December 23, 2024
সাহিত্যকবিতাফিচার ২

জীবন যেমন

মেহেরুন নূর রহমান।।

 

ফ্ল্যাট বাড়ির ছোট্ট চৌকো বারান্দা
বেশ কিছু ছোট বড় টব,
তাতে নানা ফুলগাছ আর পাতাবাহার
হাতে পানির ঝাঁঝরি নিয়ে সেখানে ঢোকে এক নারী
পানি দেয় প্রতিটি গাছে, স্পর্শ করে ফুল-পাতা
কর্নারে রাখা চেয়ারে বসে একবার
বুঝি ক্লান্ত লাগে, খানিকটা আনমনা হয়
প্রায় তক্ষুনি ভেতর থেকে চিৎকার-
একটা কাজ করতে এতো সময় লাগে? আমার ওষুধ দেবে কে?

লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায়, দ্রুত ঘরে ঢোকে
এমনি করে দিন যায় মধ্য তিরিশের
সকালে সকলের নাস্তা, বাচ্চাদের স্কুল, রকমারি টিফিন
স্কুলের সামনে মায়েদের সাথে বসে গল্প, গসিপ
দুপুরে ঘরের রান্না, ছুটা বুয়ার সাথে কাজ নিয়ে রাগারাগি
শাশুড়ির মুখ ঝামটা, আলসে অকর্মা তকমা পাওয়া
প্রতিটি পাই পয়সার জন্য স্বামীর কাছে হাত পাতা, হিসেব দেয়া
একটু এদিক ওদিকে আমার খাচ্ছো আমার পরছো বলে খোঁটা শোনা
মাঝে মাঝে ছোটখাটো চড় থাপ্পর।

রাতে নিয়ম করে স্বামীকে তৃপ্ত করা, তার তৃপ্তির খবর যদিও কেউ রাখে না
বছরে ছয়মাসে স্বামী সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া
এভাবেই অভ্যস্ত দিন কাটে তার
অন্য অনেকের চেয়ে সুখে আছে, ভালো আছে ভেবে সুখী হয়

শুধু মাঝে মাঝে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
চৌকো বারান্দায় সন্তর্পণে এসে দাঁড়ায়
রাতের আঁধারে নিজেকে দেখে পরিষ্কার
পরিশ্রান্ত ভঙ্গি, গ্রিলে মাথা রাখে
তাকায় তারাভরা বিশাল আকাশের দিকে

নিঃস্ব, ক্ষুদ্র আর অবসন্ন লাগে তার
কি অর্থহীন ক্লান্তিকর জীবন যাপন!
নিজেকে করুণা হয়, শৈশব কৈশোরের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে
ছোট্ট সুশোভিত বারান্দাটাকে মনে হয় খাঁচা
আর সে খাঁচায় আটকে পড়া ভাঙ্গা ডানার পাখি…