব্যাপার হল, নিপীড়কের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো শান্তিনগর শাখার সম্পাদকের বিরুদ্ধে উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এই জঘন্য সেক্সিস্ট আচরণ, অন্যায় ব্যবহার ও দুমুখী নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন জলি তালুকদার। তিনি অনশন করছেন নিপীড়কের শাস্তি দাবি করে।
একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে নারীর এই অবমাননা, চরম বৈষম্যমূলক আচরণ, নারী কর্মীকে নিপীড়নের মত ঘটনার চেয়ে ন্যাক্কারজনক আর কী হতে পারে? যে দলটি ক্রমাগত মেধা, প্রগতি আর আধুনিকতার কথা বলে, সেই দলের অভ্যন্তরের কদর্য অন্ধকার আমাদের আতঙ্কিত করে। জলি তার বিবৃতিতে লিখেছেন, বহু বছর ধরে রাজনীতি করছেন তিনি। নারী-পুরুষ কর্মী পাশাপাশি সংগ্রাম আন্দোলন করেছেন। পুলিশের আক্রমনে বহুবার তার পোশাক ছিঁড়ে গেছে। তবু কোনদিন নিজেকে যৌন নিপীড়নের শিকার মনে হয়নি। অথচ আজ নিজের দলের ভেতরে নিজেদের কর্মীর হাতে নিজেদের কর্মসূচীর মধ্যে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আজ তিনি সমাজের চোখে দেখা নারীর সেই আদিম রূপ, একটি যৌনবস্তু হয়ে উঠলেন শেষ পর্যন্ত, আর তাতে মদদ জুগিয়ে গেল পুরো একটি রাজনৈতিক দল আর তাদের বাঘা বাঘা নেতারা।
একজন নারী, একজন শিক্ষিত, সচেতন, প্রগতিশীল নারীকে আজ অনশনের আসনে বসতে হয়েছে বিচারের দাবিতে। যৌন নিপীড়নের বিচার। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?
জলি, আপনার সাহস, সচেতনতা ও দৃঢ়তার জয় হোক। নিপীড়কের যথাযথ বিচার ও শাস্তি দাবি করি জলির পাশে দাঁড়িয়ে। অন্ধত্ব ও কদর্য চর্চার অবসান ঘটুক। জয় হোক শুভবোধের।