“কই আমাদের সাথে তো এমন হয় না!”
তানজিয়া রহমান।। আমি মাঝে মাঝে নারী অধিকার নিয়ে লিখতে লজ্জা পাই। লজ্জা নাকি ঠিক জানি না। কান্না পায়। মনে হয় আমার পুরনো সব লেখাগুলো থেকে যদি আমার নাম মুছে দিতে পারতাম! যে কয়টা বিষয়ে লিখেছি সেগুলোই যখন নিজের সামনে ঘটে, আমি প্রতিবাদ করে পেরে উঠি না, তখন কষ্ট হয়। যখন অন্যায়, অত্যাচারের চাপে আমার কথা চাপা পরে যায়, তখন কষ্ট হয়। দশ জন মানুষের মধ্যে যখন ভিক্টিম আর আমি বাদে বাকি আটজন পুরুষতন্ত্র সাপোর্ট করে, তখন তাদের সাথে কথা বলে পারি না আর। অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে অন্যায়ের পক্ষ নেয়া দেখাটা সব থেকে কষ্টের। কিছু নারীও পুরুষতন্ত্রকে সাপোর্ট করে। প্রতিবাদ করার অপরাধে আমাকে আক্রমণ করে, তখন আর ওদের সাথে পারি না, ক্লান্ত বোধ করি।
একজন মেয়ে নির্যাতনের শিকার হলে তখন নির্যাতিতার পাশে না থেকে যখন অন্যরা নির্যাতিতার দোষ খোঁজে, তখন খারাপ লাগে। দোষ না পেয়ে শেষে বলে, “কই আমাদের সাথে তো এমন হয় না। ওর দোষ আছে তাই ওর সাথে এমন হয়েছে।” তারা দোষটা কী, সেটা ঠিক বলতে পারেনা; কিন্তু দোষী করে নির্যাতিতাকেই। আর তাদের সাথে অন্যায় হয় না, এটা ভুল। তাদের সাথেও অন্যায় হয়। তারা অন্যায়টাকে স্বাভাবিক ভাবে। তারা পুরুষকে ভাবে শাসক আর নিজেদের ভাবে অধীনস্থ দাস। খেয়াল করলেই শোনা যায়, “সে হইছে পুরুষ মানুষ। তার কথার অবাধ্য হলে মানবে? তখন তো গায়ে হাত তুলবেই।”
মানে কী? সে পুরুষ বলে সে যা বলবে তাই মানতে হবে? তার মনমতো চলতে হবে? সে যদি বলে- ‘‘ওইখানে যাবা না, ওইটা পরবা না, ওইটা করবা না’’- তাই মানতে হবে? অন্ততপক্ষে নিজের ভালো চিন্তা করে হলেও তো এর প্রতিবাদ করা উচিত! আপনি কী করবেন আর কী করবেন না এটার সিদ্ধান্ত শুধু আপনার। এটা নিজে বুঝুন আর অন্য কেউ এই শাসনের প্রতিবাদ করলে তার পাশে থাকুন। তাও যদি না পারেন তাহলে অন্তত তার বিরোধিতা করবেন না।
আর হ্যাঁ, আমার যে মাঝে মাঝে লিখতে লজ্জা করে, কান্না পায়, আপনাদের সাথে পেরে উঠি না। এটাকে আপনাদের জয় ভাববেন না। যখন আমি একটা ঘটনার প্রতিবাদ করে পেরে উঠি না তখন আমি সেই মুহুর্তে হয়তো সামান্য দমে যাই, কিন্তু পরের বার আপনাদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দ্বিগুণ শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা করি।
অন্যের ভালো চিন্তা না করলেও নিজের ভালোর জন্য অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। নিজের ভালো বুঝলে একসময় অন্যের ভালোও বুঝবেন।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]