November 1, 2024
সাহিত্যকবিতা

পাতাকুড়োনির গল্প

মাহিনুর আক্তার।।

 

মধ্যাহ্ন আকাশে ঝাঁ ঝাঁ রোদে চিল বেড়ায় ডানা মেলে,

পাতাকুড়ানি মেয়েটি ঝাড়ু হাতে বনে-বাদাড়ে ঘোরে

নিভৃত নদী তীর, আম-জাম তলায় গরু বাধা চুপ-

পুকুর,কলাবাগান, কুমড়োলতার চাল সবই নীরব

ওড়া চুল নিয়ে কান্নামাখা চোখে দেখে স্কুলে যাওয়া শিশুদের;

ডাঙায় লুকানো কোন বিপদের স্রোতে ভেসে যায় হিংস্রতায়,

লণ্ডভন্ড হয়ে যায় পৃথিবীর ঝকমকে রোদ, ঘরে সে বন্ধ হয়।

 

বর্ষার অজস্র জলধারা টিনের চালে, মেয়েটির চোখেও জল,

বাবা-মা,পাড়া-পড়শি নারী একই প্রশ্নে হাজির বারবার।

চৌকিতে শুয়ে ওলট-পালট ভাবে মেয়েটি – “কোন বাচ্চা, কার”?

কিছুই জানে না পাতাকুড়ানি বালিকা, শুধু জানে  নিভৃতে,

জন্তুসম টেনে গভীর বনে প্রকাণ্ড গাছের পিছনে ভিড়িয়েছে ;

অসহ্য ব্যথায় কেঁদে-কেটে আবার পা টেনে পাতা কুড়িয়েছে।

 

দূরে নদী আর আকাশের চিল সাক্ষী তার; কোথায় পাবে নাম

পাড়া জুড়ে চলে মানুষের মিথ্যে ছুটাছুটি আর কথামালা।

পেটটি ওর কুমড়ার মতো বড় হতে থাকে, যেন স্তব্ধ পুকুর-

বাঁশপাতার ঝিরিঝিরি দোলাতে পেটে কী যেন নড়ে-চড়ে

ভ্যাপসা দুপুরে তা জেনে মা-মেয়েতে মাটিতে কাঁদে পড়ে।

 

ক’মাস পরে এক সন্ধ্যায় রক্তে গড়াগড়ি বালিকা হাসপাতাল,

ব্যথার রাজ্যে হারিয়ে  আঙুর খেতে মন  যে চায় বারবার।

ফলটা মিষ্টি শুনেছিল একবার; আমের চেয়েও বেশি কি না?

বাবা ডাক্তারের পা ধরে কাঁদে-  মেয়েটি মরন দশায় ওটিতে,

চলে যায় স্বপ্নের হিমেভরা কোন পশ্চিমে কলঙ্ক মুক্তিতে।

 

খবরের কাগজ প্রবল গুরুত্বে ছাপে মেয়েটির নিষ্পাপতা,

অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টিরা ঝরে- পাঠকের মনের মাটিতে;

সবুজপানার ডোবায় জাপানিফুলের মতো উঁকি দেয় তার মুখ,

তড়িঘড়ি পুরুষের টাকায় বাবা ভালো খায়, ভোলে শোক-দুখ।