‘পেনিস এনভি’ বনাম ‘ইউটিরাস এনভি’
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক ।। জরায়ু ঈর্ষা (Uterus Envy)! এটা এমন একটি বিষয়, অনেকে জানেই না যে এটি কী। তবে জরায়ু ঈর্ষার কথা বলার আগে একটু শুনে নিতে হবে পেনিস এনভি’র (Penis Envy) কথা, মানে হলো পুরুষাঙ্গ নিয়ে নারীর ঈর্ষা বিষয়ে পুরুষদের রচিত তত্ত্ব বর্ণনাটি।
পুরুষাঙ্গ ঈর্ষা নিঃসন্দেহে গর্ভ ঈর্ষার তুলনায় অনেক বেশি পরিচিত একটি শব্দ। এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হতে পারে: একটি পুরুষাঙ্গের অভাবে নারী যে অপূর্ণতার অনুভূতি অনুভব করে সেটাই পেনিস এনভি। এর ফলে নারী নিজেকে ক্ষমতাহীন ভাবে। বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্ক্স এবং মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড পেনিস ঈর্ষার এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এই দুই মহান পুরুষ একদমই মানতে পারতেন না যে একজন পুরুষ কোনোভাবে একজন নারীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হতে পারে। গায়ত্রী স্পিভাক তার “ফেমিনিজম অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল থিওরি”-তে উল্লেখ করেছেন – “ফ্রয়েড যুক্তি দিয়েছিলেন যে ছোট্ট মেয়ে তার লিঙ্গ সম্পর্কে জানার আগে সে একটি ছোট্ট ছেলে।” এখানে ফ্রয়েড এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ছোট মেয়েরা নারী হিসাবে বেড়ে ওঠার আগে, তাদের মাসিক ও প্রজনন ক্ষমতা উন্নীত হওয়ার আগে তারা মূলত ছেলেদের মতই ছিল এবং ছেলেদের মতো হতে চেয়েছিল।
ফ্রয়েড পুরুষত্বকে শক্তি ও প্রভাবের সাথে যুক্ত করেন, যা পুরুষাঙ্গ ঈর্ষার মাধ্যমে নারীদের লিঙ্গ থেকে এক ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা তৈরি করে। কিন্তু ফ্রয়েড নারীর গর্ভের ভূমিকাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন।
এবার আসুন জরায়ু ঈর্ষায়।
পুরুষাঙ্গ ঈর্ষার তুলনায় অনেক কম শোনা যায় জরায়ু ঈর্ষার কথা। তাই এটি নিয়ে অনেক কথা বলা উচিত। জরায়ু ঈর্ষা, স্পিভাকের মতে, এমন একটি ধারণা যেখানে একজন পুরুষ নারীর মতো গর্ভ না থাকার কারণে নারীর প্রতি ঈর্ষা অনুভব করেন। নারীরা তাদের শরীরের ভেতরে নতুন জীবনের সৃষ্টি করতে পারে এবং প্রজননের ক্ষেত্রে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণও রাখে। নারীদেহের এই গুণাবলী প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। নারীদের মাসিক, সন্তান ধারণ এবং প্রসবের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রকাশ পায়, যা পুরুষদের দেহে অনুপস্থিত।
ক্যারেন হর্নি, একজন নিউ-ফ্রয়েডীয় মনোবিজ্ঞানী, বিশ্বাস করেন যে, “নারীরা যতটা না পেনিস নিয়ে ঈর্ষা অনুভব করে, পুরুষেরা নারীর জরায়ুর প্রতি তার চেয়ে অনেক বেশি ঈর্ষা অনুভব করে।” পুরুষরা নারীদের তুলনায় নিজেকে উচ্চতর প্রমাণ করতে চায়। উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন গর্ভবতী স্ত্রীর স্বামী বলে “আমরা একটি সন্তান নিচ্ছি,” তখন তিনি স্ত্রীর কৃতিত্বকে অংশীদার হিসেবে দাবি করেন, যদিও সন্তান জন্মানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকা সামান্য।
জরায়ু ঈর্ষা সমাজে বিভিন্নভাবে দেখা যায়, যেমন নারীদের পোশাক নিয়ে নিয়ন্ত্রণ, সন্তান না নেওয়ার জন্য লজ্জা দেওয়া, এবং জনসমক্ষে স্তন্যপান করার জন্য নারীদের অপমান করা। এঙ্গেলা ডেভিস তার “উইমেন, রেস অ্যান্ড ক্লাস” বইয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসাবে দেখে এবং জীবনের উপর তাদের প্রভাব খাটায়। জরায়ু ঈর্ষা সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যাতে মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানে এবং বুঝতে পারে।
Sigmund Freud on the left and Karen Horney on the right