পাতাকুড়োনির গল্প
মাহিনুর আক্তার।।
মধ্যাহ্ন আকাশে ঝাঁ ঝাঁ রোদে চিল বেড়ায় ডানা মেলে,
পাতাকুড়ানি মেয়েটি ঝাড়ু হাতে বনে-বাদাড়ে ঘোরে
নিভৃত নদী তীর, আম-জাম তলায় গরু বাধা চুপ-
পুকুর,কলাবাগান, কুমড়োলতার চাল সবই নীরব
ওড়া চুল নিয়ে কান্নামাখা চোখে দেখে স্কুলে যাওয়া শিশুদের;
ডাঙায় লুকানো কোন বিপদের স্রোতে ভেসে যায় হিংস্রতায়,
লণ্ডভন্ড হয়ে যায় পৃথিবীর ঝকমকে রোদ, ঘরে সে বন্ধ হয়।
বর্ষার অজস্র জলধারা টিনের চালে, মেয়েটির চোখেও জল,
বাবা-মা,পাড়া-পড়শি নারী একই প্রশ্নে হাজির বারবার।
চৌকিতে শুয়ে ওলট-পালট ভাবে মেয়েটি – “কোন বাচ্চা, কার”?
কিছুই জানে না পাতাকুড়ানি বালিকা, শুধু জানে নিভৃতে,
জন্তুসম টেনে গভীর বনে প্রকাণ্ড গাছের পিছনে ভিড়িয়েছে ;
অসহ্য ব্যথায় কেঁদে-কেটে আবার পা টেনে পাতা কুড়িয়েছে।
দূরে নদী আর আকাশের চিল সাক্ষী তার; কোথায় পাবে নাম
পাড়া জুড়ে চলে মানুষের মিথ্যে ছুটাছুটি আর কথামালা।
পেটটি ওর কুমড়ার মতো বড় হতে থাকে, যেন স্তব্ধ পুকুর-
বাঁশপাতার ঝিরিঝিরি দোলাতে পেটে কী যেন নড়ে-চড়ে
ভ্যাপসা দুপুরে তা জেনে মা-মেয়েতে মাটিতে কাঁদে পড়ে।
ক’মাস পরে এক সন্ধ্যায় রক্তে গড়াগড়ি বালিকা হাসপাতাল,
ব্যথার রাজ্যে হারিয়ে আঙুর খেতে মন যে চায় বারবার।
ফলটা মিষ্টি শুনেছিল একবার; আমের চেয়েও বেশি কি না?
বাবা ডাক্তারের পা ধরে কাঁদে- মেয়েটি মরন দশায় ওটিতে,
চলে যায় স্বপ্নের হিমেভরা কোন পশ্চিমে কলঙ্ক মুক্তিতে।
খবরের কাগজ প্রবল গুরুত্বে ছাপে মেয়েটির নিষ্পাপতা,
অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টিরা ঝরে- পাঠকের মনের মাটিতে;
সবুজপানার ডোবায় জাপানিফুলের মতো উঁকি দেয় তার মুখ,
তড়িঘড়ি পুরুষের টাকায় বাবা ভালো খায়, ভোলে শোক-দুখ।