November 21, 2024
জীবনের গল্পফিচার ৩

এলিজা’র জয় হোক

লামিয়া ইসলাম।। যেখানে উন্নয়নশীল অনেক দেশেই এখনো অনেক মেয়েই স্বামী সেবাকেই একমাত্র ভবিষ্যৎ বলে ধরে নেয়, আজও তৃতীয় বিশ্বের অনেক পরিবারেই স্বামীর হাতের মার খেয়ে, বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে সামান্য প্রতিবাদ করাকেও বেয়াদবি বলে চাপিয়ে দেওয়া হয়, তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণির অনেক পরিবার মেয়েদের লেখাপড়া শেখায় শুধুমাত্র ভালো বিয়ে হবার আশায়, যেখানে নারীই পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা কাঠামোর বাইরে এসে নিজের অধিকার, নিজের সুখের কথা ভাবতেই শেখেনি; সেই পৃথিবীতেই জন্ম নেয়া এক নারী- এলিজা কার্সন দেখেছেন এমন এক স্বপ্ন যার মতো সাহস করে উঠতে পারেননি অনেক নামীদামী মহাশূন্য গবেষনাবিদ বা মহাকাশচারীও। তিনি নারীত্বের চিন্তার বাইরে গিয়ে তিনি একজন মানুষ হিসেবে ভাবতে ও সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছেন। সভ্যতার জন্য অবদান রাখতে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হয়েছেন স্বাভাবিক জীবন ও নিজের ভবিষ্যৎকে।

এলিজা কার্সন- তিনি অজানা অচেনা মঙ্গল গ্রহের বুকে পদচিহ্ন আঁকা প্রথম মানুষ হতে চান, এবং হতে যাচ্ছেন সম্ভবত।

এলিজা সম্পর্কে বলার আগে মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে কিছু বলে নেই। আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের জন্য লালগ্রহ বলে যাকে ডাকা হয় সেই মার্স বা মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়ার সম্ভবনা আছে এবং প্রাণ যদিও বা না থাকে তাকে প্রাণের বসবাসের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। এবং সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীর সাথে সবচেয়ে বেশি মিলও রয়েছে এই মঙ্গল গ্রহের, তাই এটি নিয়ে গবেষণা বাড়ছে।

এলিজা কার্সন মঙ্গল গ্রহে গিয়ে সেই গবেষণার কাজে সহায়তা করতে চান। যেহেতু চাঁদ ছাড়া মহাকাশের অন্যান্য কোনো গ্রহ উপগ্রহতে এখনো মানুষের পদচিহ্ন পড়েনি, সুতরাং সেখানে কী ঘটতে পারে, তার কোনো প্রত্যক্ষ ধারণাও মানুষের নেই। বরং না ফিরে আসার অর্থাৎ সহজ কথায় মৃত্যুর সম্ভাবনাই বেশি।

নাগরিকত্বে আমেরিকান এলিজা কার্সন, যার জন্ম হয় ২০০১ সালের মার্চের ১০ তারিখ। সিঙ্গেল প্যারেন্ট বাবার কাছে বড় হয়েছেন একমাত্র মেয়ে এলিজা। তিনি নাসা আয়োজিত বিভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে গিয়েছেন এবং অসংখ্য বই ও ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে তাকে নিয়ে। মাত্র তিন বছর বয়সে “দ্যা ব্যাকইয়ার্ডি গানস” নামের কার্টুন দেখে মহাকাশ সম্পর্কে শিশু এলিজার আগ্রহ তৈরি হয়। মাত্র সাত বছর বয়সেই সে আলাবামার স্পেস ক্যাম্প এ যান। বারো বছর বয়সেই সে আলবামা, কানাডা, কুইবেক ও তুরস্কের ইজমিরে নাসার তিনটি ভিন্ন ক্যাম্পে অংশ নেন। মহাকাশের বেসিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন পরিচালনা ও পারদর্শীতা অর্জনের জ্ঞানও আয়ত্ত করেন।নাসার মহাকাশচারী সান্ড্রা তাকে এই বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন। বর্তমানে তিনি ফ্লোরিডা ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে অ্যাস্ট্রোবায়োলজি নিয়ে পড়ালেখা করছেন।

মানুষের স্বপ্নের বিশালতার কথা চিন্তা করলেই কেমন অবাক লাগে। আর এলিজা কার্সনের স্বপ্ন যেন সব বিশালতাকে হার মানায়। তার মতে- ‘‘Always follow your dream and don’t let anyone take it from you.’’

আমাদের দেশেও হয়তো জন্ম নেয় এলিজার মত মেয়েরা, যারা অনেক বড় স্বপ্ন দেখে, কিন্তু আত্মপ্রকাশের আগেই হাজারো বাধায় তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রত্যাশা করি, সব মেয়েই স্বপ্ন দেখতে শিখুক, তাদের স্বপ্নগুলো ঘর সংসারের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে যাক মহাশূণ্যে, সভ্যতার অগ্রযাত্রায় তারাও অবদান রাখার অঙ্গীকার করুক।

অভিনন্দন এলিজা। তোমার জয় হোক।