December 23, 2024
সাহিত্যকবিতাফিচার ২

ইরমা কুর্তি’র কবিতা

ইরমা কুর্তি (Irma Kurti) মূলত আলবেনিয়ান কবি, লেখক, গীতিকার, সাংবাদিক ও অনুবাদক; তবে জন্মসূত্রে ইতালিয়ান। ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করছেন। আলবেনীয় ভাষায় ২টি , ইতালীয়তে ১৫টি ও ইংরেজিতে  ৪টি গ্রন্থ রয়েছে তার। তার রচিত প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের জন্য ইতালীয় ও ইংরেজি – উভয় ভাষায় প্রায় ১৫০টি গান রচনা রয়েছে। কবি ইরমা কুর্তি ইতালি-সুইজারল্যান্ডের অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি সাহিত্যের জন্য ইউনিভার্সাম ডোনার আন্তর্জাতিক পুরস্কার (২০১৩); ইতালির সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পিস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শান্তির জন্য আজীবন রাষ্ট্রদূত মনোনীত হয়েছেন। ২০২০ সালে তিনি The Encyclopaedia of Poetry-র উইকিপোসিয়ার সম্মানিত রাষ্ট্রপতি উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ২০২১ সালে তিনি ইতালির আরবেরেশ কমিউনিটি দ্বারা লিরিয়া (স্বাধীনতা) উপাধিতে ভূষিত হন।

ইরমা কুর্তির কবিতা বাংলায় রূপান্তর করেছেন মাসুদুল হক ।।

 

 

আমি ধূসর আকাশকে চিনতাম

(I KNEW THE GREY SKY)

 

আমি ভালবাসার তীব্র শীতকাল কাটিয়েছি

শৈত্যপ্রবাহ , বৃষ্টি এবং তুষার সহ;

আমি জানতাম না এই বিশ্বের

অন্য কোথাও ছিল ভিন্ন কোনো ঋতু।

 

প্রতিদিন গভীর খাদে নিমজ্জিত হয়ে,

আমি অনুভব করেছি শিহরণ ও শীতলতা।

আমার উপর–এক অন্তহীন ধূসর আকাশ;

আমি আলো, সংগীত ‌ও গান হারিয়ে ফেলি।

 

এই তীব্র ও মারাত্মক, চিরকালীন সময়

আমার সমস্ত সুখ ও আনন্দ ছিনিয়ে নিয়েছে।

আমি অন্য ঋতুদের কথা ভুলে গেছি।

আমি তোমার সঙ্গে থেকেও একা ছিলাম।

 

ঐ শীতে  কোনো রকম আদর ছাড়াই,

আমার ভীষণ উষ্ণতার প্রয়োজন ছিল;

কিন্তু তুমি আমাকে দিতে পার নি;

এমনকি, তুমি আমাকে ‘বিদায়’ও বল নি

আমি শুধু ধূসর আকাশকে চিনতাম।

 

 

আমাকে ছাড়া

 (WITHOUT ME)

 

তুমি কী করবে

এই নিষ্ঠুর বিশ্বে

আমাকে ছাড়া?

তুমি কীভাবে জাগবে?

তুমি কীভাবে ঘুমাবে?

আমাকে বল!

 

এই বেমানান জীবন যা তুমি যাপন করছো–

উদাসীন এবং তিক্ত,

সম্পূর্ণ আশ্চর্য

কিন্তু অসন্তুষ্টে ভরা

এ কি তোমাকে গ্রাস করে না?

এ কি তোমাকে পাগল করে না?

তুমি কী করবে

আমাকে ছাড়া?

 

আমি চোখ বন্ধ করব না

(I’LL NOT SHUT MY EYES )

 

আমি চোখ বন্ধ করব না;

প্রতিটি স্পর্শে তোমাকে স্মরণ করতে,

প্রতিটি আদর আর চুম্বনে,

আমি তোমার ইমেজ মনে ধরে রাখবো।

তোমার ইমেজ ধরে রাখতে

প্রতিটি কাঁপুনি অথবা ফিসফিসানিতে,

প্রথমবারের মতো,

প্রতিটি শব্দ এবং দীর্ঘশ্বাসে–

আমি চোখ বন্ধ করব না।

 

দানিয়ুব 

(ON THE DANUBE)

 

ঢেউয়ের তালে তালে  অপরিসীম এক তরঙ্গের

দোলায় জাহাজ আমাকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে;

এক গ্লাস মদিরা আমার হাতে স্পন্দিত,

যেন এটি কফি, আমি এতে চুমুক দিচ্ছি।

 

গাংচিলগুলো দানিয়ুব জুড়ে উড়ে উড়ে

স্মৃতি জাগিয়ে আবার ওদের  দূরে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি শত শত ভাবনার পাঁকে বিভক্ত,

কিন্তু সেগুলো তরঙ্গের বিশৃঙ্খলায় মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

“এই গোপনীয়তাটুকু আমাদের মধ্যে থাকা উচিত,”

একে একে শব্দগুলো বিভক্ত করে আমি বলি,

“আমি এখন যাদুবিদ্যার দ্বারপ্রান্তে আছি,

সীমান্ত পেরোনোর ​​জন্য;আমাকে জড়িয়ে চুমু খাও।”

 

আমার বোকামির জন্য আমরা দুজনেই হেসে উঠি;

তারপর শূন্য গ্লাস নিয়ে খেলায় ডুবে যাই।

দানিয়ুবকে পিছনে ফেলে একটা অদ্ভুত দিন সুন্দর

হয়ে ওঠে;অজানা অনুভূতি আমাকে জাগিয়ে তোলে।

 

আমি একটি পাতার মতো কাঁপছি 

(I TREMBLE LIKE A LEAF)

 

এটি প্রায় প্রতিদিনই ঘটে চলেছে,

সেই নস্টালজিয়া আমার আত্মায় এসে টোকা মারে

এবং সেল ফোনে কল করার পর

মনে হয় তুমি আমার সাথে কথা বলছো, মা:

“সোনা, উঠে ভাল পোশাক পরে নাও, ঠান্ডা লাগছে,

ক্লান্ত হয়ে পড়ো না, নিজের যত্ন নিও! ”

আমি সুরক্ষা বোধ করি, ভয় পালিয়ে যায়;

তার কণ্ঠ শুনে আমি একটা শিশু হয়ে উঠি …

আমার মা আর ফিরে আসতে পারবে না

আমি শ্বাস নিতে পারছি না;  একা ও দুর্বল লাগছে;

মা আর মায়ার চোখে আমাকে আর আদর করবে না,

তার স্নেহ আর আমাকে বাঁচাতে পারবে না।

আমার হৃদয় থেকে কেউ তাকে সরাতে পারবে না,

সে চলে গেছে, চলে গেছে, চিরতরে চলে গেছে,

আমরা একটি অশ্রুবিন্দুকে ভাগ করতে পারি না,

আনন্দ আর সুখ‌ও ভাগাভাগি করতে পারি না।

আমি সবসময় এই বিস্ময়কর সংবেদনে বাস করি,

অপেক্ষায় আমি, যেন শরতের পাতার মতো কাঁপছি,

সেল ফোনের প্রতিটি রিংয়ের পর, মাগো,

তোমার কন্ঠ আমাকে বাতাসের মতো স্নেহ করবে।