November 21, 2024
মুক্তমত

আপনারা আরো চুপ করে থাকেন!

সিদ্রাতুল মুনতাহা ।। এইত মাস কয়েক আগে ঘটে যাওয়া নরসিংদীর সেই আলোচিত যুবতী হেনস্থার কথা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। না মনে থাকাও স্বাভাবিক, প্রতিদিনের নানান অগুরুত্বপূর্ণ বিনোদনমূলক ইস্যুর ভিড়ে আমরা সিরিয়াস ইস্যুর কথা সহজেই ভুলে যাই। মনে আছে ৬০ বছর বয়সী এক মহিলা ২২ বছর বয়সী এক তরুনীকে হেনস্থা করেছিলেন তার পোশাকের জন্য। সম্প্রতি সেই নারীর জামিন হয়েছে এবং দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সেই তরুণী। তরুণীর পরনে ছিল জিন্স ও টপ। বিচার অনুযায়ী রায় এসেছে ৬০ বছর বয়সী কোনো নারী তার মেয়ের বয়সী কাউকে শাসন করলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারেনা, আর তাছাড়া গ্রাম্য এলাকায় এ ধরনের পোশাক পড়া একেবারেই অনুচিত যেখানে কিনা গুলশান বনানীতেও এ ধরনের পোশাক পরিহিত করা হয়না।

আপনাদের কাছে কি হাস্যকর লাগছে না এসব কথাবার্তা? বিচার? এটা বিচার? সেই নারীকে গ্রেফতারের পর পরই একটা ছবি ছাপা হয়েছিল নিশ্চয়ই মনে আছে, যে ছবিতে তার হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখা যাচ্ছিল। সেই হাস্যমুখী চেহারা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড় উঠেছিল যে উনি এত আনন্দিত কেন? এখন বোঝা গেল কেন আনন্দিত ছিলেন কেন? আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। উনি জামিন পেয়ে যাবেন। আপনাদের কি মনে হচ্ছেনা এই পুরোটাই একটা সিন্ডিকেট এর অংশ? নারীদের দিয়েই নারীদের হ্যারাজ করা হচ্ছে, যাতে অপরাধটা ক্ষুদ্র হিসেবে গণ্য হয়ে লঘুদন্ডে পার পাওয়া যায়।পুরুষতন্ত্রের নারীদের দিয়ে নারীদের দমিয়ে রাখার কি দারুন পদ্ধতি।

রায়ে সংস্কৃতির কথাও তোলা হয়েছে। এই পোশাক নাকি বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে মানানসই না। আচ্ছা বোরকা কি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পোশাকের অংশ?এই নিউজ দেখে একই সাথে আমার বিরক্তবোধ এবং হাসি পেয়েছে। পোশাকের জন্য হেনস্থা হতে হচ্ছে, ভাবা যায়। এবং দোষী সে-ই যে হেনস্থা হয়েছে, হেনস্থাকারী না। বাংলাদেশের আইন কেমন যাচ্ছেতাই হয়ে যাচ্ছে না?

আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি বোরকা যারা পরে তারা নিজেদের ভীষন রকম সুপিরিয়র ভাবে। তাদের সুপিরিওরিটি এতই বেশি যে পাশ্চাত্য ঢং এ পোশাক পরা নারীরা তাদের কাছে সস্তা ধরনের। এবং তারা মনে করে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরা মেয়েদের ধর্ষণ করাও জায়েজ। আর এই সুপিরিওর মানসিকতার বড় সাপোর্টার পুরুষতন্ত্র অন্ধভাবে ফলো করা নারীরা। আমি কোনো লজিকই মেলাতে পারছি না। উনি কি অভিভাবক হিসেবে শাসন করেছেন মায়ের মত? হেনস্থা আর শাসনের মধ্যে কিন্তু ফারাক আছে। আর উনিই বা শাসন করার কে? স্বাধীনতার ৫১ বছর আমাদের পোশাক স্বাধীনতা নেই। ব্যাপারটা কি হাস্যকর!

আপনারা চুপ করে থাকেন আরো। মজা নিতে থাকেন। জানি এক শ্রেণির মানুষ এসব কাজকর্মে অসম্ভব মজা পাচ্ছে। তাদের কাছে এসবই লেজিট। স্বাধীনতা বলতে আদৌ আমাদের কিছু নেই। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। দেশের উন্নয়ন হবে, কিন্তু নারীদের দমিয়ে রাখা হবে। উন্নয়ন আসলে কিভাবে কোনদিক থেকে হচ্ছে মাঝে মাঝে আমি ভেবে পাইনা। আমি অভিভূত সত্যিই এই রায়ে অভিভূত, যদিও মনে মনে আন্দাজ করতাম। আপনারা যদি হিরো আলমের রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে আলোচনার ঝড় না তুলে এসব বিষয়ে ঝড় তুলতেন হয়তো এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার আমরা হতাম না। দিন যত যাচ্ছে আমরা কি আপডেটেড চিন্তাভাবনায় পরিবর্তিত হচ্ছি না, সস্তা বিনোদনমুখী হয়ে নিজেদের নিজে ধধংস করছি সবার কাছে প্রশ্ন রইল।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *