December 3, 2024
কলামফিচার ৩

মাঝে মাঝে পুরুষবিদ্বেষী হওয়া জায়েজ আছে

ইমতিয়াজ মাহমুদ ।।

এক বন্ধু বললেন, “না, কথাগুলি হয়তো ভুল বলেননি। কিন্তু ভাইয়া এইভাবে বললে কি পুরুষ-বিদ্বেষ উৎসাহিত হবে না? সেটা কি নারীবাদী আন্দোলনের জন্যে ভাল হবে?” এটা ছিল ফেসবুকে আমার এক পোস্টের বিপরীতে তাঁর প্রতিক্রিয়া- কেননা সেই পোস্টটিতে আমি একটু কঠোর ভাষায় ‘মেল শভিনিস্ট পিগ’ বলে এক নারীবাদবিদ্বেষী লেখকের কথার নিন্দা করেছিলাম। সেই বন্ধুটি নারীবাদী- বলাই বাহুল্য- এবং নারীমুক্তি প্রসঙ্গে তাঁর সাথে আমার অনেক চিন্তারই মিল হয়। এই যে প্রসঙ্গটা, পুরুষবিদ্বেষ উস্কে দেবে কি দেবে না এবং সেটা মাথায় রেখে আমাদের কথা বলা উচিৎ কিনা এইটা নিয়ে বিতর্কমতো করা এটা কোনো মতাদর্শগত ভিন্নমত নয়, এ নেহায়েতই কৌশলগত আলোচনা মাত্র। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করতে নেমে দুইজন অভিযাত্রী যেমন আলোচনা করে, মোটা মোজা পরা ভাল নাকি পাতলা মোজা অথবা শক্ত বুট ভাল নাকি নরম ট্রেইনার ইত্যাদি।

এইটা কোনো নতুন কথাও নয়। মাঝে মাঝেই আপনি নারীবাদীদের দেখবেন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলছেন যে না, নারীবাদ মানে পুরুষ বিদ্বেষ নয়; না, নারীবাদীদের লড়াই পুরুষের বিরুদ্ধে নয় বরং পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে বা নারীবাদ মানে এই নয় যে পুরুষদের ধরে ধরে ঠ্যাঙ্গাতে হবে ইত্যাদি। কমলা ভাসিনকে তো চেনেন নিশ্চয়ই, কয়েকদিন আগে মাত্র গত হয়েছেন। আমাদের দেশের নারীবাদীদের উপর তাঁর প্রবল প্রভাব। তিনি বক্তৃতায় আলোচনায় কর্মশালায় সেমিনারে খুব করে বোঝাতেন কথাটা যে না, নারীবাদীদের লড়াই পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি বরং পুরুষদেরকেও আহ্বান করতেন নারীবাদী আন্দোলনের যোগ দিতে। কয়েকটা বক্তৃতা আমি শুনেছি যেখানে কমলা ভাসিন ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে পিতৃতন্ত্র পুরুষকে মানুষ থেকে মানবেতর দানবে পরিণত করে এবং সেই অর্থে কেন পিতৃতন্ত্র কেবল নারীর শত্রু নয়, বরং পুরুষেরও শত্রু বটে। সুতরাং এই বিবেচনাটা, যে নারীবাদী আলোচনা যেন অনাবশ্যক পুরুষ বিদ্বেষ না ছড়ায়, সেইটা মাথায় রাখা সেটাও একদম অনাবশ্যক নয়।

তাইলে আমাদের করনীয় কি? আমরা কি তবে নারী অধিকারের কথা বলার সময় কম্পিউটারের কিবোর্ডে এক খাবলা মাখন লাগিয়ে নেব যাতে সব নারীবাদী কথা মসৃণ ও মোলায়েম হয়? নাকি সবসময় সতর্ক থাকতে হবে আমাদেরকে, যেন পুরুষতান্ত্রিক ভাই সাহেব বা মেল শভিনিস্ট পিগ যারা আছেন ওদের কোমল হৃদয়ে আঘাত না লাগে? নাকি কেওয়াই জেল লাগিয়ে উনাদের শরীরের ফুটাগুলিকে মসৃণ করে নিতে হবে যাতে নারীবাদী কথা যখন উনাদের কর্ণপটাহে প্রবেশ করবে সেটা যেন বিদীর্ণ না হয়? নাকি পুরুষতান্ত্রিক মুরুব্বী ও সমাজ, যাদের মধ্যে শাড়ি পরা ব্যাটাছেলেরাও আছেন, ওনাদের কাছ থেকে সেন্সর করিয়ে নিয়ে কথা বলতে হবে, ভাইসাহেব এবং আপুমনিরা মেহেবানি করে বলে দিন কতটুকু বলা আমাদের জন্যে শোভন হবে ইত্যাদি?

এইখানে একটা ইন্টারেস্টিং বইয়ের উল্লেখ করি। পলিন হারমানজে (ইংরেজিতে নামটা Pauline Harmange, এটার ফরাসী উচ্চারণ কী হবে জানিনা) একটা বই লিখেছেন বইটার ফরাসী নাম Moi les hommes, je les déteste ইংরেজি করলে হয় I Hate Men আর বাংলা করলে কী হবে সে তো আপনারা বুঝতেই পারছেন। গত বছর প্রকাশিত হয়েছে এই ছোট পুস্তিকাটি, প্রায় সাথে সাথেই ইংরেজি অনুবাদ হয়ে লন্ডন থেকেও প্রকাশিত হয়েছে। মোটামুটি আন্তর্জাতিকভাবে সর্বত্র সাড়া ফেলেছে – এটি একটি পুরুষবিদ্বেষী বই।

বইটির একদম শুরুতেই হারমানজে লিখছেন, “একদিন আমি আমার ব্লগে লিখেছিলাম যে নারীর অধিকার প্রসঙ্গটি নিয়ে পুরুষের সহানুভূতির অভাব আর পরম নিরাসক্তি এইসব নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত। একদম সাথে সাথেই একজন বেনামী উটকো লোক এসে মন্তব্য করে গেল ‘আপনি বরং নিজেকেই জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন পুরুষরা কেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চায় না। কয়েকটি সম্ভাবনা হতে পারে এরকম: যেসব পুরুষ নিজেদের পুরুষ জন্ম নিয়ে লজ্জিত নয় এবং পুরুষরা নিপাত যাক বলে শ্লোগান দেয় না ওদের প্রতি নারীবাদীরা যেরকম আগ্রাসী, ঘৃণা বিদ্বেষ বা উন্নাসিক মানসিকতা দেখায় সেই কারণে। যেদিন নারী পুরুষের সম্পর্ক আপনারা যেরকম আছে সেরকমভাবেই গ্রহণ করবেন, সম্ভবত সেদিন আমরা আপনাদের কথা শুনব। এর আগ পর্যন্ত আপনারা কেবল কাম-বঞ্চিত বাচাল হিসাবেই বিবেচিত হবেন এবং আপনারা নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ক্ষতির কারণ হবেন।”

পলিন হারমানজের ব্লগে এই উটকো লোকটি যে মন্তব্যটি করেছে সেটি আমাদের খুব অপরিচিত বা অশ্রুত বা অজানা কোন মন্তব্য? মোটেই নয়, মোটেই নয়। এইরকম মন্তব্য আমাদের দেশের নারীবাদীরা প্রায় প্রতিদিনই দেখেন তাঁদের লেখার নিচে, তাঁদের ছবির নিজে বা নারী সধিকার সংক্রান্ত কোনো খবরের নিচে। ভাষা ভিন্ন হতে পারে, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতে পারে, দেশ ভিন্ন হতে পারে- কিন্তু নারীবাদীদের প্রতি এইরকম বাক্য এইরকম কথা মেল শভিনিস্ট পিগগুলি ছুড়ে দিচ্ছে প্রতিদিন এবং সেটা আজ থেকে মাত্র নয়, মোটামুটিভাবে গত দেড়শ বছর ধরে এরকম চলছে।

তাইলে কি নারীবাদীদের কাজ হবে পুরুষ দেখলেই লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া? মোটেই নয়। নারীর অধিকারের সংগ্রাম, সমতার সংগ্রাম; সেটা নারীকেই অগ্রসর করে নিতে হবে বটে, কিন্তু সেই সংগ্রামে পুরুষের অংশগ্রহণ সেটাও জরুরি। নারীর সংগ্রাম বলেন বা নারীবাদ বলেন, সেইটা তো পুরুষ নিধন অভিযান নয়। মুল দাবিটা হচ্ছে সমান অধিকার ও সমান মর্যাদার দাবি- খুবই সহজ সরল দাবি। কিন্তু এই সংগ্রাম তো আপনি পিতৃতন্ত্রের নির্ধারণ করে দেওয়া সীমিত মাত্রার মধ্যে থেকে চালিয়ে নিতে পারবেন না। পিতৃতন্ত্রের পাহারাদাররা আপনাকে প্রতিদিন এসে নসিহত করতে থাকবে, এইটা সহি নারীবাদ নয় বা সেইটা সহি নারীবাদ নয়। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন যে, তাইলে সহি নারীবাদ কোনটা ভাইয়া?

কী জবাব পাবেন জানেন? জবাব যেটা পাবেন সেটা একেকটা প্রেক্ষাপটে একেকরকম হবে বটে, কিন্তু মূল সুরটা সর্বত্র এক। ওরা আপনাকে বলবে আপনি প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সীমানার মধ্যে থেকে সংখ্যাগুরু মানুষের মতামতের প্রতি অনুগত থেকে মাঝে মাঝে নারীর জন্যে একটু ভিক্ষে টিক্ষে চাইবেন তাইলেই আপনি সহি নারীবাদী। আপনি নারীর জন্যে নানা সুযোগ সুবিধা চাইবেন। নারী নির্যাতিত হলে নিয়ম মেনে বিচার প্রার্থনা করবেন কিন্তু ক্রুদ্ধ হতে পারবেন না বা সমাজকে দোষ দিতে পারবেন না। আপনার সুরটা হতে হবে আবেদন নিবেদনের, প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের নয়। প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের সুর হলে সেটা নাকি সহি নারীবাদ নয়। আপনি পর্দাপ্রথা নিয়ে কথা বলতে পারবেন না, নারীর উত্তরাধিকার প্রশ্নে ধর্ম সমূহের অন্যায় বিধানের প্রতিবাদ করতে পারবেন না। এইসব করলে আপনি সহি নারীবাদী নন। আর সমাজ বদলের কথা সেটা তো সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। মোদ্দা কথা ওদের চোখে নারীবাদী হচ্ছে যারা নারী কল্যাণের জন্যে প্রার্থনা করবে- অধিকারের দাবি নয়।

আপনি যদি ওদেরকে বলতে যান যে, ভাইয়া আমি তো নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের কাছে কল্যাণ চেয়ে দরখাস্ত করার পার্টি না। আমি হচ্ছি নারীবাদী, আমার কাজ হচ্ছে নারীর অধিকারের দাবি করা, সমতার দাবি করা, সমান অধিকারের দাবি করা, সমান মর্যাদার দাবি করা। ওরা আপনাকে এমন ভাব দেখাবে যেন নারীর জন্যে কল্যাণের প্রার্থনা ছাড়া আর কিছু নাই- সমাজে নারীকে অনেক অধিকার দেওয়া হয়েছে, আর কীসের অধিকার? অর্থাৎ কিনা ওদের চোখে নারীর জন্যে চাইবার জন্যে আর কোন অধিকার নাই। নারী মুক্তির কথা বলবো না? ওরা তখন রেগে যাবে, বলবে নারী কি বন্দী নাকি যে মুক্তি চাইছেন! বলবেন যে নারী আর পুরুষ যে সমান সেই কথাটা বলতে পারব না? ওরা তখন আপনাকে বিজ্ঞের মত বলবে- নারীকে ঈশ্বর পুরুষের সমান করে বানাননি, আপনি কী করবেন! নারী কি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে পারে?

এরকম কথা কেবল যে পুরুষরা বলবে সেটা কিন্তু নয়, সংখ্যাগুরু নারীরাও বলবে। বিশেষ করে ওরা, যাদেরকে আমার এক বন্ধু বলেন শাড়ি পরা ব্যাটাছেলে, ওরা তো বলবেই। ওরা নারীবাদীদের উপর খড়গহস্ত হবে। বলবে যে নারীবাদীরা নষ্ট, ওরা মেয়েদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসতে চায়, নারীদের তো উচিৎ হচ্ছে গাই গরুর মত ঘরের সীমানার মধ্যে আবদ্ধ থাকা। কেউ কেউ তো আপনাকে জ্ঞান দেবে- এই যে, আমাদের নারীরা নদীর ঘাটে কলসি কাঁখে পানি আনতে যায়, কে বলেছে ওরা বন্দী? বেগম রোকেয়া? উনি কি জানেন! উনি কি আমাত্তে বেশি জানেন?

পুরুষরা, অন্তত বেশিরভাগ পুরুষ এবং বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক মতামতের দিক দিয়ে সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের বিপক্ষে, যারা মনে করেন সমাজের কিঞ্চিৎ সংস্কার ইত্যাদি করে দিব্যি চালিয়ে দেওয়া যায়, বদলানোর কোনো প্রয়োজন নাই, যারা ঐশ্বরিক বিধান প্রয়োগ করতে চান সর্বত্র, এরা সকলেই পিতৃতন্ত্রের পাহারাদার। ওরা আপনাকে পিতৃতন্ত্রের উপর কোন আঘাত করতে দেবে না। না, কিছু পুরুষ তো অবশ্যই ব্যতিক্রম আছেন। কিন্তু সংখ্যাগুরু সকলেই একই- পিতৃতন্ত্র কিনা ওদেরকে স্থাপন করেছে খুব আরামদায়ক একটি অবস্থানে। ওরা সংখ্যায় অর্ধেক কিন্তু বিশ্বের নব্বই ভাগ সম্পদের মালিক- এইরকম আরামের অবস্থান ওরা নষ্ট হতে দেবে কেন? আপনি যতই চাইবেন যে পুরুষরাও আপনার সংগ্রামের সহযোদ্ধা হোক, পাশে দাঁড়াক, ন্যায়ের জন্যে লড়াই করুক- সংখ্যাগুরু পুরুষ আপনার পাশে দাঁড়াবে না। ওরা ঐ যে লেখককে মন্তব্য করেছে, সেইভাবে বলবে, এইসব নারীবাদীরা হচ্ছে বিগতযৌবনা কাম-বঞ্চিত মুখরা রমণী সব, ওরা মুরুক্ষ, ওদেরকে শাস্তি দিতে হবে।

না, তাই বলে আপনি পুরুষবিদ্বেষী হবেন কেন। কেউ আপনাকে পুরুষবিদ্বেষী হতে বলে না। যেই নারীটি নিজের অধিকারের জন্যে লড়তে নেমেছেন তিনি তো আর অন্যের অধিকার কেড়ে খাওয়ার জন্যে লড়াইয়ে নামেননি, তিনি কেবল নিজের অধিকারটুকু প্রতিষ্ঠা করতে চান। আর নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা মানে তো সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা মানেও তো সেই সাথে পুরুষের অধিকারও প্রতিষ্ঠা করা। পিতৃতন্ত্রের অবসান দাবি করা মানে তো পুরুষকে দানবীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মানবিক হওয়ার সুযোগ দাবি করা। সুতরাং পুরুষকে বিদ্বেষ করা তো নারীবাদীর কাজ নয়। কিন্তু তাই বলে একদল পুরুষ বুলি করে যাবে, কটুবাক্য বলে যেতেই থাকবে, প্রলাপ গালাগালি করেই যেতে থাকবে আর আপনি মধুর বুলিতে ওদেরকে আহ্বান করতে থাকবেন- ভ্রাতঃ তুমি ভ্রান্তির মায়াজালে আবদ্ধ, দৃষ্টি উম্মিলিত কর- সেইটা তো ভাই হয় না।

কখনো কখনো কণ্ঠ দৃঢ় করতে হয়। হিংসা চাই না, কিন্তু কখনো কখনো শক্ত হাতে হিংসা প্রতিহত করতে হয়। আঘাত করতে চাই না, কিন্তু কখনো কখনো তস্করকে প্রহার না করলে তাকে গ্রেফতার করা যায় না। পিতৃতন্ত্রের পাহারাদারদের বেলায়ও আপনাকে কখনো কখনো কণ্ঠ দৃঢ় করতে হবে। মূর্খতার দৌরাত্ম্য আর অজ্ঞতার কূটতর্ক থামাতে কখনো কখনো আপনাকে কণ্ঠ দৃঢ় করতেই হয়। এটা নৈতিক বিচারে যেমন বৈধ, রণকৌশল হিসাবেও বৈধ।

শুরুর প্রশ্নটাতেই আসি, এতে করে কি নারীদের মধ্যে বা নারীবাদীদের মধ্যে পুরুষবিদ্বেষ বৃদ্ধি পাবে? না। আপনি যখন কণ্ঠ দৃঢ় করে জবাব দেবেন, সেটাতে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রামের চেতনাটা দৃঢ় হবে মাত্র, পুরুষবিদ্বেষ বাড়বে না। আপনার লড়াই তো পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, পুরুষ নিধনের অভিযানে তো আপনি নামেননি। তাইলে আপনার নৈতিক অবস্থান থেকে বক্তব্যটা একটু যদি দৃঢ় হয় তাতে পুরুষবিদ্বেষ বাড়বে কেন? না, যারা পিতৃতন্ত্রের সবচেয়ে কঠোর পাহারাদার, ওদের গায়ে লাগবে বটে, কিন্তু ওদেরকে আঘাত করা তো জায়েজ আছে। সুস্থ করতে হলে তো রোগীকেও মাঝে মাঝে আঘাত করতে হয়, হয় না? রোগীকে কখনো বেঁধে রাখতে হয়, কখনো কাটতে হয়, কখনো সুঁই মারতে হয়। এটাকে রোগীবিদ্বেষ বলবেন? না।

কেউ যদি এটাকে পুরুষবিদ্বেষ বলে, বলুক। সেটা তার ভ্রান্তি। আপনি কেন আপনার দৃঢ় অবস্থান থেকে পেছনে হঠে যাবেন। যেখানে প্রয়োজন সেখানে দৃঢ় কণ্ঠে কথা বলতে হয়, কখনো চিৎকার করতে হয়, কখনো কখনো পাল্টা আঘাতও করতে হয়। পুরুষবিদ্বেষ চাই না, কিন্তু কোনটাকে পুরুষবিদ্বেষ বলবেন আর কোনটাকে নয় সেই ব্যাকরণ বিচার করতে গিয়ে সংগ্রামের পথ থেকে যেন সরে না যাই। আর নিতান্তই যদি পুরুষবিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়, তো পাক। তার জন্যে আমি সংগ্রামের কাফেলা থামিয়ে দেব? কক্ষনো নয়। পুরুষ অর্থ যদি হয় পিতৃতন্ত্রের পাহারাদার, তাইলে পুরুষবিদ্বেষী হওয়াও জায়েজ আছে।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *