স্টেরিওটাইপিংয়ের শিকার হয় পুরুষও
সিদ্রাত মুনতাহা।। সমাজের বেধে দেওয়া নিয়মে নারীদের চলার গল্প আমরা প্রতিনিয়তই দেখি।এবং সেই স্টেরিওটাইপিং ভাঙ্গতে নারীদের কত অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তা অজানা নয়। তবে এই স্টেরিওটাইপিং এর শিকার যে পুরুষও হয়, তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা যদি বলা হয়, আমাদের সমাজে পুরুষমাত্রই বলশালী, কর্কশ ধরণের হবে। পুরুষদের আবেগ থাকবেনা। পুরুষরা নরম সরম হবেনা। পুরুষ হবে খুব ম্যানলি। আর কোনো পুরুষ ম্যানলি কিনা এটাও ডিসাইড করা হয় পুরুষের ব্যাহিক আচরণ দিয়ে। একজন পুরুষ যেমনই হোক তাকে জোর করেই শক্ত থাকার অভিনয় করতে হয়। আবেগ প্রকাশের স্বাধীনতা তার থাকে না। আবেগ প্রকাশ করলে শুনতে হবে “পুরুষ মানুষের এত আবেগ কেন?” কষ্ট পেলে কাঁদলে শুনতে হবে ‘‘মেয়েদের মত কাদিস কেন?”
অনেক সময় নাকি সিগারেট খাওয়াও পুরুষত্বের পরিচয় বহন করে। ব্যাপারটা কি হাস্যকর না? অনেক পুরুষ আছেন যারা ব্যক্তিগতভাবে সিগারেট খাওয়া পছন্দ না করার পরও বন্ধুদের সামনে ইমেজ রক্ষার্থে সিগারেট খান।
লাল, গোলাপি যেন পুরুষদের নিষিদ্ধ রং। লাল গোলাপি ধরণের রং শুধু মেয়েদের পরতে হবে।কেন? কোন পুরুষের কি লাল গোলাপি পছন্দ নয়? অবশ্যই পছন্দ। কিন্তু তারা এ ধরনের রং ও রঙীন ডিজাইনের কাপড় সবসময় পরতে পারেনা বুলি হওয়ার ভয়ে। কারণ সমাজ তো রঙের মধ্যেও জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন করে দিয়েছে।
“গোলাপি তো মেয়েদের কালার।”
“এমন মেয়েদের কালারের কাপড়চোপড় পরেছিস কেন?”
“এত কালারফুল পরেছিস কেন, হাফ লেডিস লাগে।”
সব পুরুষেরই কি তবে ডার্ক ও ক্যাজুয়াল ভালো লাগবে? এটা কি জরুরি?
শুধু মেয়েরা না, পুরুষদের অনেকাংশ মনের মত পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা পায় না।
এরপর আসে গ্রাজুয়েশনের পর চাকরির কথা বলে বলে মেন্টাল টর্চার। মেয়েদের যেমন গ্রাজুয়েশন শেষ না হতেই বিয়ের চাপ, ছেলেদের তেমন চাকরির অতিরিক্ত চাপ। হয়তো ছেলেটা অন্য কিছু করতে চায়, হয়তো সে সময় নিতে চায়। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক চাপে ভালো না লাগলেও এমন কোন চাকরিতে ঢুকে যেতে হয় যা সে কখনোই পছন্দ করত না। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিটের পর ছেলেদের চাকরি না হওয়াটা যেন এক প্রকার অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। মুরুব্বি আত্মীয়স্বজনের প্রতিনিয়ত চাকরি বিষয়ক প্রশ্নে কত ছেলে ডিপ্রেশনে পড়ে যায় সে হিসাব অজানাই রয়ে যায়।
এরপর আসে বিয়ের বাজারে স্যালারি দিয়ে যোগ্যতা বিচারের ব্যাপারটা।
আমরা মুখে যতই বলিনা কেন আমরা প্রগ্রেসিভ হয়েছি, আসলে কতটা হয়েছি? যদি প্রগেসিভ হতাম তাহলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের চেয়ে স্যালারিকে বেশি গুরুত্ব দিতাম না।
অনেক সম্পর্ক ভেঙ্গে যায় এই একটামাত্র কারণে। ছেলেমেয়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো। সবই ঠিক আছে। বিপত্তি বাধে ছেলের আর্থিক অবস্থায়। যেন আর্থিকভাবে যে বড় নয়, সে ভালো নয়। মেয়ের পরিবার মেনে নেয়না।
দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেকে ভালো ছেলে মানেই বোঝে ভালো স্যালারি। একটা ছেলে সবদিক থেকে ভালো হওয়ার পরও রিজেক্ট হয়ে যায় আর্থিক অবস্থান দুর্বল হওয়ার জন্য। এমন বলছি না যে অর্থবিত্তের দরকার নেই। আছে অবশ্যই। তবে তা যেন না হয় ফাস্ট প্রায়োরিটি।
এমন অনেক ব্যাপার প্রতিনিয়ত মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও ফেস করে। কেন এত নিয়ম? কেন এসব বিভেদ? কেন আমরা একজন ছেলের এমন হতে হবে, একজন মেয়ের এমন হতে হবে- এসব না ভেবে শুধু তাদের একজন সাধারণ মানুষ ভাবতে পারিনা, যার নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আছে!
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]