May 15, 2024
মন ও জীবন যাপনফিচার ৩

মেনোপজের পরে যৌনসম্পর্ক

যখন আর পিরিয়ড হবার বা গর্ভধারণের চিন্তা থাকেনা বা বাচ্চারাও হয়তো বড় হয়ে গেছে, তার মানে আপনার মেনোপজ পরবর্তী যৌনজীবন নিশ্চয়ই খুব আকর্ষনীয় হবার কথা! হ্যাঁ তা সত্যি, তবে কখনোই এমন আশা করা যাবে না যে এ সময়ের যৌনসম্পর্ক ২০ বছর বয়সের সম্পর্কের মতোই হবে। তাহলে কেমন হবে সেই সময়ের যৌনজীবন? এ বিষয়টি নিয়ে বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ  অনুবাদ করেছেন পূরবী চৌধুরী।

জনস হপকিন্স মেডিসিন এর মনোরোগ বিভাগের সেক্স ও জেন্ডার ক্লিনিকের ডিরেক্টর ক্রিস ক্র্যাফট বলেন, আপনি যখন পোস্টমেনোপজাল সময়ে পৌঁছে গেছেন তখন হয়তো আপনার হাতে কাটানোর মতো অনেক সময় রয়েছে এবং বাসায় বেশ স্বাধীনতা পাচ্ছেন; কারণ এই সময়ে আপনার কেরিয়ার কিছুটা শেষের পথে থাকে এবং বাচ্চারাও স্কুল-কলেজে ব্যস্ত। কিন্তু আপনার জীবনের এই সময়টাতে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে যা আপনাদের ঘনিষ্ঠতায় প্রভাব ফেলে। হয়তো এ সময় আপনার আগের পালন করে আসা সম্পর্ক ও দায়িত্বগুলোকে আবার ঢেলে সাজাতে হচ্ছে।

ফ্যাক্টর বা শারীরিক পরিবর্তন আপনার ইচ্ছার উপর প্রভাব ফেলে

মেনোপজের সময় এস্ট্রোজেন হরমোন কমতে থাকে। তাই প্রতিমাসের নিয়মিত পিরিয়ড সাইকেল (প্রতি মাসে ১বার) আর আগের মতো থাকে না যা দীর্ঘসময় ধরে একই রকমভাবে হয়ে আসছিল। মেনোপজে যাবার আগের সময়টাকে বলা হচ্ছে পেরি-মেনোপজ। এই ধরনের পরিবর্তন আপনার যৌনসম্পর্কে বেশ প্রভাব ফেলে কারণ এ সময়ে যৌনইচ্ছা এবং উদ্দীপনা অনেকটাই কমে আসে। ফলে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা যায় যেমন যোনীপথ আগের মতো প্রস্তুত থাকে না (ভ্যাজাইনা কম স্থিতিস্থাপক বা শুষ্ক থাকে) ফলে সহবাসে অনেকটা ব্যাথা তৈরি হতে পারে। রিপোর্টে দেখা গেছে এক তৃতীয়াংশ পেরি-মেনোপজাল বা পোস্ট-মেনোপজাল নারীদের যৌন সম্পর্কে কম ইচ্ছার কারণে অর্গাজম হবার ক্ষেত্রেও বেশ সমস্যা দেখা যায় । আরো বলা যায় এই বয়সে নানা ধরনের জটিল অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়, যা শরীরের অন্যান্য কার্যক্ষমতাকে অনেকটাই কমিয়ে ফেলে যার সবকিছুই আসলে যৌন সম্পর্কে প্রভাব ফেলে।

সহবাস কমে যাওয়া স্বাভাবিক

ক্র্যাফট বলেন, যদিও মিডিয়া এবং ড্রাগ কমার্শিয়ালগুলো আপনাকে এটা বিশ্বাস করাতে চাইবে যে বেশি বয়সের সহবাস প্রায়ই আনন্দময় হয় না যা আগে সবসময় হতো। জেনে রাখুন, এ সময়ের শারীরিক নানা পরিবর্তন যেমন ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস বা যোনিপথের শুষ্কতা এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ইত্যাদির কারণে এটা হতে পারে। ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সংখ্যায় অর্ধেক নারী সহবাস করতে পারেন কিন্তু ৭০ বছর বয়সে এটা কমে ২৭ ভাগ হয়ে যায়। যৌনইচ্ছা কমে যাওয়া মানে এটাও না যে আপনি আপনার পার্টনারের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে পারবেন না। সেই সময়ে আপনারা লুব্রিক্যান্ট, ভ্যাজাইনাল ময়েশ্চারাইজার অথবা কোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো ওষুধের সাহায্য নিয়ে কিংবা অন্য কোন পদ্ধতিতে নানা উপায়ে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারেন।

ক্র্যাফট ব্যাখ্যা করেন, এভাবে যে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে থাকা দম্পতির এক তৃতীয়াংশের এই সময়ে কোনো যৌন সম্পর্ক থাকে না বা থাকলেও সেটা খুব কম। কিন্তু তারা এই সমস্যাকে গুরুত্ব দেয় না। এটা এমন একটা বিষয় যেখানে তাদের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল। তারা তাদের ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে নানা ধরণের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে, যেমন- পাশাপাশি অনেকটা সময় কাটানো, পরস্পরকে আদর করা, একই বিছানায় থাকা, হাসাহাসি করা ইত্যাদি, এবং সর্বোপরি তারা খুশি থাকতে পারবে।

ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা

যৌনজীবন এভাবে গুটিয়ে আসা যদি আপনার কাছে অসহনীয় মনে হয় তবু ভয় পাবেন না। কারণ অনেক দম্পতি তাদের বেশি বয়সেও নিজেকে নানাভাবে সক্রিয় রাখতে পারে। শুধু সচেতন থাকুন আপনার ভালো অনুভুতি অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে।

ক্র্যাফট বলেন, যেহেতু এই বয়সে যৌন উত্তেজনায় সাড়া দেওয়া এবং অর্গাজম হওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে যায় তাই অনেক সময় নারীরা যৌনতা ছেড়ে দেয়, কিন্তু মানসিক সংযুক্তি এবং শারীরিক উদ্দীপনাই এই সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারে। আপনি যখন ওই বয়সে পৌঁছাবেন তখন আপনার যৌনাঙ্গের রক্ত যতটা ধীরে উত্তেজিত হয় ঠিক ততটা ধীরে আপনিও উত্তেজিত হবেন, কারণ আপনার শরীরে ঠিক আগের মতো একই সংবেদনশীলতা নেই, ফলে অর্গাজম পর্যন্ত পৌঁছাতেও সময় লাগে। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন বেশি পরিমাণে সরাসরি ক্লিটোরিসে তীব্র উত্তেজনা তৈরি করা।

ক্র্যাফট বলেন, সহবাসের পরিবর্তে বিভিন্নভাবে পরস্পরকে স্পর্শ করা, আদর করা যেতে পারে ঠিক যেগুলো নিজেদের জন্য সবচাইতে ভালো। তাহলেই সব ঠিক হতে পারে। অন্যরা কী করছে সেগুলো চিন্তা করা বাদ দিতে হবে, বরং এটা ভাবুন আপনি এবং আপনার পার্টনারের জন্য কোনটা ভালো। এই বয়সে আপনারদের যৌনসম্পর্ক এবং ঘনিষ্ঠতার জন্য কী করা যেতে পারে এবং তা বাস্তবতার নিরিখে কেমন হবে, সেগুলো ঠিক করতে আপনি আপনার পার্টনারের সাথে আলাপ করবেন এবং মনে রাখবেন সময় কাটানোটাই মূল, যা হয়তো সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।

সুস্থ জীবন পদ্ধতি অনুসরণ, পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং ভালো খাওয়া আপনাকে সুস্থ যৌন ভাবনায় সহায়তা করবে এবং ঘনিষ্ঠ হবার ক্ষেত্রে ভালো অনুভুতি দিতে পারবে, এবং তা সামনের দীর্ঘ পথচলায়ও সহায়ক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *