April 29, 2024
শান্তিবাড়িমন ও জীবন যাপনফিচার ৩

আমার মন ভালো আছে

মাহ্জাবীন রহমান ।। যখন ছোট ছিলাম, সারাক্ষণ সবকিছুর জন্য মাকেই ঠিক মনে হতো, কী পরবো, কী খাবো, কোথায় যাবো, হাসি-কান্না-আনন্দের ব্যাপারগুলো মা’র সাথেই জুড়ে ছিল। মা চলে যাবার পর মনের মধ্যে যে অস্থিরতা আর জীবনের যে কষ্টগুলো পিছু নিলো, এগুলো আমাকে খুব করে ভেঙেচুরে দিয়ে গেল। ভেতরে বাইরে সমানভাবে।

স্বাভাবিক জীবনে যা কিছু হয় আমি সেই জীবনে থেকেও জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। অকারণে হাসি, আবার তীব্র কষ্টের সময়েও খুব স্বাভাবিক থাকি। আমি যেন আমাতে নেই, অথচ একটাই জীবন আর সেটাও হাতে গোনা যায় এমন কয়টি বছর মাত্র! জীবন সুন্দর।

বুঝতে পারছিলাম আমার চারপাশে যা কিছু আছে সবকিছু থাকার পরও আমার চেয়ে কম পাওয়া মানুষগুলোর মত আমি খুশি হতে পারি না, কিছু ব্যর্থতা আর কষ্ট আমাকে, আমার জীবনের প্রতিটি আনন্দকে ঢেকে ফেলছিল। মনের ভেতরে প্রচন্ড চাপ ক্রমাগত বেড়ে চলছিল, এই চাপ সামলে নেবার মতো মনোবল পাচ্ছিলাম না, রুটিন লাইফের ২৪ ঘন্টা কেটে যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু সে দিনগুলোর প্রাপ্তির চেয়ে ‘নেই নেই’ ব্যাপারগুলোই আমাকে ঘিরে ধরেছিল – আমি পারি না, পারছি না অথবা আমার সাথেই সবাই কেন এমন করে?

ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছি, সাথে তলিয়ে যাচ্ছি কী এক অবাস্তব জীবনে, যেখানে কল্পনাগুলো ঠিক মনে হয় আর আশেপাশের সবকিছুই কেমন বেঠিক। অথচ সবাই কত ভালো আছে, তাহলে আমি ভালো নেই কেন?

শুনেছি সাইকো থেরাপি মনের উপর কাজ করে। অবশেষে ভাবনাগুলো সরিয়ে রেখে সাইকো থেরাপি নেওয়া শুরু করলাম, প্রথম দিন খুব দ্বিধায় কাটলো, দ্বিতীয় দিনটা ভালোই গেলো, তৃতীয় দিনের জন্য অপেক্ষা এভাবেই শুরু হলো। কিছু ঔষধ, ব্যায়াম আর খাদ্যাভ্যাস প্রতিদিনের রুটিনে। আর রুটিন লাইফ মনের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিলো। কি অবাক কাণ্ড –  ‘আমার মন ভালো নেই, ভালো লাগছে না’ – এগুলো এখন আর চুইংগামের মতো ঘণ্টায় ঘণ্টায় জীবন ঘড়িতে লেগে যাচ্ছে না! আনন্দের কিছু হোক বা না হোক – আমি ভালো আছি, আমার মন ঠিক আছে। মনের মধ্যে যে দ্বিধা ছিল, সেটা এখন আর একদম নেই। সাইকো থেরাপি সত্যিই কাজ করেছে, আরো আগে সময় থাকতেই থেরাপি নিলে বেশিদিন ভালো থাকার আনন্দ আর দেরিতে গেলে দেরিই হয়ে যায়, বুঝলাম এটা। তাই বলি, প্রতিদিন যাদের ‘আজ আমার মন ভালো নেই’- এটা হয়, তারা সাইকো থেরাপি ও কাউন্সিলিংয়ের সাহায্য নিতে পারেন। এটা সত্যিই দারুন কাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *