May 16, 2024
সাম্প্রতিকফিচার ২

‘দূষিত শহরে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু বেশি’

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। উচ্চমাত্রার দূষিত বায়ুবহুল অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যু দ্রুত হয়। গবেষণা বলছে, ইউরোপের যেসব অঞ্চলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বেশি সেসব অঞ্চলের বায়ু বেশি দূষিত।

জার্মানির মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে- ইতালি, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সের ৬৬টি প্রশাসনিক শহরের মধ্যে মাত্র ৫টি শহরে মোট মৃত্যুর ৭৮ শতাংশ ঘটেছে। ওই পাঁচ শহরের বায়ু এই দেশগুলোর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি দূষিত।

মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটির গবেষক ইয়ারন অজেনের এ গবেষণার সিদ্ধান্তে তিনি বলেন, গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউরোপের এ অঞ্চলে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ত্বরান্বিত করতে শহরের দূষিত বায়ু সাহায্য করছে। হয়ত সারা বিশ্বেও একই চিত্র।

তিনি বলেন, আমাদের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলার অর্থ হলো আমাদের শরীরকে বিষাক্ত করা। যখন কারো শরীরে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগ দেখা দেয় তখন এই বিষাক্ত শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও হয়ে যায় সীমিত। তাই বিষাক্ত অঞ্চলে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ে।

ওই গবেষণায় এসব অঞ্চলের বাতাসে দূষিত নাইট্রোজেন গ্যাসের উপস্থিতি ও মৃত্যুর সংখ্যার তুলনা করা হয়। উল্লেখ্য, উচ্চ মাত্রায় নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডযুক্ত বায়ু স্বাস্থ্যের পক্ষে বিশেষত ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

ইয়ারন অজেনের গবেষণাপত্র সায়েন্স ডাইরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে চার দেশের শহরগুলোর বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির সঙ্গে ১৯ মার্চ পর্যন্ত এসব অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার তুলনা করা হয়। এতে দেখানো হয় উত্তর ইতালির চারটি অঞ্চল ও স্পেনের মাদ্রিদের একটি অঞ্চলে ওই চার দেশের মোট মৃত্যুর ৭৮ শতাংশ ঘটেছে। এসব অঞ্চলের বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি।

তবে গবেষণার বিষয়ে অজেন বলেন, এটি একটি প্রাথমিক গবেষণা। এখানে আমি দেখিয়েছি দূষিত বায়ুর সঙ্গে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।

এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জোনাথন গ্রিগ গার্ডিয়ানকে বলেন, গবেষণাটি দেখিয়েছে, বাতাসে নাইট্রোজেনের উপস্থিতির সঙ্গে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হারের সম্পর্ক রয়েছে। তবে এতে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধিতে অন্যান্য দায়ী কারণগুলোকে বাদ দেওয়া যায় না। যেমন কোন অঞ্চলের নাগরিকদের বয়স , চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদির সঙ্গেও মৃত্যু হারের সম্পর্ক রয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় একই দাবি করা হয়েছে। হার্ভার্ড টিএইচ স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, প্রতি ১ ঘনমিটারে ১ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ পিএম২.৫ (পদার্থ) বৃদ্ধি পেলে ওই এলাকায় কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার আরও ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়।

এদিকে ইতালির ইউনিভার্সিটি অব সিয়েনা ও ডেনমার্কের আরহুস ইউনিভার্সিটির আরেকটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বায়ু দূষণের সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারের সম্পর্ক রয়েছে। এতে বলা হয়, ইতালির লোমবার্ডি ও এমিলিয়া রোমাগনা অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ১২ শতাংশ। তবে ইতালির অন্যান্য এলাকায় এ হার ৪.৫ শতাংশ। উত্তর ইতালির এ দুটি অঞ্চলে বায়ু দূষণের মাত্রাও অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি।

সায়েন্স ডাইরেক্ট জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, উত্তর ইতালির ব্যাপক বায়ু দূষণ ওই অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উচ্চ মৃত্যু হারের জন্য আরেকটি বাড়তি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে।