May 17, 2024
সাহিত্যআরও ভাবনাফিচার ৩

‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের ভাষা

লিখন চন্দ্র দত্ত ।। বিদেশের বহু ভালো সিনেমা দেখেছি কিন্তু বড়পর্দায় দেখার সৌভাগ্য কখনো ঘটেনি। সেই কান ফেস্টিভ্যালের সময় থেকে রেহানা মরিয়ম নূরের প্রশংসা শুনে আসছি, সেই সিনেমা যখন দেশে মুক্তি পাচ্ছে তখন ভাবলাম বড় পর্দার স্বাদ নেবার বেশ একটা সুযোগ পাওয়া গেল। প্রথমদিনের শো, যাওয়ার সময় মনে অতটা আশা রাখিনি। দেশি কিছু তথাকথিত ভালো ছবি দেখার তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে আমাদের চলচ্চিত্রের ‘ভালো’ সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় ভাবছিলাম কি আর হবে? তবুও গিয়ে দেখা যাক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ কতটা কি করেন। ছবি শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যে ভুল ভাঙতে শুরু করল। দেখলাম পরিচালক মশাই তো ফিল্ম গ্রামারে সিদ্ধহস্ত। সেই ছবি যে এমন ধাক্কা দেবে সেটা কে বলতে পারত!

প্রথমেই বলে রাখি, মনে হয়না এই ছবি বোঝার দর্শক এখনো এদেশে তৈরি হয়েছে। সিনেমা দেখার সময় দর্শক যেন অঙ্ক ক্লাসে বসছেন, সর্বদা সজাগ থাকতে হচ্ছে, এক মুহূর্ত ওদিক ফিরেছ কি ফসকে গেল! ছবির গল্পটা সোজা। নামচরিত্র রেহানা, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৩৭ বছর বয়সী বিধবা একরোখা অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর। একদিন কলেজ ছুটির সময় রেহানা দেখতে পায় তাঁরই কলিগ এক প্রফেসরের রুম থেকে একটি ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসছে। সে ছাত্রীটিকে চাপ দেয় প্রিন্সিপালের কাছে কমপ্লেইন করার জন্য এবং সাথে অভয়ও দেয় যে রেহানা তার পক্ষে সাক্ষী হিসেবে থাকবে। কিন্তু ছাত্রীটি নিরুপায়, কেউ তার কথা বিশ্বাস করবে না এবং রিপোর্ট করা মানে জানাজানি হয়ে যাওয়া, যেটা সে মোটেও চায় না। কিন্তু রেহানা বেপরোয়া। ওই শিক্ষক তাঁর সামনে এভাবে ঘোরাফেরা করে বেড়াচ্ছে এবং সেই লোকটি যে এত সহজে পার পেয়ে যাবে সেটা সে কোনভাবেই মানতে পারে না। এক পর্যায়ে রেহানা প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ করে, তবে সাক্ষী হিসেবে নয়, ভিক্টিম হিসেবে। সত্যের সাথে থাকার জন্য যদি তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় তাহলে সেই মিথ্যাটাই তার জন্য সত্য। এগিয়ে চলে সিনেমা।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ আধুনিক ভাষায় রচিত চলচ্চিত্র। গল্পের এই সাধারণ ফ্রেমওয়ার্ক ছবিটিকে (বিশেষত তার চরিত্রগুলোকে) বিশেষভাবে বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। এতে দর্শক আর প্লটের জটিলতায় হাবুডুবু খান না, বরং মূল ছবিটি ভালভাবে ধরতে পারেন।

বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ পরিচালকরা আমার কাছে দুই ভাগে বিভক্ত। এদের একভাগকে আমি বলি mathematician। অর্থাৎ এরা গণিতবিদের মত সূত্র মেনে চলেন। আলগা ইমোশনের এদের কাছে কোনো দাম নেই। এরা এদের ছবিতে সবকিছু বিচার করেন মস্তিষ্ক দিয়ে, হৃদয় দিয়ে নয়। প্রয়োজনের বাইরে একটা শটও এঁরা বাড়তি খরচ করবেন না। অ্যালফ্রেড হিচকক, ইঙ্গমার বার্গম্যান, ডেভিড লীন কিংবা সত্যজিৎ রায় হলেন এ ধরনের পরিচালক। আমাদের আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদও সেই দলে পড়েন। সাদ’র যখন কিছু বলার থাকে, তখন তিনি খুব ভালোভাবেই জানেন কথাটা কীভাবে বলতে হবে (কম শট ব্যয়ে কতটা সহজে, গুছিয়ে কথাটা বলা যায়। এই গুণ আজকের দিনের কোনো বাংলা চিত্রপরিচালকের আছে কি?)। শেক্সপীয়ারে যেমন আমরা পাই ইকোনমি অব ওয়ার্ডস, সাদ’র ছবিতেও পাই তেমনটা, ইকোনমি অব শটস। প্রয়োজনের বাইরে শুধু ভালো দেখাবে বলে কিংবা দর্শককে একটু আলগা সুড়সুড়ি দিতে একটা শব্দও সাদ বাড়তি খরচা করতে রাজি নন।

একটি আদর্শ সিনেমার স্টাইল নির্ধারিত হয় তার প্রধান চরিত্র অনুসারে। রেহানার ক্ষেত্রেও সেই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। ছবিটির স্টাইল গড়ে উঠেছে রেহানা চরিত্রের বাইরের আপাত উগ্রতা ও তাঁর অবচেতনের সামগ্রিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। বাইরের দিক থেকে মেয়েটি কঠিন, বদমেজাজি ও একরোখা। কিন্তু অবচেতনে সে অত্যন্ত নড়বড়ে, দিশেহারা। ভেতরে ভেতরে কী যেন তাঁকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সবখানে, সবসময়। সেই উথাল-পাথাল অবস্থায় ওই ছাত্রীটিকে সে দেখতে পায়। বারুদে আগুনের ফুলকি পড়ে! আর ওই শিক্ষকটিকে শায়েস্তা করার ব্যাপারটা তাঁর কাছে প্রায় অবসেশনের পর্যায়ে চলে যায়। সর্বশক্তি দিয়ে সে হামলে পড়ে তার ওপর। কাজেই গৎবাঁধা নিয়মে ছবিটি করলে চরিত্রটির ওপর আর ন্যায়বিচার করা হতো না।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পুরো সিনেমাটাই তুলেছেন ক্লোজআপে। প্রতিটা শট নেয়া হয়েছে নড়বড়ে অস্থির handheld ক্যামেরায়। পুরো সময়টা জুড়ে আমরা একটি মেডিকেল কলেজের আলো-আঁধারি অফিসরুম, বারান্দা, ছাত্রীদের হল, ক্লাসরুম, সিঁড়ি, লিফট ও এসবের নিত্যপরিচিত ছকে বাঁধা শব্দের জগতে আটকে যাই। রেহানার সাথে সাথে আমাদেরও দমবন্ধ হয়ে আসে। এর সাথে যোগ হয় ছবির striking color scheme। বিশেষভাবে বাছাই করে করে সেট থেকে উত্তেজক সব রং বাদ দেয়া হয়েছে। ছবিজুড়ে শুধুই নীলের প্রলেপ। এই বিশেষ রঙটি একইসাথে মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক পরিমণ্ডলটি যেমন তুলে ধরেছে, পাশাপাশি রেহানার বাড়তে থাকা অবসেশানের প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। স্টুডিওর কৃত্রিম পরিবেশ বর্জন করে ছবিটি তোলা হয়েছে একটি মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরে, লাইভ সাউন্ডে। ছবির শুরুর ৫ মিনিটের মধ্যেই ছবির মুড স্থাপিত হয়ে যায়। আজমেরী হক বাঁধনের লুক, সাউন্ডের ব্যবহার, বিশেষ লাইটিং মেথড ও এডিটিংয়ের কায়দা – এই সবকিছু শেষপর্যন্ত ছবির গম্ভীর থমথমে ভাবটা ধরে রেখেছে।

রেহানা মরিয়ম নূরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর একটা হল এর acting method। এই দিকটা একটু বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার।

প্রেস কনফারেন্সে অভিনেত্রী আজমেরী হক স্মৃতিচারণ করছিলেন, গড়ে একটা শটের জন্য তাঁকে ৩০টা করে টেক দিতে হয়েছে। কোনো কোনো শট হয়ত ৩৬ নম্বর টেকে নেয়া হলো, কিন্তু সাদের কোনো ভাল-মন্দ কথা নেই। একটা প্রশংসাবাক্য দূরে থাক, সন্তুষ্টিবাক্যটাও তার মুখ থেকে জুটছে না। বরং তাকে দেখে মনে হচ্ছে সময় গড়িয়ে যাচ্ছে (ফিল্মে time is money) বিধায় মোটামুটি পারফরম্যান্সেই তাকে টেক ওকে করতে হচ্ছে! বাড়তি চাপ দিতে দিতে পরিচালক বাঁধনকে তাঁর শেষ সীমায় ঠেলে দিয়েছেন। রেহানার বিশেষ অ্যাকটিং মেথড বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ চিত্রপরিচালকদের একজনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ফরাসি চিত্রপরিচালক রবার্ট ব্রেসোঁ। ব্রেসোঁ তাঁর ছবিতে কখনো পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করতেন না। তিনি এমন লোকদের নিয়ে কাজ করতেন যারা জীবনে কখনো ক্যামেরার সামনে দাড়ায়নি। এমনকি তাদের actor বলতেও তাঁর বাঁধত। তিনি এদের বলতেন মডেল। চিত্রশিল্পী বা ভাস্কররা যেমন একটি মডেলকে সামনে বসিয়ে, তাঁকে অবলম্বন করে ছবি আঁকেন বা ভাস্কর্য তৈরি করেন, ব্রেসোঁ সেই অর্থে তাদের বলতেন মডেল। এই মডেলদের দিয়ে তিনি একই দৃশ্য ৪০/৫০ বার করিয়ে নিতেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা কাজটা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যায় এবং নিজের হাঁটা-চলা, কথাবলা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অসচেতন হয়ে পড়ে। ব্রেসোঁ বলতেন, স্বাভাবিক জীবনে আমরা আমাদের পরিচালনা করি না বরং আমরা পরিচালিত হই ইচ্ছানিরপেক্ষ ক্রিয়া (automatism) দ্বারা। আমরা যে উঠি-বসি, কথা বলি সেই কাজগুলো সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকি না। যে শব্দগুলো আমাদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে সেগুলো আমরা ভেবে বলি না বরং কখনো কখনো মুখ থেকে বেরিয়ে আসা শব্দগুলোই আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। এটাই হলো automatism। চলচ্চিত্রে আমাদের মেকি থিয়েটারি অভিনয়ের বদলে দরকার automatism। সেজন্য সাধারণত আমরা যে ছবিগুলো দেখি সেগুলো নিছক filmed theatre এর বেশি কিছু হতে পারে না।

সাদ ও বাঁধনের (এবং অন্যান্যদের) অক্লান্ত চেষ্টায় রেহানার অ্যাকটিংটা পড়েছে automatism এর পর্যায়ে। এছাড়া ছবির কাটিং রীতিতেও ব্রেসোঁর যথেষ্ট প্রভাব চোখে পড়ে। আপাতদৃষ্টিতে কোনো কোনো দৃশ্যের অনেক অংশকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিলেও সেগুলো আসলে cliche ছাড়া কিছু নয়। ব্রেসোঁ তাঁর ছবি থেকে নির্দ্বিধায় এসব eliminate করে দিতেন। রেহানাতে এর নিদর্শন ভুরি ভুরি। একটা উদাহরণ দিই। রেহানা কমপ্লেইন করতে প্রিন্সিপালের কাছে যাচ্ছে। আমরা রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি এরপর কি হবে। রেহানা প্রিন্সিপালের দরজার সামনে গিয়ে দাড়াল। কাট। প্রিন্সিপাল ও রেহানা বসে আছেন। তাদের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে এবং রেহানার যা বলার সব বলা হয়ে গেছে। এই যে রেহানা ও প্রিন্সিপালের confrontation, এটা সাদ অনায়াসে বাদ করে দিলেন ছবি থেকে।

রেহানা ছবিতে সাদ সূঁচ দিয়ে সেলাই করার মতো যেখানে যেমনটা প্রয়োজন টুকরো টুকরো শটে সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে দিনের টুকরো টুকরো মূহুর্তগুলো গেঁথে রেখেছেন। ঠিক তেমনি জায়গামতো লম্বা লম্বা টেক নিতেও দ্বিধা করেননি। সেই টেকগুলোর পারফরম্যান্স দেখলেই বোঝা যায় এগুলো দিতে আজমেরী হক বাঁধনের হাড় জুড়িয়ে গেছে। আমাদের সবার মধ্যমণি এখন সাদ ও বাঁধন। কেরিয়ারের দিক থেকে দেখলে এটাই বাঁধনের প্রথম বড় সাফল্য। ব্রেথলেস (১৯৬০) বের হবার পর ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো লিখেছিলেন, এই মূহুর্তে ইউরোপের প্রধান অভিনেত্রীদের মধ্যে জিন সিবার্গ অন্যতম। বাঁধনকে নিয়ে যদি আমরা সেরকম কিছু বলি তাহলে খুব একটা ভুল হবে কি? বোধহয় না।

রেহানা মরিয়ম ছবিটি আমার ভালো লাগার সবচেয়ে বড় কারণ এটি প্রথাগত হলিউডি ব্যাকরণের বাইরে তোলা। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। দুজন লোক বসে কথা বলছে। সাধারণ হলিউড পদ্ধতি অনুসারে এখানে বসবে শট-রিভার্স শট। একবার এ, একবার সে। কিন্তু রেহানার কাটিং ভিন্ন রকম। এখানে কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে সেটা না দেখে প্রথাবিরোধীভাবে একজনের দিকে ক্যামেরা তাক করে রাখা হচ্ছে। আরেকজনের দিকে তাকানোর জন্য সহজ একটা ‘কাট’ এর বদলে ক্যামেরাম্যান ঘাড় ঘুরিয়ে ক্যামেরাকে টেবিলের এপাশ থেকে ওপাশ নেন। দুজন মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও তাদের অন্তঃমানসিক দ্বন্দ্ব প্রকাশে এর চেয়ে Cinematic কোনো পদ্ধতি হতে পারে কি? একটি টানটান শটে একনাগাড়ে একজনের দিকে ক্যামেরা তাক করে রাখায় শটের তীব্রতা যে পরিমাণ বেড়েছে সেইটে প্রথাগত শট-রিভার্স শটে কখনো পাওয়া যেত কি?

লক্ষ্য করার বিষয় এই ছবিটি একদম সঙ্গীতবিহীন। রুদ্ধশ্বাস মূহুর্তগুলো underline করে দিতে সঙ্গিতের বদলে ব্যবহৃত হয়েছে realistic sound। যেমন একটি দৃশ্যে ক্যামেরা স্থির, রেহানার মুখে কোন expression নেই, কিন্তু আমরা জানি মনে মনে তাঁর ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সেসময় পাশে টিকটিক টিকটিক শব্দে বাজতে থাকা ঘড়ি রেহানার চিন্তার dynamics কে কত উচ্চ থেকে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গেছে সেটা ছবিটি না দেখে কখনো ধারণা করা যাবে না।

প্রেস কনফারেন্সে পরিচালক সাদ বলেছেন, সাম্প্রতিক কোনো ইস্যুর সাথে গল্পের সংযোগ স্থাপনের কোনো উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। বরং রেহানা চরিত্রটি, এর ভাল-খারাপ আচরণ, এর জটিল মনোবিধি তাঁকে ছবি করতে উৎসাহিত করেছে। তবুও সাম্প্রতিক #মিটু আন্দোলনের মত ঘটনার সাথে আমরা এর সাদৃশ্য খুঁজে নিতে পারি। তবে ছবিটি কোনো কিছুর একতরফা পক্ষ নেয় না। প্রতিটি চরিত্রকে সমান নিষ্ঠুরভাবে বিশ্লেষণ করে যেতে থাকে। এমনকি এর নামচরিত্রটিও এর থেকে রেহাই পায় না। সাদ যেন জাঁ ককতোর মতো বলছেন, ‘‘I am on my own side’’। বাহ্যিক কোনো বস্তু দ্বারা বিন্দুমাত্র প্রভাবিত না হয়ে নিরপেক্ষভাবে সাদ পুরো ছবি গড়ে তোলেন। ক্যামেরার ভাষাতেও এই জিনিসটা ধরা পড়ে। চরিত্রদের থেকে কখনো দূরে গিয়ে উঁকি দেওয়ার মত করে, কখনো ফ্রেমের বিরাট অংশ ফাঁকা রেখে চরিত্রদের এককোণায় ঠেলে দিয়ে নানা কোণ থেকে ছবিটি আসল পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। ছবি শেষ হলে দর্শক একগাদা প্রশ্নের ক্রিস-ক্রসে পড়ে যাবেন। এর সমাধানও ভেবে বের করতে হবে তাদেরকেই।

রেহানা মরিয়ম দেখতে দেখতে বিলেতের আরেকটি প্রধান চিত্রপরিচালকের কথা মনে পড়ে যায়। রাজনৈতিক ছবি করিয়ে হিসেবে ইনি বিশ্বখ্যাত। ইনি হলেন ফরাসি-গ্রিক পরিচালক কস্তা গাভরাস। কস্তা গাভরাসের ছবিগুলোর মতোই রেহানা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আমরা মূল গল্পে ঢুকে যাই। ছবি এতটাই fatless ও টানটান যে পর্দার বাইরে একমুহূর্ত তাকানোর জো নেই! সাদের fluent cutting এ রোলার কোস্টারের বেগে ছবি ছুটে চলে। ক্রমে ক্রমে ছবির potential সঞ্চার হয় দর্শকের মধ্যে। ছবির শেষে আমরা রাগে গজগজ করতে করতে হল ছাড়ি। ঠিক যেমনটা তাঁর ছবিগুলোর মাধ্যমে করতে চেয়েছিলেন কস্তা গাভরাস। সেজন্য তাঁর Z, Confession ইত্যাদি ছবির সাথে রেহানার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে মিল না থাকলেও স্টাইলগত বহু মিল চোখে পড়ে।

সব কথার শেষ কথা, সেই sixty four thousand dollar questionটি হলো, লোকে ছবিটা দেখছে কি না? একটু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। ১২ তারিখ সারাদেশে ছবি মুক্তি পেল। খুব আশা প্রথমদিনের শোতে ছবিটা দেখব। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ঝড় দেখলাম মনে মনে সন্দেহ ছিল শো এর টিকিট পাব তো? ১২ তারিখ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে গিয়ে হলে উপস্থিত হলাম। টিকিট কেটে ছবি দেখতে বসে দেখলাম সে গুড়ে বালি। হলের অর্ধেকটাই খালি রয়ে গেছে। আমাদের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদ আছে। ঘরর গরু ঘ্যাঁডার ঘাস ন হায়। অর্থাৎ গেরস্তের গরু কখনো নিজ আঙিনার ঘাস খায় না। বাংলা ছবির দর্শক যদি এই গরুর মত আচরণ করতে থাকেন তাহলে সামনে বাংলা ছবির শ্রাদ্ধ আর বেশিদিন নেই।

সিনেমা জিনিসটার ব্যাপারে আমার একটাই দোষ, আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে। ঠিক অনেকটা রবি ঠাকুরের অপরিচিতা গল্পের বিনুদার মতো। “বিনুদাদার ভাষাটা অত্যন্ত আঁট। যেখানে আমরা বলি ‘চমৎকার’ সেখানে তিনি বলেন ‘চলনসই’।” এতদিন বলে বেড়াতাম সাম্প্রতিক বাংলাদেশে দেখবার মতো শুধু একটা ছবি হয়েছে। সেটা কামার আহমাদ সাইমনের ডকুমেন্টারি ছবি ‘শুনতে কি পাও?’ সেই তালিকায় এখন আরেকটি ছবি যুক্ত হলো।

লিখন চন্দ্র দত্ত: দ্বাদশ শ্রেণি, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম

2 thoughts on “‘রেহানা মরিয়ম নূর’ চলচ্চিত্রের ভাষা

  • SHARMINA AMIN

    what a review! excellence in it’s infinite state! a boy of 18 with a mind of 50! looking forward to read more from Likhon!

    Reply
  • Pijus Ch Dey

    outstanding !
    very much calculative….
    obviously it’s about your review 😀

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *