November 21, 2024
অনুবাদসাহিত্যফিচার ৩বই নিয়ে আলাপ

আমাদের সবার নারীবাদী হওয়া উচিত: পর্ব-০৩

নাইজেরিয়ান নারীবাদী লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট ও বক্তা চিমামান্দা এনগোজি আদিচের লেখা We should all be feminists বইটি মূলত একটি বক্তৃতা, যা তিনি ২০১২ সালে দিয়েছিলেন। পরে ২০১৪ সালে এটি বই আকারে বেরোয়। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আতিকুল ইসলাম ইমন। অনুবাদটি ধারাবাহিক আকারে প্রকাশ হচ্ছে। আজ পড়ুন এর পর্ব-৩।।

বিশ্বের যে কোনো জায়গায় লিঙ্গ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এবং আজ আমি বলব—চলুন আমরা নতুন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা শুরু করি এবং তা গড়ার পরিকল্পনা করি। একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ি। আরও সুখী নারী ও পুরুষের পৃথিবী যারা নিজেদের প্রতি সৎ। এ পৃথিবী গড়তে আমাদের যেভাবে শুরু করতে হবে তা হলো—আমাদের মেয়েদের ভিন্নভাবে বড় করা। আমাদের ছেলেদেরও ভিন্নভাবে বড় করতে হবে।

ছেলেদের আমরা যেভাবে বড় করি তাতে আমরা তাদের প্রতি বড় অবিচার করি। আমরা ছেলেদের মানবাধিকার হরণ করি। আমরা খুব সংকীর্ণভাবে পুরুষত্বকে সংজ্ঞায়িত করি। পুরুষত্ব এক কঠিন, ছোট খাঁচা- আমরা সেই খাঁচার ভেতর ছেলেদের ঢুকিয়ে রাখি।

আমরা ছেলেদের ভীতি, দুর্বলতা, ভঙ্গুরতা ইত্যাদিকে ভয় পেতে শেখাই। আমরা ছেলেদের শেখাই তারা যাতে মুখোশের আড়ালে তাদের প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখে, কারণ তাদেরকে অবশ্যই একজন কঠোর মানুষ হতে হবে।

মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে দেখি, অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে এবং মেয়ে তাদের উভয়েরই সামান্য হাতখরচের টাকা পকেটে থাকে, তবুও যখন তারা একসঙ্গে বাইরে যায় তখন পুরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য সবসময় ছেলেটিকেই খরচের বিল মেটাতে হয়। (তবুও বাবা মায়ের পকেট থেকে ছেলেরাই কেন বেশি টাকা চুরি করে এটা ভেবে আমরা অবাক হই।)

যদি ছেলে ও মেয়েদের পুরুষত্ব ও টাকার সম্পর্ক না শিখিয়ে বড় করা হতো তবে কেমন হতো? ‘ছেলেরাই সবসময় বিল পরিশোধ করবে’ এমন না হয়ে যদি তাদের মনোভাব হতো ‘যার হাতে বেশি টাকা সেই পরিশোধ করবে’- তবে কেমন হতো? অবশ্যই, এতদিন ধরে পাওয়া নানা সুবিধার কারণে আজও ছেলেদের হাতেই বেশি টাকা থাকত। কিন্তু আমরা যদি এখন থেকে আমাদের বাচ্চাদের ভিন্নভাবে বড় করি তবে আজ থেকে ৫০ বা ১০০ বছর পর বস্তুগত বিষয়াদি দিয়ে পুরুষত্ব প্রমাণ করার চাপ ছেলেদের উপর আর থাকবে না।

তবে পুরুষদের জন্য আমরা সবচেয়ে খারাপ যে কাজটি করি- আমরা তাদের বাধ্য করি যেন তারা ভাবে তাদেরকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা তাদেরকে খুবই ভঙ্গুর এক অহং-এর মধ্যে ছেড়ে দেই। একজন পুরুষ কঠোর হওয়ার জন্য যতটা তাগিদ অনুভব করে, তার অহং ততোটাই দুর্বল।

অন্যদিকে আমরা মেয়েদের প্রতি আরও বড় অবিচার করি, কারণ আমরা তাদের এমনভাবে বড় করি যেন তারা পুরুষের এই ভঙ্গুর অহংকে আরও জ্বালানি দেয়।

আমরা মেয়েদের শেখাই—তারা যেন নিজেকে সংকুচিত করে রাখে, নিজেকে যেন আরও ছোট করে ফেলে।

আমরা মেয়েদের বলি, ‘তোমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, তবে তা যেন খুব বেশি না হয়। তুমি সফল হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারো কিন্তু খুব বেশি সফল যেন না হও। অন্যথায়, তুমি পুরুষের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের বেলায় যদি তুমি একমাত্র রোজগারকারী হও তবে এমন আচরণ করো যেন তুমি তা নও। বিশেষ করে মানুষের সামনে অভিনয় করো, না হলে তুমি তার পুরুষত্ব বিনষ্ট করে ফেলবে’।

কিন্তু এই সিদ্ধান্তটিকেই যদি আমরা প্রশ্ন করি তবে কেমন হয়? একজন নারীর সফলতা কীভাবে একজন পুরুষের জন্য হুমকি হয়? যদি আমরা ওই শব্দটিকেই বাদ দিয়ে দিতে চাই তবে কেমন হয়? আমি জানি না ইংরেজি শব্দ ভান্ডারে আর কোনো শব্দ আছে কি-না যে শব্দটিকে আমি ‘ইমাস্কুলেশন’ (পুরুষত্বহীন) শব্দটির চেয়ে বেশি ঘৃণা করি।

পরিচিত এক নাইজেরিয়ান একবার আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, পুরুষরা আমাকে ভয় পাবে এ বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত হই কি-না?

আমি কখনই তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না। এটা আমার প্রতি কখনো ঘটেইনি যে আমি ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত হবো। কারণ যে পুরুষ আমার কারণে ভীত হবে সে অবশ্যই ওই ধরনের পুরুষ নয় যাদের প্রতি আমি আগ্রহ দেখাবো।

আমি এখনও ওই কথাটিতে আটকে আছি। কারণ আমি নারী, আমাকে নিয়ে আশা করা হয় যেন আমি বিয়ের জন্য আকুল কামনা করি। আমাকে নিয়ে আশা করা হয় আমি যেন আমার জীবন এমনভাবে সাজাই যাতে সবসময় মনে করি জীবনে বিয়েটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে ভালো ব্যাপার হতেই পারে, আনন্দের একটি উৎস হতে পারে, ভালোবাসা ও পারস্পরিক সমর্থনের উৎস হতে পারে। কিন্তু আমরা কেন শুধু মেয়েদেরই শেখাবো যে তারা যেন বিয়ের জন্য আকুল কামনা করে, যেখানে ছেলেদের আমরা একই জিনিস শেখাচ্ছি না?

আমি এক নাইজেরিয়ান নারীকে চিনি, যে তার বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছিল কারণ তাকে যে বিয়ে করতে চায় তাকে ভীত করে দিতে চাননি তিনি।

আমি নাইজেরিয়ায় এক অবিবাহিত নারীকে চিনি, তিনি এক কনফারেন্সে বিয়ের আংটি পরে গিয়েছিলেন, কারণ তিনি চাইতেন, ‘সহকর্মীরা যেন তাকে শ্রদ্ধা করে’।

এতে দুঃখের ব্যাপার যেটা তা হলো—যেখানে একটি বিয়ের আংটি তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্মানের দাবিদার করে তুলছে, যেখানে বিয়ের আংটি না থাকলে সে সহজেই সম্মান থেকে বাদ পড়ছে- সেই কর্মক্ষেত্রটি হলো একটি আধুনিক কর্মক্ষেত্র।

আমি জানি, যুবতী নারীরা পরিবার, বন্ধুবান্ধব এমনকি কর্মক্ষেত্রেও বিয়ের জন্য প্রচুর চাপে থাকেন, তাদেরকে বিয়ের জন্য মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়।

আমাদের সমাজ শিখিয়েছে একটি নির্দিষ্ট বয়েসে কোনো নারী অবিবাহিত থাকা মানে এটি তার এক নিশ্চিত ব্যর্থতা। অথচ একটি নির্দিষ্ট বয়েসের অবিবাহিত একজন পুরুষ তার বিয়ের কাছাকাছিও নন বলে মনে করা হয়।

এটা বলা সহজ যে, ‘কিন্তু নারীরা এ বিষয়গুলোকে না বলতে পারে’। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন, অনেক জটিল। আমরা প্রত্যেকেই সামাজিক প্রাণী। আমরা সামাজিকীকরণ থেকেই ধারণা নেই।

এমনকি আমরা যে ভাষা ব্যবহার করি তাও এটিকে চিত্রিত করে থাকে। বিয়ের ভাষাটি একটি মালিকানার ভাষা, এটি অংশিদারিত্বের ভাষা নয়।

আমরা ‘শ্রদ্ধা’ শব্দটি ব্যবহার করি যা একজন নারী একজন পুরুষকে করে, কিন্তু একজন পুরুষ নারীর প্রতি যা প্রদর্শণ করে তার বেলায় ‘শ্রদ্ধা’ শব্দটি ব্যবহার করি না।

নারী ও পুরুষ উভয়েই বলে থাকে, ‘আমার দাম্পত্য জীবনে শান্তির জন্য এটা করছি’।

যখন পুরুষ এই কথাটি বলে, তখন তারা এটি সাধারণত এমন কিছু সম্পর্কে বলে যা তাদের এমনিতেও কোনোভাবেই করা উচিত নয়। তারা হয়ত তাদের বন্ধুদের খুব হতাশ ভঙ্গিতে বলবে, হয়ত এমনকিছু যা বন্ধুদের কাছে তাদের পুরুষত্বকে প্রমাণ করবে, ‘আহ, আমার বউ আমাকে প্রতিরাত ক্লাবে যেতে না বলেছে, তাই আজ থেকে পরিবারে শান্তির জন্য শুধু সাপ্তাহিক ছুটির রাতেই আমি ক্লাবে যাব’।

আবার যখন কোনো নারী বলে, ‘আমি বিবাহিত জীবনে শান্তির জন্য এটি করেছি’ তখন প্রায়ই এটা বুঝায় যে- তারা চাকরি, ক্যারিয়ারের কোনো আকাঙ্ক্ষা বা স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছে।

আমরা নারীদের শিখিয়েছি, একটি সম্পর্কে আপস নারীদেরই করতে হয়।

আমরা মেয়েদেরকে এমনভাবে বড় করি যেন তারা একে অন্যকে প্রতিযোগী ভাবে। এই প্রতিযোগিতা কোনো চাকরি বা কোনো সাফল্যের জন্য নয়, যা হলে আমার মতে তা ভালোই হত, কিন্তু তাদের প্রতিযোগিতা পুরুষের মনোযোগ পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা।

আমরা মেয়েদের শেখাই- তারা যৌনতায় ছেলেদের মতো হতে পারবে না। আমাদের যদি ছেলে সন্তান থাকে তবে তার মেয়ে বান্ধবীদের সম্পর্কে জানার কোনো প্রয়োজনীয়তাই আমরা অনুভব করি না। কিন্তু আমাদের মেয়েদের ছেলে বন্ধু? হায় ঈশ্বর মাফ করো। (কিন্তু অবশ্যই আমরা আশা করি মেয়েরা বয়স হলে বিয়ের জন্য একজন যোগ্য পুরুষকে বাড়িতে নিয়ে আসবে।)

আমরা মেয়েদের নজরদারীতে রাখি। আমরা মেয়েদের কুমারিত্বের জন্য প্রশংসা করি কিন্তু ছেলেদের বেলায় তা করি না। (এবং এটি আমাকে আশ্চর্য্য করে যে, এই ব্যাপারটি আসলে কীভাবে কাজ করে, যখন ভার্জিনিটি হারানোর প্রক্রিয়াটি ঘটে বিপরীত লিঙ্গের দুই জনের সম্পৃক্ততায়।)

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব নাইজেরিয়ায় এক যুবতী নারী গণধর্ষণের শিকার হয়। এ ব্যাপারে বেশিরভাগ নাইজেরিয়ান নারী ও পুরুষের মন্তব্য ছিল অনেকটা এরকম- ‘হ্যাঁ ধর্ষণ অপরাধ, কিন্তু একটি রুমে চার ছেলের সঙ্গে এক মেয়ে কী করছিল?’

আমরা যদি পারি, চলুন এই প্রতিক্রিয়ায় যে ভয়ানক অমানবিকতা আছে তা ভুলে যাই। নাইজেরিয়ানরা এমনভাবে বড় হয়েছে যে তারা ভাবে- অপরাধ নারীদের একটি স্থায়ী বৈশিষ্ঠ্য। এবং তারা এমনভাবে বড় হয়েছে যে মনে করে, পুরুষ হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণহীন অসভ্য ধারণাটি গ্রহণযোগ্য।

আমরা মেয়েদের লজ্জা শেখাই। আমরা শেখাই—দুই পা বন্ধ রাখো, নিজেকে ঢেকে রাখো। আমরা তাদের ভাবতে বাধ্য করি যে, মেয়ে হিসেবে জন্মেছে বলে তারা ইতিমধ্যে কোনো কারণে অপরাধী। এবং মেয়েরা নারী হয়ে ওঠে, যে তার নিজের ইচ্ছা আছে বলতে পারে না। যারা নিজেদের নিজেরাই চুপ রাখে। যারা নিজেরা কী ভাবে তা বলতে পারে না। যারা ভান করাকে একটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

আমি এক নারীকে চিনি যে গৃহস্থালি কাজকর্ম ঘৃণা করে কিন্তু সে এমন ভান ধরে যেন এসব কাজ তার খুব ভালো লাগে, কারণ ‘ভালো ওয়াইফ ম্যাটেরিয়াল’ হওয়ার জন্য তাকে এটা শেখানো হয়েছে। তাকে অবশ্যই নাইজেরিয়ানদের ভাষায় ‘সংসারী’ হতে হবে। পরে সে বিয়ে করল। এবার তার স্বামীর পরিবার অভিযোগ শুরু করলো যে সে বদলে গেছে। আসলে, সে বদলে যায়নি। সে শুধুমাত্র সে যা নয় তা ভান ধরতে ধরতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল।

জেন্ডারের সমস্যাটি হলো এই যে, এটি আমরা যা আছি তা মেনে নেওয়ার চেয়ে আমাদের কী রকম হওয়া উচিত সেটা ঠিক করে দেয়। কল্পনা করুন, যদি আমরা আমাদের স্বাতন্ত্র বজায় রাখতে পারি, যদি আমাদের উপর জেন্ডারের চাহিদার বোঝা না থাকে তবে আমরা কত স্বাধীন আর কত সুখী হতে পারি।

জৈবিকভাবে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য আছে, এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু সামাজিকীকরণ এই পার্থক্যকে অতিরঞ্জিত করে তোলে, এবং তারপর একটি স্বপরিপূর্ণতার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেমন ধরুন রান্নার ব্যাপারটি। আজ পুরুষদের চেয়ে নারীরা ঘরের কাজ, যেমন রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা ইত্যাদি সাধারণত বেশি করে থাকে। কিন্তু এটা কেন হবে? এটা কি এ কারণে যে নারীরা রান্নার জিন নিয়ে জন্মায়, নাকি বছরের পর বছর সামাজিকভাবে তাদের এমনভাবে রাখা হয়েছে যেন তারা মনে করে রান্না করা তাদেরই কাজ? আমিও হয়ত সেটাই বলতাম, যে সম্ভবত নারীরা রান্না করার জিন নিয়ে জন্মে, যদি না দেখতাম বিশ্বের সেরা সব রাঁধুনিরা যাদের আলঙ্করিক খেতাব দেওয়া হয় ‘শেফ’-তাদের বেশিরভাগই পুরুষ।

আমি আমার দাদিকে দেখি, তিনি দারুন মেধাবী এক মহিলা। আমি আশ্চর্য হয়ে তাকে নিয়ে ভাবি- তিনি যদি তার যুবতী বয়েসে পুরুষদের মতো সমান সুযোগ পেতেন তাহলে জীবনে কী হতে পারতেন। আমার দাদীর সময়ের চেয়ে আজকের সময়ে নারীদের জন্য বেশি সুযোগ রয়েছে, কারণ এখন অনেক নীতি ও আইন পরিবর্তন হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এর চেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হলো আমাদের আচরণ ও মানসিকতা।

বাচ্চা বড় করার সময় যদি আমরা তার লিঙ্গের ব্যাপারে না ভেবে তার সামর্থ্যের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকে বড় করি তবে কেমন হবে? তার লিঙ্গ পরিচয়ের পরিবর্তে যদি তার আগ্রহের দিকে আমরা মনোনিবেশ করি তবে কী হবে?

আমি এমন এক পরিবারকে চিনি যাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে, তাদের বয়সের পার্থক্য এক বছর, দুই জনই স্কুলে পড়ে ও মেধাবী। যখন ছেলেটি বলে সে ক্ষুধার্ত তখন মা-বাবা তাদের মেয়েকে বলে, ‘তোমার ভাইয়ের জন্য ইনডোমি নডুলস রেধে নিয়ে আসো’। মেয়েটি ইনডোমি নডুলস রান্না পছন্দ করে, তবে সে যেহেতু মেয়ে তাই তাকে রান্না করতেই হয়। যদি ও মা-বাবা শুরুতেই তাদের দুই সন্তানকেই রান্না শেখাতেন তবে কেমন হতো? বলে রাখা ভালো, রান্না করার দক্ষতা থাকলে তা একটি ছেলের ব্যবহারিক জীবনে খুবই উপকারে আসে। আমি কখনই মনে করি না, নিজেকে খাওয়ানোর এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অন্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া ভালো কোনো বুদ্ধি।

আমি এক নারীকে চিনি যার স্বামীর সমান একই শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে ও একই চাকরি সে করে। তারা যখন কাজ শেষে বাড়িতে ফেরে তখন সে ঘরের বেশিরভাগ কাজ করে, যেটা আসলে বেশিরভাগ দম্পতির ক্ষেত্রেই সত্য, কিন্তু যে ব্যাপারটি আমাকে পীড়া দেয় তা হলো যখন তার স্বামী বাচ্চার নেপ্পি বদলায় তখন সে স্বামীকে ধন্যবাদ দেয়। কেমন হয় যদি সে মনে করে তার (স্বামীর) বাচ্চার যত্ন নেওয়াই স্বাভাবিক ও সহজাত একটি কাজ?

আমি বড় হওয়ার সময় লিঙ্গ ব্যাপারে যা শিখেছিলাম তার অনেক কিছু এখন ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি এখনও মাঝে মাঝে লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশার সামনে নিজেকে দুর্বল বোধ করি।

[চলবে]

আমাদের সবার নারীবাদী হওয়া উচিত: পর্ব-১

আমাদের সবার নারীবাদী হওয়া উচিত: পর্ব-২