November 1, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

মানসিক স্বাস্থ্য যখন অন্যদের কাছে ‘ঢং’

নুজহাত তাহসিনা।। যখনই বয়স ১৩ তে পড়লো তখন থেকেই বাঁধা আসা শুরু জীবনে। আর ঠিক তখনি একটা মেয়ের কাছে জটিল হতে শুরু করে সমাজ। আমরা সবাই চাই স্বাধীন ভাবে বাঁচতে, নিজের পছন্দের পোশাক পরতে। কিন্তু আমাদের সমাজ কী ভাববে কী বলবে এই ভয়ে নিজের ইচ্ছাকে মেরে ফেলে সমাজের জন্য নিজেকে তৈরি করি। আর দিনে দিনে অবাক হই যে ছোট্টবেলায় না ভাবতাম শার্ট প্যান্টই পরবো, তাহলে আবার ওড়না কীসের?

মনে আসতে থাকে হাজারো প্রশ্ন – আচ্ছা ? ওড়না না পরলে কি আমি খারাপ? আচ্ছা নিজের মতো চললে কি মানুষ খারাপ ভাবে? কিন্তু কেন ভাবে? আমিও তো একটা মানুষ, আমার কি মন চায়না নিজের মতো করে বাঁচতে? ঠিক তখনি একটা মেয়ের মানসিক অবস্থা যে কি হয় তা যে নিজে এই সময়ের মধ্যে দিয়ে যায় শুধু মাত্র সেই জানে। অনেকে তাদের নিজের সমস্যাটা নিজের কাছের রাখে মানুষের কাছেও বলতে পারেনা। কেন বলতে পারে না?

– মেন্টাল হেলথ আসলে কী?

– নাটক করো না।

– ঢং করার আর জায়গা পাওনা, সব বুঝি তো কাজ না করার ধান্ধা।

একটু খেয়াল করে দেখি, আমরা যখনই বলি আমার মেন্টাল হেলথ ভালো নেই, মানসিকভাবে স্ট্যাবল না, একটু মানসিক ভাবে খারাপ সময় যাচ্ছে, আমাদেরকে এইসব কথা শুনতে হয়। আবার সেই আমি যদি পড়ে গিয়ে হাত কেটে যায়, কোথাও ব্যাথা পাই, তাহলে দেখা যায় মানুষের দৌড়াদৌড়ি লেগে যায়। কেউ বলে বরফ দে, আবার কেউ বলে- না না ডক্টরের কাছে যা।

আমাদের একটা ফিজিক্যাল হেলথ আছে ঠিক, তেমনিভাবেই কিন্তু আমাদের একটা মেন্টাল হেলথ  আছে। ফিজিক্যাল হেলথ নিয়ে আমরা যতটা সচেতন, মেন্টাল হেলথ নিয়ে কিন্তু ততটা সচেতন না। সত্যি বলতে, শারীরিকভাবে আমরা যখন একটু অসুস্থ থাকি, সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়, আমাদের দেখতে আসে। কিন্তু ঠিক সেই মানুষটাই যখন মানসিকভাবে থেকে একটু অসুস্থ হয়, আমরা তখন সেইটার উপযুক্ত চিকিৎসা দেইনা। বলি, আরে পাগল হইসো না? পাগলের ঢং করো, না? – এই কথা গুলা বলেই তাকে থামিয়ে দেয়া হয়। এই কথাগুলা যথেষ্ট পীড়াদায়ক বটে। তার অবস্থার উন্নতি তো হয়ই না, উল্টা তাকে আরো সমাজের কাছে এইগুলা খারাপ কথা শুনে ছোট হয়ে যেতে হয়। ঠিক এই কারণে কেউ কারো কাছে তার মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে। কারণ তাকে তো কটু কথা শুনতে হবে। নিজের মধ্যেই নিয়ে বইতে থাকে, চলতে ফিরতে থাকে। এবং আস্তে আস্তে নিজের মানসিক অবস্থা আরো খারাপ করে।

যদি আমরা চিন্তা করি আমাদের শারীরিকভাবে কোনো অসুস্থতা কউকে বলবো না, চুপচাপ নিজের মধ্যে নিয়ে বসে থাকবো, তাহলে রোগটা কিন্তু চলে যাবে না, আস্তে আস্তে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। যেইটা প্রতিনিয়তই সবার সাথে হচ্ছে। মানসিকভাবে আমরা আরো আরো আরো স্ট্রেসড হয়ে যাচ্ছি। আসলে আমাদের সবসময় পরিস্থিতি এক থাকে না। খারাপ সময় আসলে ভেবে বসে থাকার কিছু নেই এইটাই স্থায়ী। মনে রাখতে হবে, সময়ের সাথে সাথে সব পাল্টায়। তাই সেইমত ব্যবস্থা নিতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]