December 23, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

“পুরুষ মানুষ মেয়েদের দিকে তাকাবেই” – তাই?

সিদ্রাতুল মুনতাহা ।। নারীর শরীর – সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর মূল্যায়ন হয় শরীর দিয়ে!
আদৌ কি সেটা মূল্যায়ন? না নারীর শরীর পণ্য হিসেবে গণ্য হয়? কালো, মোটা, চিকন কত বুলিয়িং, কত মন্তব্য।

নারীর শরীরের প্রতি নজর পড়া শুরু হয় নারীর জন্ম থেকেই। কৈশোর বয়সে পা না দিতেই ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় গায়ে জড়াতে হয় ওড়না নামক কয়েক হাত এক কাপড়, নাহলে বুকে চোখ যাবে পুরুষের।সে নারী খারাপ বলে গণ্য হবে। ওড়নায় নারীর লজ্জা লুকায়িত? আসলে ওড়না কি আমাদের প্রটেক্ট করে? ওড়না পরি কিংবা বোরকা, লোলুপ দৃষ্টির শিকার নারীর শরীর বরাবরই হয়। ৩/৪ বছর বয়সী একটা মেয়ে শিশুর শারীরিক গঠন আর একটা ছেলে শিশুর শারীরিক গঠনের বিশেষ পার্থক্য থাকেনা। তবুও সেই শিশুর শরীরে পুরুষের চোখ যায় কারণ সে মেয়ে শিশু। নারীদেহের প্রতিটা অঙ্গ পুরুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কেউ কখনো ১০০ ভাগ আশ্বস্ত করতে পারবে যে পুরোপুরি পর্দা মেনে চলা কেউ কখনো পুরুষের লালসার দৃষ্টির শিকার হয়নি? আমাদের সোশ্যাল আইডলজি পুরুষতন্ত্র এমনভাবে সেট করে দিয়েছে যে নারীদেহ মানেই পুরুষের চোখের প্লেজার। নো ম্যাটার হোয়াট আপনি যে পোশাকই পরেন, পোশাক এখানে ফ্যাক্ট না। ফ্যাক্ট হচ্ছে আপনি নারী। আর আমরা নারীরা পোশাক আশাক মেইনটেইন করি পুরুষের জন্য। না,আর্কষণ করার জন্য না। তাদের দৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য।

সেটা কতটা ফলপ্রসূ? ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধা সেই চোখের লালসার শিকার থেকে মুক্তি পায়? অনেকের হয়তো ভালো লাগে ওয়েস্টার্ন পরতে বা শাড়ি পরতে, যেটাতে হয়তো পেট পিঠ দেখা যায়। তারা পারেনা, পারিবারিক ও সামাজিক কারণে। লোকে খারাপ বলবে একটু খোলামেলা পোশাক পরলে। এখনো নারীদের জাজ করা হয় পোশাক আশাক দিয়ে। কি অবাক করা বিষয় তাই না?

সম্প্রতি গত কয়েকমাসে কতজন নারী পোশাক নিয়ে হেনস্তা হয়েছে যারা আশেপাশের খবর রাখেন অবশ্যই জানেন। বিষয়টা হচ্ছে পুরুষের চোখ নিয়ে,কিন্তু এখানে পোশাক কেন আসছে? কারণ পোশাক হচ্ছে এক্সকিউজ, আমাদের দমিয়ে রাখার এক্সকিউজ। আমরা যেভাবে চলি, যা-ই পরি, চোখ দুটো ড্যাবড্যাব করে আমাদের বুক, আমাদের নিতম্বের দিকে তাকিয়ে থাকবে।

এখন এর সমাধান কী? বোরকা নিকাব পরা? না,সেই বোরকা নিকাবের ভেতর দিয়েও পেছন থেকে পশ্চাদেশের সাইজ বোঝার চেষ্টা করা হয়। নারী হচ্ছে একটা এন্ট্রারটেইন্টেনমেন্ট পুরুষের কাছে। শুধু একটা বাহানা চাই দোষারোপ করতে? ছিঁড়ে খেতে।

এর সমাধান কী? সমাধান হলো নিজেদের ইচ্ছামত চলা ,আমার যা ভালো লাগে আমি পরব। আমি যেটায় কম্ফোর্টেবল আমি পরব।পুরুষের চোখের দৃষ্টিতে থেকে বাঁচতে নিজের ইচ্ছা দমিয়ে আমরা পোশাক আশাক পরলে করলে এসব আরো বাড়বে। দোষী আমরাই হবো। এর মানে এই না সেই বিশ্রী দৃষ্টি আমরা অগ্রাহ্য করে যাব। কেউ বিশ্রী করে তাকালে কষে একটা চড় মারা সম্ভব না?

