‘‘আমার সাথে থাকতে হলে নারীবাদ ছাড়তে হবে”
সাদিয়া আক্তার ।। আমি তখন একটা মূর্খ ছিলাম। মাঝখানের কিছুটা সময় এই মূর্খতায় আবদ্ধ থেকে এখন বেরিয়ে এসেছি আর উপভোগ করছি মানসিক প্রশান্তি। যে মেয়ে প্রেম, বিবাহ বা কোনো সম্পর্কের জন্য নারীবাদ ছেড়ে দেয় তারা হলো আক্ষরিক জ্ঞানসম্পন্ন এক ধরনের মূর্খ। আজ আমি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পরিচিত-অপরিচিত অনেকের কাছেই নারীবাদের কারণে লাঞ্ছিত হই। কারণ আমি তাদের মতো শান্তিপূর্ণ দাসত্ব মেনে নিতে পারিনি। আমি স্বাধীন হয়েও বার বার আমাকে হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তবে এই লাঞ্ছনা হলো আমার হাতিয়ার। সবাই আমাকে জোর করে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে বলে, বাইরে গেলে একটা বিশাল কাপড়ের আড়ালে থেকে গলার স্বর নিচু করে কথা বলতে বলে; কিন্তু কেন?
একবার আমার এক প্রাক্তন বলেছিল, “নারীবাদ ছাড়তে হবে আমার সাথে থাকতে হলে। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, এই জাতীয় আর কোনো আর্টিকেল লেখা যাবেনা, সব পোস্ট ডিলিট দিয়ে দিতে হবে, ধর্ম কর্ম পালন করতে হবে।” আমিও বেকুবের মত পিরিত রক্ষা করতে গিয়ে চুপ হয়ে থাকলাম। মেনে নিলাম সেই লোকটির কথা। মেনে নিয়েছিলাম তার শারীরিক মানসিক নির্যাতন। কিন্তু কোথায় আজ সেই প্রেমিক? সে এখন আমার নামে অনেক লোগো লাগিয়ে বেড়ায়। দাগ উঠিয়ে দিয়েছে আমার চরিত্রে। ওদের মত পুরুষের এসবই পারবে। যখন কোনো মানুষকে কোনো দিক থেকে ছোট করতে না পারবে তখন তার চরিত্রে কলঙ্কের দাগ বসিয়ে তাকে হেনস্থা করতে থাকবে। এমন অনেক এসেছে , আর দু’দিন পিরিতের আলাপ করেই বলবে নারীবাদ ছেড়ে দাও, বোরখা পরতে হবে, ওড়না বুকের উপরে দিতে হবে, ফোনের সব পাসওয়ার্ড আমাকে দিতে হবে, কোনো ছেলেবন্ধু থাকা চলবে না – এমন অনেক ফালতু কথা। মানে আমি থাকবো তার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এই ধরনের টক্সিক সম্পর্ক কি টিকিয়ে রাখা উচিত আমাদের? যেখানে আমি আমার মানসিক শান্তি পাচ্ছি না, যেখানে আমি আছি কারো দাসী হয়ে সেখানে কি আসলেই কোনো সম্পর্ক টেকে? নারীবাদ বা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলেই টেনে আনে ধর্ম। কিন্তু আসলেই কি ধর্ম কিছু করতে পেরেছিল নারীর অধিকার রক্ষায়?
কিছু কাপুরুষ নারীবাদ শব্দটাকে ব্যঙ্গ করে নেড়িবাদ বলে। বর্তমান ইস্যুতে উঠে আসা পোশাকের স্বাধীনতা প্রসঙ্গকে সাপোর্ট করায় অনেক কাপুরুষ আমাকে ইনবক্স করে – ‘‘হেই হট গার্ল আসো সেক্স চ্যাট করি, তোমার বুকের সাইজ কতো?, তুমি খুব সেক্সি, ভিডিও নাকি অডিও কোনটা করবা?’’ – ইত্যাদি ইত্যাদি। এরাই আবার কমেন্টে বলে – ‘‘নেড়ীবাদ চু* দী না, পাত্তা না পেয়ে এখন নেড়ীগিরি শুরু করছে।” আরো কুৎসিত সব কথা। এরা কি আসলেই সম্মান দিতে জানে কোনো নারীকে? এরা কি আসলেই জানে নারীবাদ মানে কী? এরাই কি ধর্ষক নয়?
নারীবাদ তো কখনো বলেনি পুরুষকে হেনস্থা করো, তার ক্ষমতা উচ্ছেদ করো, নারীর আধিপত্য থাকবে শুধু! এমনটা তো না। বরং এখানে উভয়ের সমতার কথা বলা হয়েছে, নারীর স্বাধীনতা, নারীর প্রাপ্য অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
আমি কথা বলি নারীর অধিকারের পক্ষে, আমি সোচ্চার নারীর পোশাক, চলাফেরা আর স্বাধীনতায়, আমি বেড়িয়ে এসেছি ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কার থেকে। এখানে আমার পাশে কেউ নেই। নেই বলে কি আমি থেমে যাব? আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে আমি নারীবাদ করি বলে, পরিবারের মানুষদের থেকে দূরে সরে গিয়েছি আমি নারীবাদ করি বলে। আমি মানবতায় বিশ্বাসী। আমি নারীবাদী।
প্রত্যেক নারীর উচিত আগে নিজের মানসিক প্রশান্তিকে প্রাধান্য দেয়া। কোনো টক্সিক রিলেশন টিকতে পারে না তার মানসিক শান্তির বিরুদ্ধে। বেড়িয়ে আসা উচিত এমন সম্পর্ক থেকে। নিজের পথে অটল থাকুন। জয় হোক নারীবাদের।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]
Excilent 👍