November 21, 2024
বয়ঃসন্ধি-Adolescenceঅনুবাদসাহিত্যফিচার ৩

‘রুক্ষ কঠিন’ কন্যা সন্তান গড়ে তুলবেন ঠিক যেভাবে

আমেরিকান নারীবাদী লেখক জেসিকা ভ্যালেন্তির The Upside of Raising a ‘Rude’ Daughter শীর্ষক লেখাটি মার্চ ২০২০ এ একটি অনলাইন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হলো।।

 

আমরা চিরকাল মেয়েদের নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে তাদের আচার ব্যবহারকেই মূল্য দিই বেশি

আমার মেয়ে— মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করাকে ঘৃণা করে। তার মধ্যে যে বিষয়গুলো আমি পছন্দ করি এটি এর মধ্যে অন্যতম। সে দারুণ মিষ্টি এক বাচ্চা। কিন্তু কারো খারাপ লাগার কারণ না হওয়ার যে ইচ্ছা, তার অর্থ মাঝে মাঝে এটা দাঁড়ায় যে— কোনো আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও কারো জোরাজুরিতে খেলতে যেতে হবে বা যখন নিজের পক্ষে দাঁড়ানো উচিত তখন নীরব থাকতে হবে।

অন্য অনেক মেয়েদের মায়ের মতো তাই আমিও চেষ্টা করছি আমার মেয়ে লায়লাকে শেখাতে যে, কীভাবে কাউকে আঘাত না দিয়েও বা নিজেকে খারাপ মানুষ না ভেবেও ‘না’ বলতে হয়। এটা আসলে আপনি যা ভাবছেন তার চেয়ে কঠিন কাজ। বিশেষত যখন তার আশেপাশের পরিবেশ ও প্রায় সবকিছু তাকে এই শিক্ষাই দিয়ে থাকে— মেয়েদের সবকিছুর উপরে কোমলমতি হতে হয়।

যেমন এই সপ্তাহে আমরা জানলাম,  উটাহ রাজ্যের এক স্কুলে মেয়েদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেই ছেলে আহ্বান করছে তার সঙ্গেই নাচতে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি ওই ছেলেটি যদি অতীতে মেয়েটিকে বিরক্ত করে থাকে তবুও তার সঙ্গে নাচতে হচ্ছে।

স্থানীয় এক মা যার নাম অ্যালিসিয়া হবসন, তিনি ফেসবুকে এই নিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানান, তার মেয়েকে এমন এক ছেলের সঙ্গে নাচতে বাধ্য করা হয়েছে যে কি না এর আগে তার প্রতি সেক্সুয়াল মন্তব্য করেছিল এবং বারবার মেয়েটির অস্বস্তির কারণ হয়েছিল। হবসন লিখেছিলেন, যদি সে (মেয়ে) না চায় তবে ছেলেটির পাশে দাঁড়ানো বা তার শরীরে ওর (ছেলে) হাত রাখার বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে না। কোনো কারণে বা কারণ ছাড়াই যে কাউকে ‘না’ বলার অধিকার মেয়েটির আছে। তার শরীর তারই শরীর এবং সে যদি কারো সাথে নাচতে না চায় তবে এটা তার বিশেষ অধিকার।

স্কুলটি যদিও তাদের সিদ্ধান্তেই অটল আছে। হবসনের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, নাচের আমন্ত্রণ বাচ্চাদের গ্রহণ করা উচিত– বিষয়টি একটি ভালো কাজ এবং এটাই স্কুলের নীতি হিসেবে অব্যাহত থাকবে।

উটাহ রাজ্যের আরেক স্কুল ২০১৮ সালে একই কারণে তুমুল সমালোচিত হয়েছিল। ওই সময় স্কুলের এক মুখপাত্র এমন এক অভিযোগের জবাবে বলেছিলেন,  “আমরা ‘উদারতা’ ছড়িয়ে দিতে চাই, তাই যখন কেউ নাচতে বলে তখন ‘হ্যাঁ’ বলুন”।

তবে ‘উদারতা’ কার প্রতি? এবং সবসময় কেন মেয়েদের অধিকার ও ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়েই ছেলেদের প্রতি ‘উদার’ হতে হয়?

আমরা ইতিমধ্যে জানি যে, স্কুলগুলোতে যৌন হয়রানির মতো সমস্যা রয়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে— ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মৌখিকভাবে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে, আর ২১ শতাংশ যৌনাত্মক স্পর্শ, জড়িয়ে ধরা, গুঁতো ইত্যাদির শিকার হয়। মেয়েদের শেখানো হয় যে ‘না’ বলা উচিত নয় এবং পক্ষান্তরে ছেলেদের শেখানো যে, তারা সবসময় মেয়েদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে— এরকম শিক্ষাই এ সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আমার পরিবারসহ অনেক পরিবার এখন বাচ্চাদের যেটা শেখাচ্ছে তা হলো— তাদের শরীর তাদের নিজের। যদি স্কুলগুলো সত্যিই সাহায্য করতে চায় তবে তারা কীভাবে ভদ্রতার সাথে ‘না’ বলা যায় এটা টিনএজারদের শেখাতে পারে।

বহু আগে থেকে মেয়েদের ‘কোমল’ ও ‘সহজে মেনে নেওয়ার’ অভ্যাসের কারণে অতিমূল্যায়ন করা হচ্ছে। আমরা এখন মেয়েদের শেখাই, তাদের সবসময় নম্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাদের নিজেদের মূল্যবোধ আরেকজন তাদের নিয়ে কী ভাবে তার উপর নির্ভর করে না।

সুতরাং এখন আমি লায়লাকে শেখাচ্ছি কীভাবে কঠোর হতে হয়। কীভাবে কারো হাত কাঁধের উপর থেকে সরাতে হয়। এটা শেখা তার জন্য কঠিন, কারণ সেও সবার পছন্দের একজন হতে ভালোবাসে। এবং আমিও তাকে সদয় হৃদয়ের অধিকারী একজন হিসেবে দেখতে চাই, আমি তার এই গুণকে পরিবর্তন করতে চাই না।

তবে মধুর স্বভাবের হওয়া এবং ভয়ে জড়োসড়ো থাকার মাঝে পার্থক্য আছে। আমি আমার বাচ্চাকে শেখাতে চাই, কাউকে ‘না’ বললে তাতে খারাপ মানুষ হয়ে যাওয়ার কিছু নেই, বরং ‘না’ বলেও কেউ ভালো মানুষই হতে পারে। আমি শেখাতে চাই কাউকে ‘না’ বলা অভদ্রতা নয়। বরং আসল অভদ্র লোক হলো তারাই যারা, আশা করে মেয়েরা তাদের শরীর ও মনের উপর নিজের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে ছেলেদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেবে।