November 23, 2024
কলামফিচার ২

আনলিমিটেড যৌনাকাঙ্ক্ষায় লাগাম দিন

শাশ্বতী বিপ্লব।। আমি আপনাদের “ধর্ম” বুঝি না। আমি আপনাদের “মানবাধিকার” বুঝি না। আমি আপনাদের মতো প্রগতিশীল নই। কিন্তু আমি একজন দায়িত্বশীল মা। আমার দুটো ছেলে আছে ঠিক মুমিনুল হকের তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলেদের বয়সী। যে ঘটনা এখন মূলস্রোত মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া- সবখানে তোলপাড় তুলেছে। হেফাজতের নেতা মুমিনুল হকের আরেকজন নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু আজ এ লেখায় আমি কথা বলছি একজন মা হিসাবে। আমি শুধু বুঝি, আপনি নারী হোন কিংবা পুরুষ, আপনি যখন সন্তানের মা কিংবা বাবা, তখন আপনার আনলিমিটেড যৌনাকাঙ্ক্ষায় লাগাম টানতে শিখতে হবে। এখানে মানবাধিকার কিংবা অবাধ যৌনতার অধিকারের কোন অস্তিত্ব নাই।

আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সন্তানেরা নিজের ইচ্ছায় আপনার কাছে আসে নাই। সে আপনাকে বাবা কিংবা মা হিসাবে নির্বাচন করে নাই। আপনি নিজের “বংশ” রক্ষা করার সামাজিক তাগিদ থেকে, আপনার উত্তরসুরী বানানোর অর্থনৈতিক প্রয়োজন থেকে এবং আপনাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার স্বার্থচিন্তা থেকে তাকে এই ধরাধামে এনেছেন। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার এবং মানসিকভাবে ভেঙেচুরে দেওয়ার কোন অধিকার আপনার নাই।

মুমিনুলের তথাকথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার যে সন্তানটি আজকে লাইভে এসে কথা বলতে বাধ্য হয়েছে, সে কোন ফেসবুক সেলেব্রিটি বা ভিডিও জকি না। তারপরও সে সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে কথা বলেছে, বলতে বাধ্য হয়েছে। মুমিনুলের যৌনতার অধিকারের ঝান্ডাধারী তথাকথিত প্রগতিশীল এই আপনাদের তত্ত্বজ্ঞান ছেলেটার কিংবা তার ছোটভাইয়ের কোন কাজে আসে নাই। তাদের অতলে তলিয়ে যাওয়ার অনুভূতি, তাদের সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার অপমানকে আপনার “তত্ত্ব” ও “ধর্ম” কোন সাহায্য করতে পারে নাই। এমনকি, সমাজে নারী-পুরুষের যৌনতাকে পুঁজি করে এই মুমিনুল গং যে ঘৃণার ব্যবসা করে, তারও কোন হেলদোল হয় নাই।

ভেবে দেখুন, ছেলে দুইটার বুকের ভিতর কী তোলপাড় চলছে! এরা কেমন বাবা মা? কতোটা লিপ্সা বহন করলে মানুষ এতোটা বেপরোয়া হতে পারে? কতোটা শুধুই নিজেকে দেখতে পেলে মানুষ ন্যায় অন্যায়ের বোধ হারিয়ে ফেলতে পারে? এদের মানসপটে একবারও কি সন্তানের অসহায় মুখটা ভেসে ওঠে না?

আর ভেবে নেবেন না যে শুধু মুমিনুলরাই এমনটা করে। আর বাকি সবাই সাধু সন্ন্যাসী। আজকে এসব নিয়ে সমালোচনাকারী বা সমর্থনকারী বা চুপ থাকা অনেকের জীবনে উঁকি দিলে আপনি একই কর্মতৎপরতা দেখতে পাবেন।

তবে, দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের যৌথ সম্মতিতে যৌনমিলনের অধিকারকে কি আমি অস্বীকার করি? না, করি না। তবে সেটা ততোক্ষণই শোভন ও সুন্দর, যতোক্ষণ তাদের এই যৌনাচার কারো কোন ক্ষতি করবে না। বিশেষ করে, তাদের সন্তানদের। আর এইসব “যৌথ সম্মতি” তকমার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অ্যাবিউসের কূটকৌশলের কথা বাদই দিলাম। যদি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ হন, তবে ঝর্ণার ছেলের বক্তব্য শুনলে তার কিছুটা টের পেলেও পেতে পারেন।

বরং, বাবা-মা হওয়ার আগে সম্পর্কের প্রতি সৎ হতে শেখেন। পরিবারের প্রতি, সন্তানের প্রতি সৎ হতে শেখেন। না পারলে সম্পর্ক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসেন। তারপর যা ইচ্ছা, যতোজনের সাথে ইচ্ছা, “যৌথ সম্মতিতে” যৌনাচার করেন। কেউ আপনাদের কিছু বলবে না।

অযথা “তত্ত্বজ্ঞান” দেবেন না। একজন “বাবা-মা” হিসাবে ব্যক্তিগত প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা ছাড়াও আপনার আরো বড় প্রয়োরিটি আছে। সেসবে মন দেন।

“মানবিক বিয়ের” নামে এইসব অমানবিকতা বন্ধ হোক। “মানবাধিকারের” নামে এইসব ব্যাভিচার বন্ধ হোক। “প্রগতিশীলতার” নামে এইসব কূটতর্ক বন্ধ হোক। মা-বাবার লাগামহীন যৌনাকাঙ্ক্ষার কারণে কোন সন্তানের জীবন অপমানের না হোক।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]