১৫ মাসের ‘ক্রিপ্টিক প্রেগন্যান্সি’: নাইজেরিয়ায় ভয়ংকর প্রতারণা
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক ।। নাইজেরিয়াতে এক ধরণের ভয়ঙ্কর প্রতারণা চলছে, যাকে বলে “ক্রিপ্টিক প্রেগনেন্সি”। এর শিকার হচ্ছেন মা হতে আগ্রহী নারীরা। প্রতারকরা নিজেদের ডাক্তার বা নার্স পরিচয় দিয়ে ভুয়া চিকিৎসা দেয় এবং শেষে পাচার করা শিশুদের নারীদের কাছে তুলে দেয়। এমনই এক ভুক্তভোগী চিওমা, বিশ্বাস করেছিলেন যে তিনি ১৫ মাস ধরে তার সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন। এই প্রতারণা কতটা ভয়ংকর তা এখান থেকেই বোঝা যায়। বর্তমানে প্রশাসন এই চক্র ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছে।
নাইজেরিয়ার অনেক নারী সন্তান না হওয়ায় সামাজিক চাপ বা অপমানের মুখোমুখি হন। এই ভয় থেকেই তারা “ক্রিপ্টিক প্রেগনেন্সি”-র মতো ভুয়া প্রক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছেন। এই সময় তারা বিশ্বাস করেন যে তারা ১৫ মাস ধরে ‘মিরাকল’ বাচ্চা বহন করছেন।
মিরাকল ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট কী?
বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, ভুয়া ডাক্তাররা নারীদের বোঝান যে তাদের ‘মিরাকল ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট’ নিশ্চিতভাবে গর্ভধারণ করাবে। এই চিকিৎসার প্রথম ধাপের জন্য কয়েকশো ডলার দিতে হয়। এতে থাকে ইনজেকশন, পানীয় বা বিশেষ পদার্থ যা যোনিতে প্রবেশ করানো হয়।
অনেকে বলছেন, এই চিকিৎসা শরীরে পরিবর্তন ঘটায়, যেমন পেট ফোলা। এতে তারা আরও বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তারা গর্ভবতী। তবে তাদের বলা হয় সাধারণ ডাক্তার বা হাসপাতালে না যেতে। কারণ কোনো পরীক্ষা বা স্ক্যানে ‘শিশু’ ধরা পড়বে না।
ডেলিভারির সময় তাদের বলা হয় একটি ‘দামি ও বিরল’ ওষুধ নিতে হবে যা প্রসব শুরু করাবে। এর জন্যও বাড়তি টাকা দিতে হয়।
ভয়ংকর ডেলিভারির গল্প
প্রতারণার শিকার নারীরা বলেন, কেউ কেউ সিজারের মতো কাটা দাগ নিয়ে জেগে ওঠেন। আবার কেউ বলেন, ইনজেকশন দিয়ে তাদের এমন ঘোরের মধ্যে ফেলা হয় যেন তারা মনে করেন সন্তান প্রসব করছেন। সবশেষে তাদের হাতে একটি শিশু তুলে দেওয়া হয়।
একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, যখন তার সন্তান প্রসবের সময় হয়, তথাকথিত ডাক্তার তাকে কোমরে ইনজেকশন দিয়ে চাপ দিতে বলেন। তিনি কষ্টের কথা বলেন, কিন্তু জানাননি কিভাবে শিশুটি তার কাছে এল।
ক্রিপ্টিক প্রেগনেন্সি আসলে কী?
ক্রিপ্টিক প্রেগনেন্সি আসলে এমন একটি ঘটনা, যেখানে নারী শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারেন না যে তিনি গর্ভবতী।
বিবিসি জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্যাপার নিয়ে অনেক ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, তারা বহু বছর ধরে গর্ভবতী, যা বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না।
ফেসবুকের বন্ধ গ্রুপে এই প্রতারণার প্রচার চালানো হয় এবং মিরাকল চিকিৎসাকে ঈশ্বরের আশীর্বাদ বলে বর্ণনা করা হয়।
গোপন ক্লিনিক আর পাচার হওয়া শিশু
বিবিসি এক অভিযানে দেখেছে, বড় একটি কমপ্লেক্সে অনেক ঘর রয়েছে। একটিতে রোগীদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ছিল, অন্যটিতে বেশ কিছু গর্ভবতী নারীকে আটকে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাত্র ১৭ বছর বয়সী।
অনেকে জানায়, তাদের সেখানে প্রতারণা করে নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তারা জানত না তাদের শিশু বিক্রি করে দেওয়া হবে।