বৈষম্য নির্মূলের লড়াইয়ে হার না মানা জরুরি, পরিবর্তন আসবেই
গ্লোরিয়া জিন ওয়াটকিনস, সবার কাছে বেল হুকস নামেই পরিচিত। তিনি একজন মার্কিন লেখক, অধ্যাপক, নারীবাদী ও অ্যাক্টিভিস্ট। Feminist Theory, Feminism Is for Everybody, Ain’t I a Woman?, Al about love, – এরকম বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো বইয়ের লেখক তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা প্রতিবন্ধকতা এবং জাতিগত আশংকাজনক পরিস্থিতি নিয়ে বেল হুকস লন্ডনভিত্তিক অনলাইন পত্রিকা আই-ডি’কে একটি সাক্ষাৎকার দেন। নারীবাদ এবং কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তার ভাবনা বিনিময়ের বিষয়ে এটি একটি অসাধারণ সাক্ষাৎকার। এতে চারপাশে আন্তঃবিভাজনগত বৈষম্য নিয়ে প্রতিযোগিতা, নারীবাদ এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। এই ভাবনাগুলো ১৯৮১ সালে নারীবাদী তাত্ত্বিক ও আলোচিত লেখক বেল হুকসের কাজকে অর্থবহ করেছিল, যখন তিনি তার লেখা ‘অ্যান্ট আই অ্যা ওমেন?’ ১৯৮১ সালে প্রকাশ করেন।
বেল হুকসের জন্ম এক শ্রমিক শ্রেণির পরিবারে, যারা চরম মাত্রায় শ্রেণিবিদ্বেষের শিকার ছিলেন। তার মা রোজা একজন গৃহিণী এবং তার বাবা ভিওডিস পেশায় একজন দারোয়ান। শৈশব থেকেই বেল কৃষ্ণাঙ্গ কবি গোয়েডলিন ব্রুক্স এবং ল্যাংস্টোন হাজেসের কবিতা আবৃত্তি করতেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে বেল স্ট্যান্ডফোর্ড থেকে ইংরেজিতে বিএ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহিত্যে পিএইচডি করেন। লেখালেখি শুরু করেন নানীর দেওয়া বেল হুকস নামে (নিজেকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে নিজের নাম ইংরেজি ছোট অক্ষরে লিখতেন)। দীর্ঘ কর্মজীবনে বেল ত্রিশটিরও বেশি বই লিখেছেন যার মূলে ছিল জাতিগত বৈষম্য, লিঙ্গ শোষণ, কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের নিপীড়নের কথা। যা তাকে লিঙ্গ এবং বৈষম্যের উপর বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নারী শিক্ষকের খেতাব দেয়। সম্প্রতি বেলের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ ‘মুভিং বিওয়েন্ড পেইন’ যা তিনি বিয়ন্সের লেমোনেডের উত্তরে লিখেছিলেন, তা বেশ আলোচিত হয় যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ নারীর শরীরের সাথে বর্তমান ভাবনার মেলবন্ধন এবং দৃশ্যায়ন ভিন্নমাত্রায় ফুটে ওঠে।
বেল হুকসের সাক্ষাৎকারটি ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন
সাদিয়া মেহজাবিন।।
আধুনিক নারীবাদে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ভূমিকা কী? আপনি কি মনে করেন পরিবর্তন প্রয়োজন?
কৃষ্ণাঙ্গ নারী ও নানান বর্ণের নারীদের হস্তক্ষেপে সাময়িক যে ঘটনার উপর আমরা দৃষ্টিপাত করেছি তাকে আমরা আন্তঃবিভাজন বৈষম্য বলছি। কিন্তু যেদিন আমি একটি শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদের পুঁজিবাদী পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলব সেদিন আমি কী করতে চাই তা বলব। আমাদের অনেকেই অস্বীকার করেছিলেন লিঙ্গের ধারণা নারীদের করণীয়, অন্যান্য বিবেচনীয় বিষয়, জাতিগত বৈষম্য ও প্রতিযোগিতার প্রতিনিধিত্ব করে। মানুষ ‘ইন্টারসেকশনালিটি’ বা ‘আন্তঃবিভাজন বৈষম্য’ শব্দটি ব্যবহার করলেও তা নারীবাদী চিন্তাধারা, তত্ত্ব এবং আমাদের ইচ্ছের উপর তেমন কোনো রূপান্তরকারী প্রভাব ফেলেনি। যেমন ধরুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীবাদ বিপন্ন রাজ্যগুলোতে বিশেষ করে হিলারি ক্লিনটনের প্রতি মানুষ এখনো প্রচণ্ড ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। মনে হচ্ছে, আমরা এক শক্তিশালী নারীবাদ বিরোধী প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করছি।
এটি বেশ মজার আপনি হিলারির কথা তুলে আনলেন। যদিও বর্তমানের তরুণ কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা বলছেন হিলারি তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন না, যেখানে হিলারি বয়োজ্যেষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন।
আমার মনে হয় না আমরা আজ অব্দি এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে পেয়েছি যারা কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের জন্যে বিশেষভাবে কাজ করছে, না হিলারি ক্লিন্টন না ডোনাল্ট ট্রাম্প।
‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কৃষ্ণাঙ্গ নারীরা কোন ভূমিকাগুলো রেখেছেন?
আমরা সবাই জানি, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের শুরু কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের হাত ধরে যেখানে কেউ কেউ শ্বেতাঙ্গ, কেউ সমকামী অথবা কেউ চরম নারীবাদী; কিন্তু সত্য হলো আমি এই আন্দোলনের চিত্রপটে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তেমন চরম কিছু দেখি না। এটা আমার কাছে মনে হয় সে চিরায়িত গোঁড়া নারীদের অংশগ্রহণ যদিও তাদের এই অবস্থান পেতে ক্ষমতা এবং তথাকথিত নারীবাদের আলাপ বাদ দিতে হবে।
আপনি যা বলছেন তা বেশিরভাগই সম্প্রদায় বোধের উপর ভিত্তি করে কিন্তু কীভাবে শ্রেণিধারণা এই আন্দোলনের মধ্যে প্রবেশ করলো?
সাংস্কৃতিক আলোচনার কেন্দ্রে অনেকটা সম্পদ ও বিত্তশালী হওয়ার প্রবণতা রয়েছে যা আসলে মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়ভিত্তিক মৌলবাদ গড়ে তুলছে কেননা নেহাত পুঁজিবাদের সমালোচনা করার জন্যে অনেক বর্ণের ও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের পক্ষ থেকে এর প্রত্যাখ্যান এসেছে।
আপনি কি মনে করেন একজন আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা এবং ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতার মধ্যে পার্থক্য আছে?
অবশ্যই। এখানে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের উপর এক অযৌক্তিক ফোকাস রয়েছে এবং অনেকে ধারণা করেন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের মুক্তির একমাত্র উপায় পুরুষতন্ত্র। কিন্তু আমি ব্রিটিশ সংস্কৃতিতে এমন দেখি না যে ক্রমাগত কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের উপর ফোকাস দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। খেয়াল করে দেখুন, আমেরিকার মুক্তির বেশিরভাগ ইতিহাস পুরুষতন্ত্রের বীরত্বে গিয়ে শেষ হয়।
আপনি আপনার ‘বেল হুকস ইনস্টিটিউট’ নিয়ে কিছু বলবেন?
দ্বিমাত্রিক ভাবনা নিয়ে বেল হুকস প্রতিষ্ঠান। প্রথমত পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে আমার কাজগুলো রক্ষা করা, তাই এই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংগ্রহে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান শিল্প, শিল্পকর্ম এবং আর্কাইভ। এরপর একাডেমিক তত্ত্ব ও দৈনন্দিন জীবনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। শিক্ষণীয় কাজ হিসেবে কথোপকথনকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সত্যি আমি আগ্রহী। প্রতিষ্ঠানে আমরা একাডেমিক শ্রোতাদের সমালোচনা করি না, সে যতই চিন্তাশীল সমালোচনাযোগ্য শ্রোতা হোক না কেন।
আপনার কেন মনে হয় কথোপকথন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় হাতিয়ার?
যদি আপনি কারো সাথে আলাপ করেন এবং সে যদি আপনাকে বলে ‘ হ্যাঁ পড়ার জন্যে এটি একটি ভালো বই’ তখন আপনি সে বইয়ের কথা মনে রাখবেন। কিন্তু আপনি সে বইটা নিয়ে কোনো রিভিউ পড়লে তা আপনাকে তেমন নাও স্মরণ করাতে পারে। এখন যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক শক্তিশালী এবং ক্ষমতাশীল সেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ততা মানুষকে বিচ্ছিন্নতা ও অবিচ্ছন্নতার মধ্যে যোগাযোগ করাচ্ছে কিন্তু তা মুখোমুখি বসে বিমূর্ত ভাবনা নিয়ে আলাপ করার মত মূল্যবান নয়।
আপনার কাছে ‘ন্যায় বিচারের’ অর্থ কি?
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই যা দেখি তা একটি শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, পরবর্তীতে একে রাজনৈতিক অবস্থান বলে আখ্যা দেওয়া হলেও এটি মারাত্মক অন্যায়। তাই ন্যায় বিচার নিয়ে কাজ করার মূল্য রয়েছে, ড. মার্টিন লুথার কিং ন্যায় বিচার নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু আমি ব্রায়ান স্টিভেনসনের মতো একজন আধুনিক কর্মীর কথাও ভাবি যিনি কৃষ্ণাঙ্গ শিশুদের এবং অন্যায়ভাবে কারাবন্দী কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ, তিনি সত্যিই অসাধারণ একজন। আলাপটি খুবই যৌক্তিক; আমরা প্রতিষ্ঠানে যে বইগুলো রেখেছি তার মধ্যে একটি হলো ‘ দ্য সোল মেকিং রুম বাই দি ডি রিশার’ যিনি ‘দ্য আদার সাইট’ নামক এক খ্রিষ্টান ম্যাগাজিনের জন্যেও লিখতেন। তার পুরো থিসিসটি ছিল অচেনা ব্যক্তির সাথে আতিথেয়তা এবং আধিপত্য শেষ করার মানসিক ইচ্ছা নিয়ে। এই বিষয়ে আলোচনার জন্যে এরচেয়ে ভালো সময় নেই, কেননা এখন আমরা জেনোফোবিয়া এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের চরম উত্থানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অচেনা ব্যক্তিদের সাথে জড়তা কাটিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক কথা বলতে হয় এই নিয়েও আমাদের কথা বলা দরকার।
আপনি কীভাবে একজন সাধারণ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানকে এমন এক ব্যক্তির সাথে আলাপ করাবেন যিনি স্পষ্টভাবে তাদের ভাবনার বিরোধীতা করেন?
বেশ, এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আমরা বলতে পারি না এটি অতো সহজও। আসলে আজ সকালেই আমি একজন পুরুষের সাথে কথা বলছিলাম যিনি ট্রাম্পের চরম সমর্থক এবং বেশ রক্ষণশীল। আমি তাকে বোঝাতে চাচ্ছিলাম, আমাদের মুক্তমনা কমরেড হয়ে একসাথে কাজ করা উচিত এবং ট্রাম্প বর্ণবাদী হিসেবে আমাদের জন্যে হুমকিস্বরূপ, কিন্তু তিনি তা বুঝলেন না যা আদতে খুব হতাশাজনক। তখন আমার মনে হয়েছে ‘ওহ এই ব্যক্তির উপর আশা না রাখি’; কিন্তু ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে হার না মানা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার আশা রাখতে হবে, পরিবর্তন আসবেই। বৈষম্য নির্মূলের এই সংগ্রামে এটি প্রধান ধারক; যেন আমরা কোনো গোষ্ঠীকে আলাদা না করি এবং আমাদের মূল্যবোধের জায়গায় অনড় থাকি যা আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনি সামাজিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহী হতে তরুণদেরকে কী পরামর্শ দেবেন এবং সমাজে বাস্তবিক পরিবর্তন আনতে কীভাবে তারা অন্য তরুণদের মধ্যে এই ভাবনাগুলো প্রবাহিত করতে পারবে?
বিপ্লব শুরু হয় নিজের থেকে এবং নিজের সাথে। আমি আমার কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার সচেতনতা দেখি কিন্তু মানসিক সচেতনতা এবং স্থায়িত্ব ছাড়া এটি সম্ভব নয়। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করবেন ‘এখানে আমার উদ্দেশ্য কী? এখানে মূল লক্ষ্য কী?’ ঐ অবস্থান অব্দি এটি আমাদের জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আমাদের তরুণেরা যারা সমালোচনার তোড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসেছে এবং যৌনতাকে ভুল মনে করে অতি সহজে যেকোনো আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। তরুণদের মনে রাখা উচিত আমাদের লক্ষ্য কী এবং আমরা আসলে কী করতে পারি, তার জন্যে তাদের স্পষ্ট ধারণা, অধ্যায়ন এবং তার প্রতিফলন প্রয়োজন। প্রশ্ন করা প্রয়োজন, যেমন ‘এই বিশেষ আন্দোলন কেন? ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের পর আরো সামাজিক পরিবর্তনের জন্যে কাজগুলো কী কী? অবশ্যই এটি সচেতনতামূলক বিবৃতি, কিন্তু সচেতনতা আনার পরে আমরা কী করব?’; এটা শুধু ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস কিংবা অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট নয়, এটা কীভাবে আমরা সামাজিক কর্মকাণ্ডের মানসিক শক্তিকে এমন এক পরিসরে নিয়ে যাবে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও আশেপাশের মানুষের ভাবনার ভিত্তি পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে। আমরা যেসব সম্প্রদায়ের মধ্যে বাস করি, তাদের পরিবর্তন আনার জন্যে আমি একজনই অনেক বড় কেননা যখন আমি একটি জটিল সমালোচনা অথবা বৃহত্তর প্রতিবাদ করি তখন আমি কোথায় অবস্থান করছি তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না।
আমরা যে সম্প্রদায়ে বাস করি এবং চারপাশের মানুষদের পরিবর্তন আনতে এবং প্রভাব ফেলতে বিশাল আন্দোলন এক দারুন ব্যাপার, তবে আপনাকে বাঁচতে হলে পরিবারের যত্নও নিতে হবে।
হ্যাঁ আমার অনেক তরুণ শিক্ষার্থী এমন কঠিন সময়ের জন্যে তাদের পিতামাতাকেও সচেতন করছে। পরিবর্তন আনতে এটি অর্থবহ এক কাজ কেননা এই কাজগুলো পরিবারের মধ্যে আমাদেরকে কর্তৃত্বের অনুপস্থিতির চর্চা করতে সাহায্য করায় কেননা পরিবারই প্রথম জায়গা যেখানে আমরা প্রাথমিক আধিপত্য ও অপব্যবহার সম্পর্কে শিখেছি।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ক্ষমতা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?
আমি মনে করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম অপব্যবহার হলো লোকেরা সহজে ভিন্ন মতামতের প্রতি দ্রোহী আচরণ করেন। ‘লেমনেডে’ আমার সমালোচনামূলক প্রবন্ধের উত্তর, তার একটি উদাহরণ। অনেক লোকই তাদের অগভীর ভাবনা থেকে বলতে লাগলেন ‘বেল বিয়ন্সকে পছন্দ করে না’, তখন আমি মানুষকে বোঝাতে লাগলাম আমি বিয়ন্সকে চিনিই না! এটি কেবল ব্যক্তিক জায়গা থেকে বিয়ন্স সম্পর্কে নয় বরং তার ভাবনা নিয়ে’। আমি মনে করি যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কোনোভাবে এমন মানুষদের এককেন্দ্রিক ভাবনার অনুমতি দেয়, যা স্বাস্থ্যকর নয় তবে তারা কীভাবে সাড়া দিচ্ছে তার মধ্যে অলৌকিক অনুভূতি থাকতে পারে কেননা লোকেরা প্রায়শ এককেন্দ্রিক মতামত জানায় যেমন ‘বেল হুকস’ এমা ওয়াটসনকে পছন্দ করতে ইচ্ছুক কিন্তু বিয়ন্সকে না!’ ব্যক্তিত্ব এবং সেলিব্রেটির এই সংস্কৃতি থেকে মানুষকে দূরে সরানো কঠিন এবং আমি এতটা নিশ্চিত নই যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এসবে সাহায্য করছে কেননা মানুষ এখন নিজের ব্যক্তিগত খাবারের মত ‘সেলিব্রেটি কিংবা তাদের ব্যক্তিগত জায়গা’ দাবি করছে।
তাহলে আপনি দেখছেন নারীবাদ সমতার বাহন না হয়ে সমালোচনা এবং অপবাদের বাহন হয়ে উঠছে? অন্তর্জালে নারীবাদের এক বিশাল আন্দোলন রয়েছে যারা বলছে এটি আরো সাহায্য করবে কিন্তু আপনি বলছেন তা যথেষ্ট নয়…
দেখুন, আমি বলব না যে এটি নেই তবে ত্বরান্বিত করছে এমন যেকোনো কিছুতে আমিও লজ্জিত। এটা ভালো হোক কিংবা খারাপ, আমি মনে করি কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্যে এটি অনেক শক্তিশালী এজেন্ট কিন্তু এটি সামাজিক সংগঠনের কিছু খারাপ দিককেও অন্তর্ভূক্ত করে। অন্যরা যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আমি তাদের মত ব্যক্তি না, আমার একজন সহকারী আছেন যিনি আমার হয়ে মেইল পাঠান এবং আমি ইন্টারনেটে খুব বেশি কিছু পড়ি না। আমি মনে করি আমার ব্যক্তিগত পড়াশোনার জন্যে, আমার মন এবং মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু যখন আপনার তথ্য প্রয়োজন তখন ইন্টারনেট দূর্দান্ত কেননা এটি অতি সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে সাহায্য করে।
‘আন্ট আই অ্যা ওমেন?’ প্রথম প্রকাশনার ৩৫ বছর হতে চললো, আপনি কীভাবে এটি একটি সমসাময়িক সাংস্কৃতিক পটভূমির জন্যে উপযুক্ত মনে করেন?
আমি প্রায়ই কিছু ব্যাপারে হতাশ হই, তার মধ্যে একটি হলো আমার বইয়ের প্রাথমিক অনেক ধারণাই কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের অবমূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা করেছে এবং স্পষ্ট সত্য হলো এর খুব বেশি এখনো পরিবর্তন হয়নি। তুলনামূলক ভালো প্রতিনিধিত্ব ও উপস্থিতির কারণে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে তবুও তা আমাদের দ্রোহী মনোভাবের দিকে নিয়ে যায়। তাই রাজ্যে আমাদের প্রতি এখনো আরো ঘৃণা আছে, তবে একই সময়ে সচেতনতাও সৃষ্টি হচ্ছে।
আপনারও কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিচ্ছবির প্রতি ভক্তি আছে
এই ভক্তি মূলত অমানবিকীকরণ ও উপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। আমার মনে হয় লোকেরা ভুলে যায় যখন প্রতিনিধিত্বের অভাব হয় আর হঠাৎ করে আপনার বাস্তবতা আপনি বুঝতে পারেন তখন সমালোচনামূলক সতর্কতা বজায় রাখা বেশ কঠিন কেননা এটি আপনার ভাবনা চিত্রকে মুক্ত করে তুলে ধরতে অনুমতি দেয়।