May 15, 2024
ফিচার ৩ফিটনেস ও সুস্থতা

মায়ের ইম্পোস্টার সিনড্রোম: যখন নিজেকে প্রতারক মনে হয়

শ্যানন মুজের লেখা Imposter Syndrome in Motherhood শীর্ষক এই প্রবন্ধটি প্রকাশ হয়েছিল বিদেশি অনলাইন পত্রিকা গুডমেন প্রজেক্টে। লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সাদিয়া মেহজাবিন।। 

আমি আমার মেয়েকে নিজের গর্ভে নয় মাস ধারণ করেছি। অন্যান্য মায়েদের মতো আমিও নানান অনুভূতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। প্রসব থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সব অনুভব করেছি।

কিন্তু যখন সে আমার হাতের ওপর শুয়েছিল এবং কাঁদছিল, আমি তাকে থামাতে পারছিলাম না। তাকে বুকের দুধ খাওয়াতেও আমার অসুবিধে হচ্ছিল। তখন আমার মনে হয়েছে, আমি হারিয়ে গিয়েছি, একলা। আমার নিজেকে একজন প্রতারক মনে হয়েছে।

সহজ বাংলায় বললে, ইম্পোস্টার সিনড্রোম মূলত একটি অভিজ্ঞতা যেখানে আপনার নিজেকে একটি মিথ্যা মনে হবে। আপনার সর্বক্ষণ মনে হবে যেকোনো সময় আপনার প্রতারণা লোকে ধরে ফেলবে। যেমন আপনি যেখানে আছেন সেখানে নেই, আপনি সেখানে কেবল অলৌকিক ভাগ্যে গিয়েছেন।

আপনার সামাজিক অবস্থান, কাজের ইতিহাস, দক্ষতা অথবা অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র যাই থাক না কেন ইম্পোস্টার সিনড্রোম যেকোনো ব্যক্তির হতে পারে। ইম্পোস্টার সিনড্রোম বাস্তব জীবনে আতঙ্কের উদাহারণ কেননা আপনার কাছে আপনার সামাজিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত এই সিনড্রোমের সরাসরি সংযোগ পাওয়া যায় সদ্য পাশ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে, যেখানে তারা বাস্তব জীবনের সাথে পরিচিত হতে চলেছে। সেখানে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে নেওয়া হলেও দেখা যায় তাদের তুলনায় অভিজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসী লোকেদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে যা তাদেরকে আরো হীনমন্যতায় ভোগায়।

মাতৃত্ব

মাতৃত্ব নিয়ে আপনার সামনে একটি প্রতিচ্ছবি দাঁড় করানো যাক। মাতৃত্বের ধরণ, ভালো দিক, খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

মাতৃত্বের সুন্দর দিক

আমার মেয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এবং আমার নিত্য উৎসাহদাতা। সে আমাকে ক্লান্তিময় দিন থেকে বের করে নিয়ে যায় বাগান বিলাসে, সমুদ্রের সুন্দর দিনে এবং পুকুরে। যখন দুঃখের মেঘ আমার মনে জমা হয় তখন আমি তার দিকে চেয়ে থাকি, সে আমার সুখের আলোকরশ্মি। আমি তাকে কাছে টেনে নিই।

আমার বুকে সে মাথা পেতে বলে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি মা”। তার মনের শক্তি দিয়ে সে আমার মনের কথা পড়ে নেয়।

এই মুহূর্তগুলোই আমি সবসময় মনে রাখি এবং আশা করি কখনো ভুলব না। আমি তাকে যেমন ভালোবাসি, সেও আমাকে নিঃশর্ত ভালোবাসে।

মাতৃত্বের কুৎসিত দিক

ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা, পরামর্শ দেওয়া এবং উপদেশ দেওয়া যা আমি কখনো চাইনি। এই অবস্থা আমাকে অনেক ভীত করে এবং হীনমন্যতায় ভোগায়। আমি কি ভুল করছি, তাহলে?
অন্যদের সন্তানের জন্যে প্রয়োগকৃত উপায় আমার সন্তানের জন্যেও ফলবে।

তাহলে, এটাই ভেতরের কথা। আপনি আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি অন্যের চাওয়া এবং পাওয়াতে অপচয় করছেন। শুধুই আপনার সন্তান নয়, স্বামীর ক্ষেত্রেও। কিছু মাতৃত্ববোধে দ্বন্দ্ব পাকিয়ে ফেলছেন মানেই আপনি দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়েছেন।

মায়েদের ইম্পোস্টার সিনড্রোম

আমি আমার মেয়েকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করেছি। আমি তাকে নিজ হাতে তিন মাস লালন করেছি (এখনো করছি)। আমিও তার সাথে গতির মত প্রবাহিত হয়েছি এবং করুণ সমুদ্রে ভেসেছি।
তাহলে আমার কেন মনে হয় আমি একজন আসল মা নই?

যখন আপনি একজন মা এবং একই সাথে ইম্পোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন, তখন আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন আপনি একজন ভালো অভিভাবক নন যদিও লোকে মনে করে আপনি এবং আপনার সন্তান দারুন পারিবারিক বন্ধনে আছেন। মাতৃত্বকালীন ইম্পোস্টার সিনড্রোম হওয়ার অন্যতম কারণ মায়েরা সবসময় অনুশোচনায় ভোগে। আজকাল অনেকে এটি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন।

আমরা ভাবি, মাতৃত্বকালীন সময়ে অনুশোচনাবোধকে স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবে আমরা মেনে নেব। এবং যদি আমরা অনুশোচনাবোধ নাও করি তখনও আমাদের অসঙ্গতি লাগে আর আমরা অনুশোচনা করতে শুরু করি।

মাতৃত্বকালীন নানান চিন্তা এবং আবেগপ্রবণ হওয়ার পরেও আমরা এটিকে লুকিয়ে রাখি। আমরা কিছু কারণ আবিষ্কার করেছি যেগুলো আমাদের এই দোটানায় ফেলে দেয়।

ঠিক আছে।

আমি ‘মা’ হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার সন্তানের সকল কাজের দায়ভার নেওয়া এবং দেখভাল করার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছি। তাকে নিরাপদ রাখতে চেয়েছি এবং খেয়াল রেখেছি আমার সন্তান যেন সকলের সামনে ভালো ব্যবহার করে। এর মানে এই নয়, আমি মা হিসেবে কঠোর। আমি এসব কিছুর বাইরে। সে চাইলে কাদামাটিতে খেলতে পারে, বৃষ্টিতে ভিজতে পারে এবং গাছে উঠতে পারে।

যাই হোক, আমি বুঝতে পারলাম, যদি প্রত্যক্ষভাবে দেখি আমার মেয়েকে অন্য অভিভাবকদের সাথে (তার নিজের অভিভাবক ব্যতীত) তখন আমি চিৎকার করে তাকে বলছি, ‘এটি ধরো না, এটি তোমার না। তোমার আগে অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন’।

-‘ওহ, ঠিক আছে। সে ভালো আছে’।

এমন আচরণে আমার সাথে যা হয় – এই মন্তব্য আমার ভেতর হীনমন্যতার সৃষ্টি করে। আমি আমার মেয়েকে সঠিক শিক্ষা দেইনি এবং তার ভুলগুলো সংশোধন করতে পারিনি। আমার মেয়েকে কিছু বলার উপযুক্ত আমি নই।

এমন আচরণে আমার মেয়ের সাথে যা হয় – এ সকল কিছু আমার শিক্ষা নিয়ে আমার মেয়ের কাছে প্রশ্নের সৃষ্টি করে।

আমরা যা দেখছি তা কিন্তু সব নয়। এটা মূলত তার করণীয় এবং অনুমতি নেওয়া শেখার বিষয়। এসব শুনতে মাত্রাতিরিক্ত মনে হতে পারে। কিন্তু এসব প্রায়শ হয়। যদি আপনি আপনার সন্তানদের দাদা-দাদীর কাছে নিয়ে যান, তাহলে খেয়াল করবেন।

‘দাদা-দাদীর অতিরিক্ত আদর সন্তানদের নষ্ট করে দেয়’ এমন মন্তব্য প্রায় শোনা যায়। কিন্তু এখন এটির পরিবর্তন দরকার। এমন মনোভাব রাখার আগে আমাদের অনেক ভাবা উচিত। অতি আদরে নষ্ট হওয়ার ভাবনার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সন্তানদের তাদের দাদা-দাদীর প্রতি সম্মান রাখা।

অনভিজ্ঞদের জন্যে পরামর্শ

অভিজ্ঞতার আলোকে যেকোনো বিষয়ে মুখ খুলে পরামর্শ দেওয়া খুবই সহজ । আপনার অভিজ্ঞতাসহ মায়েদের সকল পরামর্শের অনেক প্রয়োজন।

ভুল!

যে মুহূর্তে আমার মেয়ে জন্ম নেয়, আমি অন্যদের পরামর্শে ফেটে পড়েছিলাম।

‘তোমার উচিত প্রথম মাসে ওকে ঘরে রাখা। এটা একটা রীতি এবং আমিও এমন করেছিলাম’
‘এটা কি সহকারী? তোমার এসব রাখা উচিত নয়।’
‘খেলার মাঠ নেই? মায়েদের গ্রুপ নেই?’
আমাদের তখনই পরামর্শের প্রয়োজন যখন আমরা তা চাই। মায়েদের আশাপাশে থাকতে হলে সচেতন থাকা প্রয়োজন। আমাদের উচ্চারিত প্রত্যেকটি শব্দ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কেবল এতটুকুই।

প্রকাশ করুন

আমরা চাই কেউ আমাদেরকে শুনুক। আপনার অনেক বছরের অর্জিত সকল জাদুবাস্তব তথ্যগুলো নিয়ে, দয়া করে আমাদের সাথে কথা বলবেন না। মাতৃত্ব ব্যক্তিগত এক যাত্রা। অন্য মায়েদের দেখা যায় তারা নিজেদের মত করে জায়গা করে নেয় এবং তাদের ভাবনা দিয়ে ভরিয়ে দেয় সব। ফলে আমাদের বলার আর জায়গা থাকে না। কোথায় আমাদের সে আওয়াজ এবং ভাবনাগুলো? মায়েদের ভিড়ে আমি বসে আছি, কিন্তু মনে হয় আমি এখানকার কেউ নই। আমি একই গতিতে প্রবাহিত হই, তবে তাকে আমার সন্তানের মত মনে হয় না।

অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *