পিতৃতন্ত্রের পতন না হওয়া অব্দি নারীর জন্য নববর্ষ বলে কিছু নেই
এ বছরটাও শেষ হলো তবে? কী পেলাম বছর জুড়ে নারীর জন্য? উন্নয়ন? পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা? সহজ শর্তে ঋণ? নাকি সব ছাপিয়ে দানবের মতো চেপে বসলো ধর্ষণের ভয়াবহতা, পারিবারিক সহিংসতার নির্মমতা, প্রতারণা, যৌতুক, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, ভিক্টিম ব্লেইমিং, অপমান আর বঞ্চনা?
নারীর জীবনের মূল সমস্যা বঞ্চনা, যা জন্মসূত্রে সে পায়। শারীরিক লিঙ্গগত কারণে নারীকে বঞ্চনা করে পুরুষ, পুরুষের সমাজ এবং পুরুষের রাষ্ট্র। পুরো দুনিয়াটাই পুরুষের। পিতৃতন্ত্র সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছে, যে সিস্টেম পুরুষকে বঞ্চনা করবার কর্তৃত্ব দিয়েছে নারীর ওপরে। নারীর প্রতি ঘটে যাওয়া সকল নির্যাতনের মূল কারণ এই বঞ্চনা। এই সমাজ নারীকে ইনফেরিয়র হবার তাগাদা দেয় এবং পুরুষকে নিজেকে সুপিরিয়র ভাবার সুযোগ ও সাহস যোগায়। এই চক্র ভাঙতে হবে।
বছরজুড়ে রাষ্ট্র নারীকে কল্যানকর কিছুই দিতে পারেনি। নারীর জীবনে কোনো মঙ্গলবার্তা আনতে পারেনি। বরং নারীকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দেবার আয়োজন চলেছে সর্বত্র। সবশেষ কক্সবাজারে নারীর জন্য আলাদা জোন তৈরির অপচেষ্টা পুরো সমাজ ও প্রশাসনের পুরুষতান্ত্রিক নোংরা মানসিকতার চিত্র তুলে ধরলো। এর আগে একের পর এক ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা আমাদের বারবার আহত করেছে। কিন্তু আমরা সমাধান পাইনি কোনো। আমরা দেখেছি সরকার দলীয় এমপি’র প্রকাশ্য নারীলিপ্সার চেহারা। তার কোনো বিচার হয়নি। প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে তাকে সরিয়ে আমাদের সান্তনা পুরস্কার দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা তাতেই খুশি?
নারী এতই সস্তা কেন? কেন নারী আজো সস্তা? নারীকে নিয়ে যে কেউ যেকোনো খেলা খেলতে পারে কেন? কেন প্রশাসনে বসা পুরুষতান্ত্রিক লোকেরা ইচ্ছে হলেই নারীর হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে? কেন সবখানে নারী সবার খেলার পুতুল? কেন ঘরে বাইরে অফিসে আদালতে হাটে বাজারে খেলার মাঠে নারী পুরুষের নেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য? কেন নারীকে পুরুষতান্ত্রিক-পুঁজিবাদের নির্দেশে নিজের জীবন সাজাতে হয়? নারীর খাওয়া পরা গড়ে ওঠা থেকে শুরু করে উপার্জন সবই কেন নিয়ন্ত্রণ করে এই পিতৃতান্ত্রিক সিস্টেম?
কারণ যতদিন পর্যন্ত সিস্টেম বলবৎ থাকবে, ততদিন সেটাই ঘটবে। তাই সবার আগে সিস্টেম ভাঙতে হবে। পিতৃতন্ত্রের উপর চরম আঘাত হানতে হবে। তা না হলে প্রতিটি বছরই হবে নারীর জন্য নিপীড়ন নির্যাতন ও বঞ্চনার বছর। নতুন বছর বলে নারীর জীবনে কিছুই ঘটবে না কখনো। তাই আগে চাই সিস্টেমের পতন। পুরুষতন্ত্রের পতন। এরপর প্রকৃত নববর্ষ উদযাপন করবে সব নারী!