অবশ্যই সম্ভব।

সবসময় কেন এক্সট্রিম কিছু হবার অপেক্ষা করতে হবে? আমরা এক্সট্রিম কিছু হবার অপেক্ষা করি বলেই সাফারার বেশি হই। আমাদের চলাফেরা আমাদের স্বাধীনভাবে পোশাক পরার অধিকার আমাদের স্বাভাবিক করতে হবে, পুরুষদের বাজেভাবে তাকানো কিন্তু স্বাভাবিক করা যাবে না। “পুরুষ মানুষ মেয়েদের দিকে তাকাবেই” – এ কথাকে, এ বাক্যকে ‘না’ বলুন, এ বিগ নো।

আর আছে ধর্মের দোহাই। সবচেয়ে লেম ধরনের এক্সকিউজ। ধর্ম কখনো অপমান অপদস্ত করা কুদৃষ্টিতে তাকানো সাপোর্ট করেনা। আর হ্যাঁ, আমরা যথেষ্ট ধর্মীয় জ্ঞান রাখি, আমাদের যদি গুনাহগার বলা হয় আমরা জেনেশুনে নিজ দায়িত্বে গুনাহগার হচ্ছি আর এর দায়ভার ও পাপ নিতান্তই আমার।

আমি শুধু এটুকুই বলি, যে যেভাবে আরাম পায়, যার যেটা কম্ফোর্ট জোন,  সে সেভাবে চলবে। আর এজন্য কারো অধিকার নেই তাকে হেনস্থা করার। স্বাধীন দেশে কেন এত ভয়ে ভয়ে বাস? পুরুষের দৃষ্টির ভয়। আচ্ছা পুরুষদের কি লজ্জা করা করেনা যে আমরা এইটা নিয়ে ভয়ে থাকি? না আসলে লজ্জা করেনা তারা বরং প্রাউড ফিল করে।

একটা ছোট উদাহরণ দেই, এক শীতে আমি জিন্স ও টিশার্ট এর সাথে বুকখোলা জ্যাকেট পরে বের হয়েছিলাম। আমার দুইপাশে দুজন মানুষ হেঁটে যাচ্ছিল, একজন আমার বয়সী যুবক, আরেকজন মধ্যবয়স্ক হুজুর। সেই যুবক আমার পাশে খুব স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গেছে, অপরদিকে সেই মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি বিশ্রীভাবে তাকিয়ে ছিল। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? দৃষ্টিভঙ্গিতে।

রাস্তাঘাটে অনেকসময় অনেকের বিশ্রী তাকানো দেখে আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতাম, আমাকে ঠিকঠাক লাগছে তো? বাজে দেখাচ্ছে নাতো? দেখতাম, না মোটেও না। এরপর থেকে আর তাকাই না নিজের দিকে, আমি জানি আমি ঠিক আছি সমস্যা তার যে তাকাচ্ছে, এখন তাকালে তার দিকেই তাকাই চোখ গরম করে যে বিশ্রী করে তাকাচ্ছে। সেই বিশ্রী তাকানোতে অস্বস্তি বোধ হলে প্রতিবাদ করা বা কষে চড় লাগানোও আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগেনা।

যেকোন পোশাকে আমরা কম্ফোর্টবেল হতে পারি, শাড়ি, কামিজ, বোরকা, জিন্স, টিশার্ট এনিথিং। আমার কথা একটাই – We shouldn’t dress up for Men,We Should dress up For Us. পুরুষের বোঝা উচিত তোমাদের তাকানোর জন্য আমরা নিজেদের বদলে ফেলব না।এই চিন্তা দূর করা লাগবে। প্রয়োজনীয় না এদের তাকানো দেখে ওড়নাটা ঠিক করা লাগবে। তোরা কিছুই না। তোদের দেখে পোশাক আশাক ঠিক করে তোদের কুদৃষ্টির প্রায়োরিটি কেন দেব?ই ভটিজিং এর পাশাপাশি এই কুদৃষ্টির প্রতিবাদও হওয়া উচিত। নিজেদের কেন দূর্বল ভাববো? We will Be Confident, We will live our life as we want. আর এটাই ওদের শিক্ষা। যদি সবাই সম্মিলিতভাবে এটা করতে পারি আমাদের অবজেক্ট ও এন্টারটেইনমেন্ট এর বস্তু ভাবার সুযোগ এরা পাবেনা। মূল কথা হচ্ছে এদের দৃষ্টির সামনে নিজেদের নত করা যাবেনা।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখজের নিজস্ব বক্তব্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *