May 19, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

এসব মিথ্যে মায়া আর আবেগ কোনো কাজে আসে না

মেলিসা ডি অ্যানিশ্বর ।।  মানুষ খুবই আবেগপ্রবণ। আবেগের বশে সে নষ্ট করে তার আত্মসম্মান। চারপাশের ব্যাপারটা সে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেনা। এই বিষয়টা সম্পর্কে সকলের উচিত শক্ত অবস্থান গড়ে তোলা । নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও করা উচিত। বিশেষত ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

একটি বাস্তব কাহিনী বলি।

আমার এক কলিগ ছিলেন দেখতে খুবই ড্যাশিং, হিরো হিরো টাইপ, বেশ স্মার্ট। তার ক্লাসের পড়াগুলো ছাত্রীরা সব সময়ই খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারতো। পড়া দেয়ার জন্য সবাই উদগ্রীব থাকতো। একটু যদি স্যারের নাগাল পাওয়া যায় আরকি!

স্যার ক্লাসে যাদের পড়া ধরতেন বা একটু প্রশংসা করতেন সেদিন ছাত্রীরা তাকে নিয়ে ভালোবাসার বীজ বোনা শুরু করে দিত। সবাই আলাদা আলাদাভাবে তাকে নিয়ে মনের মধ্যে সংসার করা শুরু করে দিয়েছিল। কয়েকদিন গেল বেশ চুলোচুলি আর ঝগড়াঝাঁটি শুধুমাত্র স্যারের চোখে কে বেশি ভালো এবং স্যার কাকে বেশি পছন্দ করেন এমন তুচ্ছ একটা টপিক নিয়ে। অথচ স্যার এসব ভাবা তো দূরে থাক মনের ভুলেও তার মাথায় আসেনি। আমি অনেক অভিযোগও পেয়েছিলাম মেয়েদের, কিন্তু সমাধান দিতে পারিনি।

স্যার ক্লাসে একদিন বললেন সেজেগুজে পড়তে বসতে। তাহলে নাকি পড়া ভালো হয়। মেয়েরা সবাই বিকেল থেকে সাজগোজ শুরু করে দিল। তারপর শুরু হলো ফেসবুকে তাদের সেই সুন্দর সাজানো চেহারা আর স্যারের বাণী লিখে স্টোরি আর পোস্ট করা। সাজগোজ করতে করতে সেদিন আর ওদের পড়ালেখা হয়নি বরং একজনের সাথে আরেকজনের শত্রুতা বেড়েছে, বেড়েছে মুখে ঘষামাজা করা। শুধুমাত্র স্যারের আকর্ষণ পাওয়ার জন্য।

এখন ব্যাপার হলো, স্যার এখন সেখানে জবটা ছেড়ে দিয়েছেন। তার নিজস্ব প্রয়োজনে বা কোনো কারণে তিনি অন্য কোথাও চলে গিয়েছেন। এখন মেয়েরা সবাই হতাশ, ভেঙ্গে পড়েছে সবাই। গোসল, খাওয়া, পড়ালেখা সব ছেড়ে দিয়ে স্যারকে নিয়ে শুধু বিরহ আর বিরহ। এখন আর পড়ালেখা হয়না, হিরো স্যারের জন্যই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায় তার ছাত্রীরা। যার জন্য এতো কিছু, সে এসব সম্পর্কে একদমই কিছু জানেন না।

মেয়েদের সাথে আমার কিছুটা ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক থাকায় একজনের থেকে আরেকজনেরটা করতে করতে সবারটা জেনে গিয়েছিলাম। অন্তত কলেজ পার করে ইউনিভার্সিটি লেভেলে এসেও এতটা বোকামি করা কোনো স্টুডেন্টের উচিত না। যেখানে উচিত লক্ষ্যের দিকে ফোকাস করা। এটা তুচ্ছ আবেগ, আপনারই ক্ষতি করবে। ব্যাপারটা যেমন লজ্জাজনক তেমনি নষ্ট করে আপনার  আত্মসম্মান।

বের হয়ে আসুন এসব মিথ্যে মায়া আর আবেগ থেকে। বিষয়টা সকলের বোঝা উচিত। আপনি আপনার স্থান তৈরি করুন। আপনার আত্মসম্মান ধরে রাখুন। এই জিনিসটা কখনো নষ্ট হতে দেবেন না। তখন আপনার আর কাউকে পাওয়ার জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতে হবে না। তারচেয়ে আরো যোগ্য কেউ আপনাকে চাইবে। প্রয়োগ করে দেখুন নিজের জন্য, ক্ষতি অবশ্যই হবে না উপকার ছাড়া।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *