সিগারেট খেয়ে পাড়ার মেয়েরা যেভাবে ধর্ষণ হয় এবং একটি স্মৃতি!
সাদিয়া মেহজাবিন।। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এখন এক সেকেন্ডের ব্যাপার। বসুন্ধরা ক্লাবে নারী ফুটবলারদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া, কমলা হ্যারিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া কিংবা বাংলায় নারী শাসন আমল নিয়ে এ দেশের গোঁড়া লঘিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর যত না মাথা ব্যাথা তারচেয়ে বেশি মাথার উপর কিলবিল করে কোন নারীর বুকের চামড়া কত ইঞ্চি পরিমাণ দেখা যায় কিংবা কোন নারী সিগারেট নামক বস্তুকে চুমু দিচ্ছে জনসম্মুখে। কেবল তালিকা এখানে সীমা ছাড়ায় না, তালিকাতে গিয়ে যুক্ত হয় জনসম্মুখে প্রেমিকের আলিঙ্গন কিংবা চুমু।
এই সিগারেটে টান দিতে আমরা রাস্তাঘাটে অসংখ্য ছেলেদের দেখতে পাই। যদিও মাদক সকলের জন্যেই ক্ষতিকর তবে যখন আপনাকে দমিয়ে রাখতে, স্বাধীনতা হরন করতে কিছু গোঁড়া এসে কেবল মেয়েদেরকে বাণী দেয়, ‘ধর্ষণ হইলে আইসেন নাম কইতে’! তখন অবশ্যই দু কলম লিখে প্রতিবাদ না করলে নিজের আত্মায় গিয়ে বাঁধে।
যাই হোক জনসম্মুখে ধুমপান আইনত দণ্ডনীয়। আজকে ভাইরাল হওয়া সিগারেট টানা মেয়েটার থেকেও আমার বেশি কান যায় ঐ জনসম্মুখের আওয়াজে যেখানে বলা উক্তিগুলো আপনাকে চিন্তায় ফেলবে- এখনো এই বাংলার সমাজ নারীর প্রতি এমন ভাষা ব্যবহার করে! “ধর্ষণ হইলে আইসেন নাম কইতে, সিগারেট খাবেন না, আমরা পুরুষ তাই খাইসি কিন্তু এই অঞ্চলে তো মেয়েরা খায় না তাই এমন হচ্ছে আপু, এদের মত মেয়েদের জন্যেই সমাজের মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে” ইত্যাদি। মজার ব্যাপার যিনি ভিডিও করেছেন তার ভিডিও এডিট করা কপি দেখে মজা পাচ্ছিলাম যেখানে জুম করে কেবল মেয়েটার স্তনকে ফোকাস দেওয়া হচ্ছিল। মানে নারী চরিত্র খারাপ প্রমাণ করতে স্তনকেই হাতিয়ার করছে এই সমাজ। আহা! ১৫৫(৪) ধারাগুলো আপনারা পড়ে দেখেছেন? কই প্রতিবাদ যে করলেন না? কই ধর্ষণ হলে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ করা গেলে সিগারেট খাওয়া মেয়ের ভিডিও ভাইরালের হুমকিতে আমি অবাক হই না।
এই ঘটনাতে আমার নিজের এক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেলো। এই রমজান মাসে চট্টগ্রামের লালখান বাজার মোড়ের পাশে আমি ও আমার পরিচিত কিছু মানুষ নিয়ে টঙ্গের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। রমজান মাস তাই দোকান কালো পর্দা দিয়ে ঢাকা। তাই আমিও ভাবলাম সিগারেট ধরালে কারো সমস্যা হবে না। আমি সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে টানছি। আমার সাথে থাকা এক দাদা বললো, ঐ লোক মেইবি তোর ভিডিও বানাচ্ছে। আমরা সাথে সাথে গিয়ে বললাম, আংকেল অনুমতিবিহীন ছবি, ভিডিও করা আইনত অপরাধ। আমাদের মনে হচ্ছে আপনি ভিডিও করছেন। হুজুর, মাথায় টুপি দিয়ে রোজার মাসে চায়ের দোকানে চা সিগারেট খাচ্ছে এবং আমার ভিডিও বানাইতেছে। আমরা যখন জোর করে বললাম দেখান কী করছেন, তিনি আমাদের বললেন আপা আপনি যা করছেন উচিত হচ্ছে না তবে আমি কিছু করি নাই। আমরাও ধমকের সুরে বলছি, আমার অন্যায় রাখেন মিয়া নিজের মোবাইলে কুকর্ম দেখেন। পরে প্রমাণ হইছে উনি এই কাজটা করতেছিলেন এবং আমরা ওসির ভয় দেখানোতে উনি মিথ্যা বলনেন উনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট চ্যানেলে কাজ করেন। আমরা অবাক হয়ে যাওয়াতে উনি বুঝতে পেরেছেন আমাদের পরিচিত আছে সেখানে। বললাম নিয়ে যান আপনার অফিসে। পরে গিয়ে দেখলাম সেটা অফিস না, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অফিসে চাকরি করা একজনের বাড়ি যেখানে তিনি চাকরি করেন ড্রাইভার হিসেবে। যাই হোক আমরা বললাম আমরা থানায় যাব, প্রমাণ নিলাম। লোকটার ছবি তুলে নিলাম ইত্যাদি। পরে উনার বস বললেন গরীব মানুষ, কাজে নতুন, মাফ করে দেন। ঝামেলা না করে চলে আসলাম। তবে কিছু উচিত কথা বলে আসছিলাম, জানিনা কাজে আসবে কিনা।
বাসায় এসে খুব মন খারাপ হয়েছিল, তবে ভাবলাম দেশ একদিন আলোর মুখ দেখবে। আজকাল যা হচ্ছে তা দেখে নিরাশ হওয়া ছাড়া কাজ নেই। তবে একান্ত নিজের মতামত থেকেই বলছি ভিডিওর সে আপুটার উচিত ছিল ৯৯৯ নাম্বারে কল দেওয়া কিংবা নিজে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা অথবা পুলিশকে ডেকে দরকার হলে ৫০ টাকা জরিমানা দিয়েও নিজের স্বাধীনতার লড়াই চালিয়ে যাওয়া। অফ মাইকে যারা বলছেন ধর্ষণ হচ্ছে কেবল সিগারেট খাওয়া মেয়েদের জন্যে তাদের কাছে প্রশ্ন এত পুরুষ এখন যে ধর্ষণ হচ্ছে, তার জন্যে দায়ী কারা? নুসরাত, তনুদের ইতিহাস খোঁদাই কি হয়নি এখনো এই ইতিহাসে?
যারা ভিডিও করেছেন তাদের নিয়ে মাথা ব্যাথা করছি না তবে আমরা প্রতিবাদ না করে করে আজকে এমন হচ্ছে, কালকে আরো অনেক কিছু হবে, তাই প্রতিবাদ করুন।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]