November 2, 2024
সম্পাদকীয়

সুলতানার মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত দাবি করছি

নওগাঁয় র‌্যাবের হাতে আটকের পর সুলতানা জেসমিন নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ায় গত বুধবার র‌্যাবের লোকজন একটা সাদা মাইক্রোবাসে করে তাকে আটক করে নিয়ে যায়। আর শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুলতানার মৃত্যু হয়।

সুলতানা নওগাঁ সদরের চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারি পদে চাকরি করতেন। স্বজনরা অভিযোগ করেছে, র‌্যাবের হেফাজতে নির্যাতনে সুলতানা মারা গেছেন।

এ বিষয়ে র‍্যাবের কর্মকর্তারা বিডিনিউজ ২৪’ র সাংবাদিকদের বলেছেন, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল – এমন অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র‍্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।

আর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেছেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই নারী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

১৭ বছর আগে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর সন্তানকে অনেক কষ্টে একা বড় করছিলেন সুলতানা। ছেলেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। নিহত সুলতানার মামা বলেছেন, ‘আমার ভাগনি অত্যন্ত সরল মানুষ। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ নিলে তো অভাব-অনটন থাকতো না। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়।  আমার ভাগনি চক্রান্তের শিকার। আমার বিশ্বাস, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।’

সুলতানার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করায় বিস্মিত হয়েছেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা। পরিবারের বলেছে, এই ঘটনায় তাদের কোনও অভিযোগ নেই এবং মামলাও করবেন না তারা।

কে দোষী, কে অপরাধী, তা প্রমাণের আগেই হেফাজতে এই মৃত্যু, আমাদের কোন অন্ধকারের মুখোমুখি করে, তা কি আমরা বুঝতে পারি? সুলতানার মৃত্যু হঠাৎ অসুস্থতার কারণে হয়েছে কি না, নাকি মাথায় চরম আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণের ফলে ঘটেছে, তা কি আদৌ আমরা কোনোদিন জানতে পারবো? ভূমি কার্যালয়ের একজন সামান্য কর্মচারী, তার মৃত্যু কি কোনো গুরুত্ব বহন করে? করবে? রাষ্ট্রের কাছে? ন্যায়বিচারের কাছে? আমাদের কাছে?

যদি তিনি অপরাধী হয়ে থাকেন, তবে সেটি যথাযথ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রমাণিত এবং এরপরই আদালতের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের আগেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে তার এই মৃত্যুকে আমরা আসলে কীভাবে নেব? একে কি আমরা নিতান্ত সাধারণ একটা ঘটনা ভেবে পাশ কাটিয়ে যাবো? আমাদের চিন্তাশক্তি, আমাদের বোধ কি তবে এতই ভোঁতা হয়ে গেছে?

একজন মানুষ, একজন নারী, একজন মা, এবং একজন সরকারি কর্মচারির এই মৃত্যুর সঠিক তদন্ত কি আমরা আশা করতে পারি?

সুলতানার মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত ও যথাযথ তদন্ত দাবি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *