এক নারী হোক আরেক নারীর আশ্রয় ও শক্তি
আঞ্জুমান রোজী।। নারীই হোক নারীর শক্তি, নারী দিবসে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করে কিছু কথা লিখছি। নারী উন্নয়নের কথা বলা হয় সব সময়। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুগুলোতে এবং ব্যক্তিগত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতিতে নারী অধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারী শিক্ষা সর্ব অবস্থায় নারীকে এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়। এই জাগরণের সুরে নারীও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নারী কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে? পারছে কী তার মেধা চিন্তা চেতনা ব্যক্তিত্ব দিয়ে নিজের মত করে জীবন গড়তে কিম্বা পথ পাড়ি দিতে? নারী কি তার মেধা মনন দিয়ে যোগ্য সম্মান পাচ্ছে, এই সমাজ, এই সংসারের কাছে? তার প্রধান প্রতিবন্ধকতা কী?
বিশ্বায়নের যুগে পৃথিবী এখন সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করছে। এই অবস্থান থেকে যে কোনো নারী তার ইচ্ছাশক্তির বলে তার মেধা মনন দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। এখানে কারো সহযোগিতা, দয়া বা করুণার দরকার হয় না। নারী এখন একাই একশ; সব অবস্থায় পুরুষের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে নিজেকে তুলে ধরছে। অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলোর চিত্র এমনই, যদিও উন্নয়নশীল দেশগুলো এখনো এদিক থেকে বেশ পিছিয়ে আছে শুধুমাত্র নারী পুরুষের মধ্যে মানসিক-সামাজিক তারতম্যের কারণে। উন্নয়নশীল দেশে নারীর প্রতি পুরুষের সহযোগিতার হাত কতকুটু প্রসারিত? যেখানে নারী পুরুষ দুজনে মিলেই সম্মিলিত জীবন, সেখানে নারীকে এখনো পুরুষের অধিনস্ত হয়ে থাকতে হচ্ছে। নারীর সমস্ত হিস্যা যেন সব ঐ পুরুষের কাছে। এই মানসিকতা থেকে উঠে আসতে হলে নারীর কী করা উচিৎ?
নারী শিক্ষাদিক্ষায়, মেধায় যতই একাকী নিজের পথ তৈরি করার চেষ্টা করুক না কেন, যাত্রাপথে পাশে কাউকে না কাউকে আমরা চাই, চাই কারোর সহযোগিতার হাত। যেহেতু নারীর সমস্যাসংকুল জীবন একমাত্র নারীই বুঝতে পারে, সেহেতু এক নারীর উচিত আরেক নারীর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। নারীর সমস্যা বলতে গেলে সব একইরকম এবং এর অনুধাবন ক্ষমতাও একইরকম। ইচ্ছে করলে আমরা নারীরা যে কোনো সমস্যায় আরেক নারীর পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি, বোঝার চেষ্টা করতে পারি সমস্যার গভীরতা। কিন্তু বাস্তবে আমরা এর কী চিত্র দেখতে পাই! ছোট ছোট কারণে এক নারী আরেক নারীর বিরুদ্ধে লাগছে। এর পিছনে পুরুষেরও বেশ ইন্ধন আছে।
নারী এই সূক্ষ্ম বিষয়টা বোঝে না বলে এক নারী আরেক নারীর ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়। নারীরা নারীরা বাধাবাধিতে লেগে গেলে পুরুষের সুবিধাই হয়। মাঝখান দিয়ে পুরুষগুলো তাদের ফায়দা লুটে নেয়। এতে পুরুষের দুরকমের সুবিধা হয়, এক, নারীকে অবদমিত রাখার সবরকম কায়দাকানুন, কূটকৌশল খুব সহজে তারা প্রয়োগ করে; দুই, এরই ফাঁকে নারীকে নিজের মতো ভোগও করছে নির্দ্বিধায়। কিছু নারীও আছে এমন, পুরুষের ক্রীড়নক হয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে চলে, এতে নিজের শুধু উপকার হচ্ছে, সমগ্র নারী জাতির কোনো উপকার কি হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে এদেরই কেউ মানবতার নামে নারী উন্নয়নের কথা বলে যাচ্ছে বীরদর্পে। এমন নারীবাদীর আচরণই সমাজে হাস্যরসের উদ্রেক করছে, হচ্ছে বিদ্রুপের সহায়ক ।
এক নারী যদি আরেক নারীর বুকের উপর পা দিয়ে হেঁটে গিয়ে তার নিজের এগিয়ে যাওয়ার বা নিজ কর্মের প্রচার প্রচারণা, খ্যাতির কথা ভাবে তাহলে নারী উন্নয়নের সমস্ত প্রচেষ্টাই ধূলিসাৎ হতে বাধ্য। উন্নয়নশীল দেশে নারীর আজকের পিছিয়ে থাকার পিছনে এটাও একটা সমস্যা। সবকিছুতে প্রতিযোগিতা এমন হয়ে গিয়েছে যে অনেক সময় মানবতাও বিপন্ন হয়।
সমতার লড়াইয়ে এক নারীকে আরেক নারীর পাশে এসে দাঁড়াতেই হবে, সেটা যেই অবস্থাতেই হোক না কেন। এক নারীই হতে পারে আরেক নারীর আত্মদর্পন এবং অবশ্যই সহজাত। এক নারী হোক আরেক নারীর পরম আশ্রয়, শক্তি এবং হাতিয়ার, এই প্রার্থনা এখন সমস্ত নারীকুলের প্রতি।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]